প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৬
হাজীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত
পুলিশের গুলিতে নিহতের দাফন সম্পন্ন ৩ মামলায় আসামী ২ হাজার আটক ৭, ফুটেজ দেখে হামলাকারী শনাক্তের চেষ্টা
হাজীগঞ্জে পূজামন্ডপে হামলায় ৪ জন নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৩টি মামলায় ২ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন ইতিমধ্যে আটক রয়েছে।হামলার সময় বিভিন্ন জনের ধারন করা মোবাইল ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এদিকে শুক্রবার জুম্মার নামাজ পরবর্তী অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি উপজেলা জুড়ে টহল অব্যাহত রয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি থাকার কারনে এসব বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে বলে চাঁদপুর কন্ঠকে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ। জানা যায়, হাজীগঞ্জ গত বুধবার রাতে যে ৪ জন মারা গেছেন তাদের গত বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিহতদের লাশ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠায়। এর মধ্যে রান্ধুনীমুড়া গ্রামের নিজ নিজ বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন হয় শামীম ও হৃদয়কে।
|আরো খবর
একই গ্রামের অপর নিহত আল আমিনকে তার মামার বাড়ি উপজেলার হাটিলা এলাকায় দাফন করা হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। চাঁপাইনবাগঞ্জের নিহত বাবলুর লাশ তার দেশের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ৩ মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার জনকে। এদের মধ্যে আটক রয়েছে ৭ জন। ২ হাজার আসামীর মধ্যে নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামী রাখা হয়েছে। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার রাতে দুটি মিছিল একত্র হওয়া,বাজারের একাংশ প্রদক্ষিন শেষে পূজা মন্ডপে ও পুলিশকে হামলার সময়ের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।
এই সকল ফুটেজের চুলচেরা বিশ্লেষন করা হচ্ছে। এ দিকে শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর যাতে আইন শৃঙ্খলা অবনতি না হতে পারে সেজন্য পুলিশসহ অন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা ছিলেন বিশেষ সতর্ক অবস্থানে। এদিন অধিক মুসুল্লীর সমাগমে এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন নামাজের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন, পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতারাও মাঠে ছিলেন। তারা ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের সাথে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, উপজেলায় যাতে নতুন করে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ও পরামর্শক্রমে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বল্প সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ এবং সার্কেল অফিসারের (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশসহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ সব জায়গায় তৎপর রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কাজ করছেন। এছাড়াও প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। এক কথায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দিনের বেলা কুমিল্লা শহরের দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের দিক থেকে হাজীগঞ্জ বাজারে দিকে একটি মিছিল আসে। মিছিলটি হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ন জিউর আখড়ায় অবস্থিত পূজামন্ডপে সামনে আসলে মিছিল থেকে কে বা কারা পূজামন্ডপের গেইটের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ মিছিলকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে মিছিলকারীরা। এ সময় মিছিলকারীর পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ প্রথমে উপরে ও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এ সসয় ৪ জন নিহত অপর ৪ জন আহতসহ ১৭ পুলিশ আহত হয়।