শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

রমাদানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও মু’মিনের করণীয়

নূর মোহাম্মদ

রমাদানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও মু’মিনের করণীয়
অনলাইন ডেস্ক

রমাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শেষ দশ রাত। এ মাসের প্রথম দশ দিনে আল্লাহর রহমতে বান্দা নিজেকে সিক্ত করে নেয়, দ্বিতীয় দশ দিনে ক্ষমা লাভের মাধ্যমে নিজেকে পাপ মুক্ত করে নেয়, আর শেষ দশ দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুযোগ লাভ করে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশকের উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত¦ারোপ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের প্রথম ২০ রাতে কিয়ামুল্লাইল করার আগে বা পরে কিছু সময় ঘুমাতেন। কিন্তু রমাদানের শেষ দশ রাতে তিনি প্রায় সারারাত জাগ্রত থেকে কিয়ামুল্লাইল ও অন্যান্য ইবাদতে রত থাকতেন। এমনকি শেষ দশ রাতে তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনকেও জাগিয়ে দিতেন। মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, ‘যখন রমাদানের শেষ দশ রাত এসে যেত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি জাগরিত থাকতেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে জাগিয়ে দিতেন, তিনি অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে ইবাদত-বন্দেগীতে রত থাকতেন এবং সাংসারিক, পারিবারিক বা দাম্পত্য কাজকর্ম বন্ধ করে দিতেন।’ (সহীহ বুখারী ২/৭১১)

মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা-এর সূত্রে ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.) আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যখন রমদানের শেষ দশ দিন আসত, তখন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধেয় বস্ত্রকে শক্ত করে বাঁধতেন, রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারী ও মুসলিম) কারণ রমাদানের শেষ দশকেই রয়েছে উম্মতে মুহাম্মদীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেয়া সবচেয়ে বড় নেয়ামত, মহিমান্বিত কদরের রাত। যা হাজার মাসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, এ রাত্রে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে জাগ্রত থাকলে আল্লাহ তা’আলা পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও ইহতিকাবসহ লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে জাগ্রত থাকে আল্লাহ তা’আলা তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী ২/৬৭২)

তেমনিভাবে যে কদরের রাতের ফযিলত থেকে বঞ্চিত হবে, সে প্রকৃতই হতভাগা বলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের নিকট রমাদান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের উপর আল্লাহ তা’আলা অত্র মাসের সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেলো সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেলো। (নাসাঈ)

হযরত কা’ব ইবনে উযরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবাইকে মিম্বরের কাছে গিয়ে বসতে বললেন। আমরা গিয়ে বসলাম। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠার সময় বললেন ‘আমিন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠার সময় বললেন ‘আমিন’। অতপর তৃতীয় সিঁড়িতে উঠার সময় বললেন ‘আমিন’। এবার রাসূল (সাঃ) মিম্বর হতে নামার পরে আমরা বললাম, আজকে আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনলাম যা আগে কখনও শুনিনি। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, জিবরাইল (আঃ) আমার কাছে আসার পর বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক- যে রমজান পাওয়ার পরও তার গুনাহ মাফ হয়নি। তখন আমি বললাম ‘আমিন’। আমি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠার পর তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে আপনার কথা আলোচনা হওয়ার পরও সে দরুদ পড়ে না, তখন আমি বললাম ‘আমিন’। আমি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠার পর তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে তার পিতা-মাতাকে বা একজনকে পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না, আমি বললাম ‘আমিন’ (আল মুজামুল কাবির-৩১৫)।

হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শাবানের শেষ দিন আমাদেরকে একটি ভাষণে বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের কাছে একটি মহান ও বরকতময় মাস আগমন করেছে। এই মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ ফরজ করেছেন আর রাতে নামাজ পড়াকে করেছেন নফল। কেউ এ মাসে একটি নফল আদায় করলে অন্য সময়ের ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে। আর একটি ফরজ আদায় করলে অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান হবে। এ মাস ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা সমবেদনার মাস। এ মাসে মু’মিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে এ কারণে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাবে। এমন রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব তাকে দেওয়া হবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের সবাইতো রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ রাখে না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, কেউ এক ঢোক দুধ, একটি খেজুর অথবা শুধু পানি দ্বারা ইফতার করালেও আল্লাহ তা’আলা তাকে এ পরিমাণ সওয়াব দিবেন। আর কেউ যদি রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ায় তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে হাউজে কাউসার হতে পান করাবেন। আর সে জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে পিপাসার্ত হবে না। এ মাসের প্রথমাংশ রহমত, দ্বিতীয়াংশ মাগফিরাত আর শেষাংশ জাহান্নাম হতে মুক্তির। যে ব্যক্তি এ মাসে তার কর্মচারীদের উপর দয়া করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দিবেন (সহিহ ইবনে খুজাইমা-১৮৮৭)।

নি¤েœ শেষ দশকে একজন মুমিনের করণীয় তুলে ধরা হলো-

১. লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান :

রমাদানের শেষ দশ রাতের মধ্যেই রয়েছে, ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা তাকদীর, মর্যাদা বা ভাগ্যের রাত। ইমাম বাইহাকীর মতে, লাইলাতুল কাদর এর অর্থ হলো, এ রাত্রিতে আল্লাহ তা’আলা পরবর্তী বছরে ফেরেশতাগণ মানুষের জন্য কি কি কর্ম করবেন তা নির্ধারণ করে দেন। (বাইহাকী, শুআবুল ইমান ৩/৩১৯)

আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদাপূর্ণ এ রাত দান করে অনুগ্রহ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন এক বরকতপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি; নিশ্বয়ই আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়। সকল কর্ম আমার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে; সকল কর্ম আমি প্রেরণকারী। (হে নবী) এটা আপনার রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহস্বরূপ। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। তিনি আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুর পালনকর্তা। তিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি জীবন মৃত্যু দান করেন। আর তিনি আমাদের ও তোমাদের পূর্ব পুরুষদের পালনকর্তা। (সূরা দোখান: ৩-৮)।

মহান আল্লাহ এ রাতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এতে অত্যধিক কল্যাণ, বরকত ও মর্যাদা রয়েছে। নিশ্চয়ই এ বরকতময় কুরআন উক্ত রাতেই নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এ কুরআন ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি। হে নবী! আপনি জানেন, লাইলাতুর ক্বদর কি? যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত। এ রাতে ফেরেশতা ও রূহ আল্লাহর অনুগ্রহে প্রত্যেক বিষয়ে শান্তির বাণী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। আর ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। (সূরা ক্বদর)

ইমাম বাইহাকী শুআবুল ইমানে হযরত আনাস (রাঃ) হতে একটি হাদীস উদ্বৃত করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যখন ক্বদরের রাত আসে তখন জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট বাহিনীসহ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা প্রত্যেক বান্দার জন্য রহমতের দোয়া করেন। এ হাদীস হতে ক্বদরের রাতের মর্যাদা এবং এ রাতের ইবাদত বন্দেগী, কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও ইসলামি আলোচনা ও জ্ঞান চর্চার মর্যাদা স্পষ্টভাবে জানা যায়। শেষ দশকের ইবাদতের অন্যতম কারণ হলো শবে ক্বদর তালাশ করা।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যদি কেউ লাইলাতু ক্বদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজানের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। (সহীহ মুসলিম: ৮২৩) এজন্য শেষ দশ রাত্রির সকল রাত্রিকেই লাইলাতুল ক্বদর তালাশে ইবাদত বন্দেগী করা দরকার। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ রাত্রিতেই লাইলাতুল ক্বদর সন্ধান করবে। যদি কেউ একান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে অন্তত শেষ রাতের ব্যাপারে যেন কোনভাবেই দুর্বলতা প্রকাশ না করে। (বুখারী: ৭১১)

কোন কোন হাদীসে রাসূল (সাঃ) বিজোড় রাত্রিগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়েছে। অতপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব, তোমরা শেষ দশ রাতের বিজোড় রাত্রিগুলোতে তা খোঁজ করবে। (বুখারী: ৭০৯)

রাসূল (সাঃ) লাইলাতুল ক্বদরের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ কয়েক বিজোড় রাত্রিতে সাহাবীদেরকে নিয়ে জামাআতে তারাবীহ বা কিয়ামুল্লাইল আদায় করেছেন। হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ২৩শে রমামাদন রাত্রিতে আমাদেরকে নিয়ে কিয়ামুল্লাইল করলেন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। এরপর বললেন, তোমরা যা খুঁজছো তা মনে হয় সামনে। এরপর ২৫শে রমাদান রাত্রিতে মধ্যরাত পর্যন্ত কিয়ামুল্লাইল করলেন। এরপর বললেন, তোমরা যা খুঁজছো তা বোধহয় সামনে। এরপর ২৭শে রমাদান রাত্রিতে তিনি নিজের স্ত্রীগণ, পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ সবাইকে ডেকে আমাদেরকে নিয়ে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত জামাআতে কিয়ামুল্লাাইল করলেন, এমনটি আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, সেহরি খাওয়ার সময় পাওয়া যাবে কিনা। (তিরমিযী: ৩/১৬৯)

এজন্য আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদরের উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগীতে রত থাকতে হবে। বিশেষ করে বিজোড় রাত্রিগুলোতে। আর সবচেয়ে বেশি ২৬ শে রমজান দিবাগত রাত্রিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

রাসূল (সাঃ) ক্বদরের জন্য একটি দো’আ শিখিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যদি আমি লাইলাতুল ক্বদর পাই তাহলে আমি কি বলবো? রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন কারীম তুহ্বিবুল আফওয়া ফাআফু আন্নি’ অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল মর্যাদাময়, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযী: ৫/৫৩৪)

এ দো’আটি মুখস্ত করে অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে শেষ দশ রাত্রের নামাজের সেজদায়, নামাজের পরে এবং সর্বাবস্থায় বেশি বেশি পাঠ করা দরকার। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

২. শেষ দশকে ইতিকাফ :

রমজানের শেষ দশকের অন্যতম ইবাদত হলো ইতিকাফ করা। ইতিকাফের অর্থ হলো- নিয়্যতের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে মসজিদে অবস্থান করা। শুধু অযু, ইসতিনজা, পানাহার ইত্যাদির একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া। মসজিদে অবস্থানকালে ঘুমানো, বসে থাকা বা কথাবার্তা বলা যায়। তবে ইতিকাফরত অবস্থায় যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে, সকল জাগতিক চিন্তা, কথা-বার্তা ও মেলামেশা বাদ দিয়ে সাধ্যমত আল্লাহর জিকির ও ইবাদত বন্দেগীতে রত থাকা।

না হলে নীরব থাকা। ইতিকাফ মূলত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তদুপরী লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত লাভের জন্যই এ সময়ে ইতিকাফের গুরুত্ব রয়েছে। রমজানের শেষ দশ দিন জুম’আ মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। এছাড়া নফল হিসেব ২/৩দিনও ইতিকাফ করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তিনি তার ওফাত পর্যন্ত এভাবে ইতিকাফ করেন। অতপর তার স্ত্রীগণও তার ইন্তিকালের পরে ইতিকাফ করেন। (বুখারী: ৭১৩)

আমাদের সকলের চেষ্টা করা দরকার রমজানের শেষ দশ দিন সুন্নত ইতিকাফ আদায় করা; যদি দশ দিন না পারি, তবে দুই একদিন হলেও ইতিকাফ করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যদি কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটানোর জন্য হাটে তবে তা তার জন্য দশ বছর ইতিকাফ করার চেয়েও উত্তম। আর যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইতিকাফ করবে আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন, প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (মুস্তাদরাক হাকিম: ৪/৩০০)

রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের সাওয়াব হচ্ছে দুইটি হজ্ব্ ও ওমরার সম পরিমাণ। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ওফাতের বছরে ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী)

তাই রমাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর লাভের ফযিলত উদ্দেশ্যে ইতিকাফে অবস্থান করা মু’মিনের কর্তব্য।

৩. সাদাকাতুল ফিতর আদায় :

রমজানের শেষ দশকের অন্যতম আমল সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার জন্য রাসূল (সাঃ) এটা ওয়াজিব করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন যেন তা ঈদণ্ডউল-ফিতর এর নামাজের পূর্বেই আদায় করা হয়। (বুখারী: ১৫০৩)

হযরত ইবনে আব্বাস (সাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) সাদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন যাতে করে এটা রোজাদারের রোজার বিচ্যুতি তথা অনর্থক কথা, কাজ ও অশালীণ আচরণের ক্ষতিপূরণ হয় এবং অসহায় মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৯)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) এর যুগে আমরা ঈদণ্ডউল-ফিতর এর দিনে খাদ্য দ্রব্যের এক সা’ অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ পনির অথবা এক সা’ কিছমিছ সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারী: ১৫০৫)

সদকাতুল ফিতর আদায়ে সামর্থ্যবানদের উচিত ফিতরার সর্বনিম্ন হারকে নিজেদের জন্য গ্রহণ না করে ফিতরার উচ্চ হারকে প্রতিষ্ঠিত করা যাতে করে সমাজের অসহায় মানুষেরা বেশি লাভবান হয়। ইমাম আযম আবু হানিফা (র.) এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। যা দ্বারা আদায় করলে গরীবদের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা।

চলতি বছরে বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্য দ্রব্য, পণ্য সামগ্রী বা মূল্যের টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোন বস্তু (যেমন: পোষাক-আশাক, ঈদের বাজার প্রভৃতি) কিনেও দেওয়া যায়। মাতা-পিতা ও উর্দ্ধতন এবং ছেলে-মেয়ে অধস্তন এবং যাদের ভরন-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে তাদের সকলের পক্ষ থেকে পরিবারের কর্তা ফিতরা আদায় করবেন (অবশ্য পরিবারের কেউ স্বচ্ছল হলে নিজের ফিতরা নিজেই দিতে পারবে)।

ঈদ উল ফিতরের দিন নামাজের পূর্বে আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে, নামাজের পরে আদায় করলে দান হিসেবে আদায় হবে। ঈদ উল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না, তবে ঈদের নামাজের পূর্বে জন্মগ্রহণ করলে তার পক্ষথেকে ফিতরা আদায় করতে হবে।

প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আসল কথা হলো রমাদান পাপ মোছনের মাস, ক্ষমা লাভের মাস, এ মাসে আল্লাহ ক্ষমার দুয়ার অবারিত করে দেন। রোজার বিনিময়ে বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। তারাবি আদায়ে মুছে দেন সব গুনাহ। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য মানুষকে জান্নাতি হিসেবে ঘোষণা করেন। আসুন! রমাদানকে আমরা গুরুত্ব দেই, আল কুরআনকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করি। আসুন! মহান আল্লাহর কাছে আমরা প্রার্থনা করি, ক্ষমা চাই মাহে রমাদানে যাদেরকে নাজাত প্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করবেন; তাদের সারিতে আমাদেরকেও যেনো কবুল করেন। আমিন! ইয়া রাব্বাল আলামীন।

লেখক : প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা), বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়