প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০
বাগাদীতে ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন রোধ করা হোক
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনে সম্প্রতি ২০টি বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম শেষে নদীর পানি কমে যাওয়ায় এখন নতুন করে ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে ভাঙ্গনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে এলাকার বহু নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে।
|আরো খবর
স্থানীয়রা জানান, বিগত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনে বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জমাদার বাড়ি, খান বাড়ি ও গাজী বাড়িসহ প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য বিলকিস ও তাসলিমা বেগম বলেন, গত এক সপ্তাহে আমাদের গ্রামের ২০ পরিবারের বসতঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে মসজিদ, মাদরাসা, বসতবাড়ি, কবরস্থান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সহস্রাধিক পরিবার ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে। একই এলাকার সৈয়দ খান ও জাকির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন সমস্যার কথা জানিয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ভাঙ্গন তীব্র হলে সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণে এগিয়ে আসেননি। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, আমরা ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শনে গিয়েছি। নদীর তীরে ভাঙ্গন এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে ভাঙ্গনরোধে কাজ করা হবে।
স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলেই স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগাদী ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে বসে থাকলে হবে না, জরুরি ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে জরুরি বরাদ্দ এনে বাগাদীতে ভাঙ্গন রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু বর্তমানে এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান নেই, সেহেতু জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি বরাদ্দ আনার ব্যাপারে আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হবে।
প্রাসঙ্গিক বলেই উল্লেখ করা দরকার যে, ডাকাতিয়া একটি খরস্রোতা নদী, তবে আগের মতো নয়। ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন- তাণ্ডবে দু যুগ আগে চাঁদপুর বড়ো স্টেশনের শতবর্ষী অবকাঠামো যেভাবে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, তেমন ভাঙ্গন-উন্মত্ততায় ডাকাতিয়া এখন আর নেই। মেঘনার সাথে ডাকাতিয়া নদী স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়েই দুযুগ আগে বড়ো স্টেশন এলাকায় ভাঙ্গন-তাণ্ডব চালাতে বাধ্য হয়েছে বলে নদী বিশেষজ্ঞরা নির্ণয় করেছেন এবং দুপাশে শহর রক্ষা বাঁধকে মজবুত করার পাশাপাশি নদী খননে ড্রেজিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। সে পরামর্শ গ্রহণ ও কার্যকর করায় চাঁদপুর বড়ো স্টেশন এলাকায় ডাকাতিয়া এখন খরবেগে প্রবাহিত হলেও ভাঙ্গনে উন্মত্ত নয়। ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন-উন্মত্ততা এখন চাঁদপুর শহরতলীর রঘুনাথপুর, গুণরাজদী ও বাগাদী এলাকায় কম-বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা ডুবোচরসহ অন্য কোনো কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবার কারণে হচ্ছে কিনা এবং নদী খননের মাধ্যমে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সেটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের ভাবতে হবে। কেবল তীর সংরক্ষণ ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অপেক্ষার প্রহর গুণলে হবে না, নদী খননসহ আনুষঙ্গিক আরো কী করা যায় সে ব্যাপারেও সক্রিয়তার প্রমাণ রাখতে হবে বলে আমরা মনে করি।