প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫
গ্রামের মানুষদের আরো সাবধান হওয়া উচিত
প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক মানুষ এখনও আগের মতো সরলই রয়ে গেছে। এদের কাছে কোনো কিছু বিশ্বাসযোগ্য করতে পারলেই হলো, হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে ঘোরার মতো কারো পেছনে ঘুরে ওরা নদীতে ঝাঁপ দিতেও তথা নিজের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না। গ্রামের মানুষের সারল্য ও উদারতা নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে লিখেছেন ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি তাঁর একটি সংবাদে লিখেছেন 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের নাম দিয়ে ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রথমে সদস্য সংগ্রহ করা হয়। পরে আবার ঢাকার শাহবাগে সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্যে ওই সদস্যদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। পুরো বিষয়টি প্রতারণা বুঝতে পেরে দুই প্রতারককে আটক করে স্থানীয় জনতা। যদিও পরবর্তীতে পুলিশ ও ইউপি সদস্যের মধ্যস্থতায় মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পায় নারগিস বেগম ও মাহমুদ খান দিপু নামে আটককৃত দুই প্রতারক। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস ধরে হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে নারগিস আক্তার নামে একজন মহিলা ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের নাম করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর, কড়ৈতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় সদস্য সংগ্রহ ও জনপ্রতি ৩০ টাকা করে সদস্য সংগ্রহ করে । শনিবার (৯ নভেম্বর) নারগিস আক্তার ছাড়াও মাহমুদ খান দিপু নামে একজন যুবক মিটিং করার জন্যে সাহাপুর গ্রামে আসে। কথিত সংগঠন আগামী ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্যে সদস্যদের জনপ্রতি ৮ শতাধিক টাকা আদায় করার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় কিছু লোকের বিষয়টিতে সন্দেহ হলে তারা তাদের চ্যালেঞ্জ করে এবং সংগঠনের কাগজপত্র দেখাতে বলে। এ সময়ে তাদেরকে সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে একটি দোকানে আটকে রাখে স্থানীয় জনতা। পরে জনতার কাছে তারা জানায়, তাদের সংগঠনের উদ্যোগে ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগে জাতীয় সংস্থা’ শিরোনামে দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবিতে আগামী ২৫ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করবে। তাদের সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের যোগাযোগ রয়েছে। লুণ্ঠিত ও পাচারকৃত অর্থ সরকার ফিরিয়ে এনে তাদের সংগঠনের মাধ্যমে ভর্তিকৃত সদস্যদের ১ লক্ষ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিবে তারা। এ সময় তাদের কাছে কিছু সদস্য সংগ্রহ ফরম ও লিফলেট পাওয়া যায়।
|আরো খবর
স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুছ, অপু শেখ, ফরিদা বেগম, মারজান বেগম, খুরশিদা বেগমসহ কয়েকজন জানান, ঋণ দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে সদস্য ফরম বাবদ ৩০ টাকা এবং ঢাকা যাওয়ার জন্যে ৮শ' টাকা করে নিতে এসেছে। আজ আবার খাওয়া দাওয়ার জন্যে প্রতি সদস্য থেকে ২০ টাকা করে নিয়েছে। আমরা এর আগে এ রকম প্রতারণার শিকার হয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য এমরান হোসেন জানান, এনজিও বা সমাজসেবা কর্তৃক কোনো সমিতির কোনো নিবন্ধন নেই। তারা একটি সংগঠনের নাম দিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংবাদ পেয়ে আমি এসে পুলিশকে সংবাদ দেই। পরে তাদের উপস্থিতিতে মুচলেকা আদায় এবং সদস্য বাবদ নেয়া তিন হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই খোকন দাস জানান, সংবাদ পেয়ে সাহাপুর গ্রামে স্থানীয় জনতা কর্তৃক আটক করা দুজনের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলায়। প্রতারণার শিকার কেউ মামলা করতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে নয়, একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে প্রতারকরা যা করেছে, তাতে প্রলুব্ধ হয়েছে কিছু সরল মানুষ, যারা নিশ্চয়ই এনজিও'র কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে হয়রান হওয়ার অভিজ্ঞতায় সহজে ঋণ পাবার লোভে আচ্ছন্ন হয়েছে। লুণ্ঠিত বা অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পারলে সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হবে--এটাই সাধারণ ও সংগত বিষয়। কোনো সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন করিয়ে লুণ্ঠিত ও ফেরতকৃত অর্থ তার সদস্যদের প্রত্যেককে লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে--এমনটি কেউ বললে সেটা গালগল্প ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। মাল্টিপারপাসের নামে দেশের সমবায় বিভাগের আস্কারায় বিগত দিনে গ্রামে যেসব অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম হয়েছে, বর্তমানে ফ্রি স্টাইলে কিছু এনজিও যা করছে, তাতে কিন্তু সর্বস্বান্ত হয়েছে অনেকেই। এরপরও শিক্ষা গ্রহণ করছে না গ্রামের অনেক সহজ সরল মানুষ। তারা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে চলছে প্রতারককেও, যেমনটি করেছে ফরিদগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। আমরা মনে করি, গ্রামের মানুষদের সারল্য ত্যাগ করে নিজেদের ব্যাপারে আরো সাবধান হওয়া উচিত।