প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩০
উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা!
গত ক'দিন ধরে সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে শাহরাস্তির ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন বলে মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠে খবর বেরিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী শাহরাস্তি গেট দোয়াভাঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। এ সময় অবৈধ দখলে থাকা ক'টি বহুতল ভবনের অংশ ভেঙ্গে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয়। বাজারের উত্তর পাশের বেশ ক'টি বহুতল ভবন অবৈধভাবে সড়কের জায়গা দখল করে নির্মিত হওয়ায় সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিলে ভবন মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। সময় পেয়েই ভবন মালিকরা সরকারি সম্পত্তি থেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেন। রাতদিন তারা নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে থাকেন। এর ফলে শাহরাস্তি গেট (দোয়াভাঙ্গা) এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ স্থানটিকে এখন চিনতে কষ্ট হয়। সম্মুখে থাকা দোকানগুলো ইতোমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। কোনো সাইনবোর্ড, ব্যানার নেই। বর্তমানে এক কাপ চা খাওয়ার মতো পরিস্থিতিও বিরাজ করছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে, অপরদিকে ভবন মালিকগণ চার-পাঁচতলা ভবনের সামনের অংশ দিনরাত লোক লাগিয়ে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছেন।
শাহরাস্তির এখনকার পরিবেশ দেখলে মনে হবে, সকলের মাঝেই আইন মানার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো প্রকার ঝুট ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের লোকজন ছাড়াও সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় লোকদেরকেও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা চৌধুরী। পালাক্রমে তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে টহল দিতে দেখা গেছে। উচ্ছেদ অভিযানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম।
শাহরাস্তিতে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান এটি। অনেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, বিগত সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাদের বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনকি তাদেরকে ভবন সরিয়ে নিতে বলা হয়নি। বর্তমান সময়ের মাপ অনুযায়ী তাদের ভবন সড়ক ও জনপথের জায়গায় নির্মিত হওয়ায় তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা জানান, এতোগুলো বহুতল ভবন নির্মিত হলেও কখনোই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আপত্তি করেনি। ভবন নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করলে হয়তো এতোগুলো ভবন ক্ষতির সম্মুখীন হতো না। সকলের চোখের সামনে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ অতীতে লক্ষ্য করা যায়নি। এ জন্যে স্থানীয় ভবন মালিকগণ তাদেরকে দায়ী করেন। অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি জায়গা উদ্ধারের অভিযানে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষকে হাত করে পুনরায় যাতে দখল করা না হয় সে বিষয়ে তারা জোর দাবি জানান। তারা আশঙ্কা করে বলেন, অতীতে বহুবার উচ্ছেদ করা হয়েছে, তার কিছুদিন পরেই আবারো দখলের প্রতিযোগিতায় নামে কিছু অসাধু ব্যক্তি। সড়কের সম্পত্তি রক্ষা না করে বারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলে সাধারণ ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই অতীতের ন্যায় আবারো যাতে উদ্ধারকৃত সম্পত্তি বেহাত না হয় সে বিষয়ে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। এদিকে চোখের সামনেই লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
শাহরাস্তিতে সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ব্যবসায়ীদের নিজ উদ্যোগে বহুতল ভবনের মতো স্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে ফেলাকে উত্তম সহযোগিতা হিসেবে আমরা আখ্যায়িত করতে চাই। সাধারণত উচ্ছেদ নোটিস প্রাপ্তির পর দখলদাররা সেটা মানতে চায় না। সেজন্যে ভেকু-বুলডোজারের প্রয়োজন হয় এবং নির্মমভাবে সেটা ব্যবহার করতে হয়। শাহরাস্তির মতো অন্যত্র যদি অবৈধ দখলদাররা আইন মানার মানসিকতা প্রদর্শন করতো, তাহলে উচ্ছেদ অভিযানের সফলতা শতভাগে পর্যবসিত হতো। বাস্তবে আমরা কী দেখি?--একদিকে উচ্ছেদ অন্যদিকে দখল। আভিযানিক দল উচ্ছেদ করতে করতে সামনে অগ্রসর হতে থাকে, আর পেছনে চলতে থাকে পুনর্দখল। রেল অঙ্গনে উচ্ছেদের নামে প্রহসন ও পুনর্দখলের চিত্র প্রকটভাবে দেখা যায়। সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ অভিযানে সঠিকতা দেখা গেলেও পুনর্দখলের চিত্র কিন্তু কম-বেশি দেখা যায়। এটা রোধ করতে উচ্ছেদ অভিযানের অগ্রবর্তী টিমের পেছনে আরেকটি টিমকে সক্রিয় রাখতে হবে। এ বিষয়টি সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কেবল নয়, অন্য যে কোনো উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও করতে হবে। মোদ্দা কথা, উচ্ছেদ অভিযানের সুফলকে টেকসই করতে হলে ফলোআপ করতে হবে। এজন্যে ডেডিকেটেড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো কর্তৃপক্ষ অজুহাতের জোরালো ভিত্তি গড়তে না পারে।