প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৩
শাহরাস্তির মানববন্ধনের সাফল্য টেকসই হোক
সম্পাদকীয়
|আরো খবর
শাহরাস্তিতে ২৮টি মাদক মামলার আসামি খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী রাবেয়া আক্তার রুম্পার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধন চলাকালে খোরশেদ নিজেই হাজির হয়ে তার অপরাধ স্বীকার করে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাইলেন। প্রকাশ্যে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে খোরশেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ২৩টি ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। কিছু হলেই পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি এ পথ থেকে ফিরে আসতে চাই। আপনারা যদি আমাকে সহযোগিতা করেন, আমি আর মাদক বিক্রি করবো না। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় শাহরাস্তি পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বটতলা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী খোরশেদ ও তার স্ত্রী রুম্পার হাত থেকে সমাজকে রক্ষায় মানববন্ধনের আয়োজন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ উপস্থিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, এলাকার মাছুম বাচ্চারা মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে পুলিশ আটক করলেও ক'দিন পর ছাড়া পেয়ে আবারো মাদক ব্যবসা শুরু করে। তারা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হলে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুমন মীর বলেন, আমরা মাদকমুক্ত সমাজ চাই। আমাদের এলাকায় কোনো মাদক ব্যবসায়ী থাকতে পারবে না। আরিফ হোসেন বলেন, খোরশেদ দম্পতির কারণে আমাদের এলাকার বদনাম হচ্ছে। সবাই বাবা (ইয়াবা) খোরশেদের নামে আমাদের এলাকার পরিচয় দিয়ে থাকে। আমরা বর্তমানে আতংকে রয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। জহিরুল ইসলাম বলেন, মেহের কলেজের শিক্ষার্থীরা মাদক ব্যবসায়ী দম্পতির কাছে এসে মাদক নিয়ে যায়। আমাদের বিপথগামী তরুণ-যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে।
মানববন্ধন শেষে মাদক ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী রাবেয়া আক্তার রুম্পা এলাকাবাসীর নিকট মুচলেকা দেন। আমরা এমন মুচলেকা দেয়াটাকে মানববন্ধনের প্রাথমিক সাফল্য মনে করছি। এই সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে কী করণীয় হতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। অপরাধ স্বীকার করা এই দম্পতিকে সংশোধিত হবার ব্যাপারে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা নিয়ে মানববন্ধনের উদ্যোক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের কিছু দায়িত্ব পালন করতেই হবে। সেটা করতে না পারলে প্রত্যাশিত ফলাফল আসবে না। আর এই ফলাফল না আসলে মানববন্ধনের প্রয়াস বিফলতায় পর্যবসিত হবে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে, চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তাঁর কর্মকালে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি আত্মসমর্পণ ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছিলেন। তবে এই ফলাফলকে টেকসই করতে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের অন্য পেশায় পুনর্বাসনের উদ্যোগও নিয়েছিলেন। সেমতে শাহরাস্তির খোরশেদ দম্পতি যদি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়, তাহলে অন্য কী পেশায় তাদেরকে পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে মানববন্ধনের উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে সম্মিলিতভাবে ভাববার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করছি।