প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২০
তখন এসব পুল ব্রীজ হলো না কেন?
চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল 'লক্কড় ঝক্কড় কাঠেরপুলে ভোগান্তিতে গ্রামবাসী' শিরোনামের সংবাদটি পড়ে পাঠক কতোটা কী ভেবেছে জানি না, তবে ওয়াকিবহাল মহল বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। কেননা সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব বাঁশের সাঁকো ও কাঠের পুল ব্রীজ হবার পর আর নাকি সাঁকো ও পুলের জায়গা খুঁজে না পাওয়ায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা লালমাই পাহাড় সহ বিভিন্ন পাহাড়ে, খালবিহীন বিভিন্ন বাড়ির সামনে ও পেছনে এবং মাঠে অ্যাপ্রোচ সড়কবিহীন ব্রীজ তৈরি করে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বিল তুলে নিয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ে হাজীগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী মো. শাহ কামাল যখন সচিবের দায়িত্বে ছিলেন, তখন তো তার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে ব্রীজ না করেই সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতারা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সহ অন্য সকলকে ম্যানেজ করে ভুয়া ভাউচারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বিল তুলে নির্বিঘ্নে খেয়ে ফেলে। এমনটি চাঁদপুর সদর এবং দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মায়া চৌধুরীর এলাকা মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাসহ দেশের অনেক উপজেলাতেই হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে ফরিদগঞ্জ উপজেলাতে যে এমনটি হয়নি সেটি হলফ করে কি বলার সুযোগ কারো আছে? কথা ওঠা স্বাভাবিক, মায়া চৌধুরী-শাহ কামালদের আমলে এই কাঠের পুলসহ অন্যান্য পুল/ সাঁকো ব্রীজ হলো না কেন?কেউ কি তদবির করেনি?-না এই পুলের নামে ব্রীজ করার নামে উপরোল্লিখিত পন্থায় কেউ টাকা খেয়ে ফেলেছে? সে যা-ই হোক, চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল ওই কাঠের পুলটির ব্রীজ না হবার সংবাদটি পরিবেশনের উপযুক্ততা তৈরির আলোকে প্রথম পৃষ্ঠায় দর্শনীয়ভাবে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পেয়েছে বলে আমরা মনে করি।
|আরো খবর
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, নিজেদের উদ্যোগে প্রথমে বাশের সাঁকো করা হয়। পরে যখন দেখা গেলো মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে, তখন গুরুত্ব বিবেচনায় কাঠের পুল নির্মাণ করে গ্রামবাসী। কিন্তু সেই কাঠের পুল দিয়ে দীর্ঘদিন চলাচল করলেও বর্তমানে সেটি লক্কড় ঝক্কড় অবস্থায় রয়েছে। স্কুল ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই এই পুল দিয়ে পারাপার হচ্ছে। দুবছর পূর্বে কাঠের পুলের স্থানে পাকা সেতু নির্মাণের আবেদন করা হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অথচ ওই কাঠেরপুল অন্তত ৪/৫টি গ্রামের লোকজনের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের পুলটি হলো ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব ভাওয়াল গ্রামের সেচ খালের ওপর এই কাঠের পুলটির খুবই দুরবস্থা। এটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ক'মাস আগে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সে সময়ে পুলটির দুই পাশ ভেঙ্গে পড়ে। এরপর থেকে রিক্সা, ভ্যানগাড়ি ও মোটরবাইক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই কাঠের পুল ব্যবহার করে পূর্ব ভাওয়াল, পশ্চিম ভাওয়াল, কাঁশারা গ্রামসহ আশপাশের বাসিন্দারা। ওই গ্রামগুলো থেকে সহজেই শিক্ষার্থীরা স্কুল ও মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতে পারে এই পুল দিয়ে। পূর্ব ভাওয়াল গ্রামের তালুকদার বাড়ির সৈয়দ আহমদ তালুকদার বলেন, গত ৫ বছর আগেও এটি বাঁশের সাকো ছিলো। এরপর স্থানীয়দের উদ্যোগে এখানে কাঠেরপুল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত ক'মাস আগে অতি বৃষ্টিতে এটির দুপাশ ভেঙ্গে পড়ে। এখন চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। একই গ্রামের বাসিন্দা দুলাল বলেন, কাঠের পুল দিয়ে চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। কয়েকবার যানবাহন পানিতে পড়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এখানে মসজিদ ও ঈদগাহ আছে। পাঁচ গ্রামের মানুষ এখান দিয়ে মসজিদ ও ঈদগাহে যাতায়াত করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বহুবার জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এখানে একটি ব্রীজ কিংবা কালভার্ট নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রায়হানুল কবির শামীম বলেন, গত প্রায় দুবছর পূর্বে এই কাঠের পুলটির স্থলে ব্রীজ করে দেয়ার জন্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। এ বছরের শুরুতে একবার পিআইওসহ অন্যান্য লোকজন সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি। প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, ব্রীজটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এটি করার সুযোগ নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ব্রীজ করা সম্ভব। তাই আমি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দৃষ্টি কামনা করছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিল্টন দস্তিদার বলেন, স্থানীয়দের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্রীজ নির্মাণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকাবাসীর দাবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার এমন আশাবাদে নিশ্চয়ই ফরিদগঞ্জের ভোগান্তি কবলিত ক'টি গ্রামের বাসিন্দারা কাঠের পুলের স্থলে ব্রীজ হবার সম্ভাবনায় খুশি হবেন। তবে টেন্ডার হলে ভালো ঠিকাদার যদি কার্যাদেশ পান এবং তিনি যদি নির্দিষ্ট সময়ে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করেন, তবেই ওইসব গ্রামবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারবেন। আর অতিলোভী ও দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার যদি দুর্ভাগ্যক্রমে পড়ে, তাহলে চাঁদপুর কণ্ঠ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্ভাব্য ব্রীজটি নিয়ে আবার সংবাদ পরিবেশন করতে হতে পারে। আমরা ঘুণাক্ষরেও এমনটি প্রত্যাশা করি না। আমাদের বিশ্বাস, ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তাগিদ, পূর্ব সতর্কতা ও তৎপরতা এবং আন্তরিক তদারকিতে কাঠের পুলের স্থলে একটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে।