প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২৬
ঝুঁকিপূর্ণ পেশা এবং করুণ মৃত্যু
মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে কিংবা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু সব পেশাই ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ নয়। কিছু পেশা ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বস্তিকর হলেও অনেক মানুষকে তাতে সংশ্লিষ্ট থাকতেই হয়। এমন পেশায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। নির্মাণ শ্রমিক, বিদ্যুৎ কর্মী ও গাছে উঠে কাজ করা শ্রমিকরা ছোট-বড়ো দুর্ঘটনা এড়াতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। প্রায়শই এদের দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে করুণ মৃত্যুবরণ কিংবা গুরুতর আহত/পঙ্গু হবার ঘটনাকে গণমাধ্যমে খবর হিসেবে দেখতে পাই। এমন একটি খবর গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে, যা পড়ে অনেকের মাঝে সংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে।
'হাজীগঞ্জে তাল গাছ থেকে পড়ে আহত যুবকের মৃত্যু' শিরোনামের খবরটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, অন্যের কাজ করতে গিয়ে তাল গাছ থেকে পড়ে মো. মেহেদী হাসান (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) তিনি মারাত্মক আহত হন। মেহেদী হাছান হাজীগঞ্জের দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের হারিছ মহল তালুকদার বাড়ির মহসিনের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে অন্যের কাজ করতে তাল গাছে উঠেন। সেখানে ডাল কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পা পিছলে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তাল গাছের নিচে নির্মাণাধীন টয়লেটের রডে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, নিহতের পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়া দাফনের জন্যে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা তাল গাছ থেকে পড়ে করুণভাবে মৃত্যুবরণকারী হাজীগঞ্জের যুবক মেহেদী হাসানের জন্যে অনেক কষ্ট অনুভব করছি। ২৭ বছর বয়সের তরতাজা যুবক তাল গাছে উঠে কাজ করতে গিয়ে যেভাবে প্রাণ হারালো, তার মতো আরো অনেকেই গাছে উঠে কাজ করতে গিয়ে এভাবে প্রাণ হারায়। কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও প্রাণ হারায়। আর কতো বিদ্যুৎ শ্রমিক বা বিদ্যুৎ কর্মী যে প্রাণ হারায়, সেটার হিসাব মিলানো কঠিন। নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যু তো নানাভাবে হয়। কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কেউ ওপর থেকে পড়ে গিয়ে, কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্যভাবে মৃত্যুবরণ করে। এই মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক নয়, প্রতিটি মৃত্যুই মর্মান্তিক। এই মৃত্যুগুলোতে তাদের পরিবার যতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটা নিতান্তই সান্ত্বনা দিয়ে প্রশমন করা যায় না। আমরা মনে করি, ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারের পাশে সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা সমাজহিতৈষীদের পক্ষ থেকে সংবেদনশীলতা ও মানবিকতার তাগিদ থেকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার। এজন্যে সরকারি/ বেসরকারি উদ্যোগে কোনো ফাউন্ডেশন করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবা দরকার।