প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৫৬
দুদকের আবেদনে আদেশ আদালতের
সেলিম চেয়ারম্যানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দ
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।
দুদক জানায়, আদালতের এ আদেশের পর সেলিম খান তার নামে থাকা সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর বা রূপান্তর করতে পারবেন না। একই সঙ্গে আদালতের আদেশ জাতীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেলিম খানের নামে স্থাবর সম্পদগুলো হলো- চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলাধীন লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মৌজায় ১৯ দশমিক ৮৯ একর জমি, ঢাকার কাকরাইলে আজমিন নামীয় পাঁচতলা বাড়ি, কাকরাইলে ৭১৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ভূঁইগড় মৌজায় দশমিক ১ হাজার ২৫০ একর জমিতে ১০তলা বাড়ি। এ স্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ২৬ কোটি ৪২ লাখ ৩২ হাজার ২১ টাকা।
আর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ছয়টি ড্রেজার, ৩টি প্রাইভেটকার/জিপ একটি পিস্তল, একটি শটগান, আসবাবপত্র, ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, একটি মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ৯টি সিনেমা নির্মাণ ও আমদানিতে অর্থ বিনিয়োগ, ৫৮টি সিনেমা নির্মাণে অনুমতির নিবন্ধন ফি জমা ইত্যাদি।
সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রায় ৬৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে গত ১ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সেলিম খানকে ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট। পরবর্তীতে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খানের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট। তাকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ সেলিম খানকে ৬০ দিনের জন্য বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। পরে পুনরায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বর্ধিত করা হয়।
এছাড়া গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ এর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জুলাই মাসের প্রথমে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুদক এনফোর্সমেন্ট। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেলিম খান। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সেটা আর হয়নি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের 'বালুখেকো' চেয়ারম্যান সেলিম খানের অবৈধ সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির পক্ষে নিয়োজিত পিপি মাহমুদ জাহাঙ্গীর বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদনটি করেন। এই আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার ক্রোকের এ আদেশ দেয় আদালত।
দুদকের পক্ষে আবেদনে মামলায় বর্ণিত ৮৭ ধরনের সম্পদ ক্রোকের বিষয়ে আদেশ চাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সেলিম খানের ১০টি ব্যাংকের হিসাব, চাঁদপুরের নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত সাতটি ড্রেজার বাল্কহেড, তার জমি-বাড়ির দলিল ইত্যাদি।