প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮
স্মরণকালে এই প্রথম
চাঁদপুর কণ্ঠ নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনার ৩১ বছরে আছে। তিন দশকের বেশি সময়ের পথচলায় চাঁদপুর কণ্ঠের ফাইল ঘেঁটে যানজট নিরসনে একক বহু উদ্যোগের সংবাদ, জেলার আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন কমিটির সভায় এজেন্ডাবিহীন আলোচনায়, সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মতবিনিময় সভার আলোচনায়, পৌরসভার বাজেট মিটিং ও টিএলসিসি সভার আলোচনায় কিংবা অন্য কোনো সভার আলোচনায় বিক্ষিপ্তভাবে চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সংবাদ বারবার লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে তিন কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত কোনো সভার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে খুঁজে পাওয়া গেলো তেমন একটি সংবাদ। এই সংবাদ পড়ে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে, যেখানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভার প্রধান কর্তাব্যক্তিগণসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
|আরো খবর
এ সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, নতুন করে পৌরসভা থেকে অটোবাইকের লাইসেন্স দেয়া হবে না। তবে মানুষেরও কর্ম দরকার। অটোবাইক আমরা বন্ধ করতে চাই না, কিন্তু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। জেলা প্রশাসক বলেন, জেলাবাসীর স্বার্থে কাজ করতে এসেছি। তার মধ্যে প্রধান কাজ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। যানজট এখন এই শহরের সবার জন্যে একটা বড়ো ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই এই যানজট থেকে পরিত্রাণ চায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অটোরিকশার লাইসেন্স নতুন করে দেয়া যাবে না। যাদের আগে থেকেই লাইসেন্স ছিলো, তাদের হয়তো নবায়ন করার জন্যে দেয়া যেতে পারে। ইজিবাইক প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, অটোবাইক বা ইজিবাইকের দুটি কালার করতে চাই। আজকে যে কালার চলবে কালকে সেই কালার চলবে না। বৈধভাবে লিস্ট করে কালার করে দিতে হবে। ইজিবাইক যদি অর্ধেক হয়ে যায়, তাহলে শহরের যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে অটোবাইক বা ইজিবাইকগুলো এনলিস্ট করতে হলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে। কোনো অটোবাইক বা ইজিবাইকের চালকের ডানপাশে কেউ বসতে পারবে না। ফুটপাতের দখল নিয়ে তিনি বলেন, যানজটমুক্ত করতে হলে ফুটপাতগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। প্রতিটি দোকানি তার দোকানের সামনে কিছু জিনিসপত্র রেখে ফুটপাত দখল করে নিচ্ছে। সেসব স্থানও মুক্ত করতে হবে। চাঁদপুর শহরে বড়ো গাড়ি চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জরুরি পণ্যসেবা ছাড়া শহরে লরি, ট্রাক, তেলবাহী গাড়িগুলো রাত ৯টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। দিনের বেলা শহরে এ সমস্ত ট্রাক, লরি ও কার্গো ভ্যান চলবে না। বাস ও মাইক্রোবাস চলাচল প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, আইদি বা বোগদাদ পরিবহনের বাস বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার পর নির্দিষ্ট টিকিট কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠানো যাবে না। মাইক্রোবাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না।
সভায় পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা চাঁদপুরবাসীর সেবা করার জন্যেই এসেছি। শহরে কালার দিয়ে অটো চলতে হবে। অটোবাইকগুলো ২ কালার করা উচিত। আমরা আইন প্রয়োগ করছি, কিন্তু বেশি গাড়ি থাকার কারণে তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। সম্মিলিতভাবে আমরা শহরকে যানজটমুক্ত করবো।
চাঁদপুর শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্যে গত ৪ নভেম্বরের সভাটি স্মরণকালে অনুষ্ঠিত এমন একটি সভা, যে সভায় এই প্রথম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। অতীতে পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রদেরকে শহরের যানজট নিরসনে আন্তরিক দেখা গেলেও প্রভাবশালী ও উপরি মহলের ফোনের যন্ত্রণা ও তদবিরে এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অসহযোগিতায় বারবার থমকে যেতে দেখা গেছে। যে ব্যাপারে মেয়রদের খেদোক্তি ও চাপাকষ্ট প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। গত ৪ নভেম্বরের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে বস্তুত মেয়র-কাউন্সিলরশূন্যপৌরসভাকে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে, আর ফোন-তদবিরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না, যেহেতু প্রধান ভূমিকায় থাকবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। স্মরণকালে এটি হবে চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে সম্মিলিত এমন পদক্ষেপ, যেটি ইতিপূর্বে আর দৃশ্যমান হয়নি। আমরা এমন পদক্ষেপের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।