রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪

কারবালা থেকে চাঁদপুর: আশুরার শাশ্বত বার্তা ও আজকের সংগ্রাম

চাঁদপুরের চোখে আশুরা: অন্যায়ের প্রতিবাদে আদর্শের অগ্নিমশাল

মো.জাকির হোসেন
চাঁদপুরের চোখে আশুরা: অন্যায়ের প্রতিবাদে আদর্শের অগ্নিমশাল
ছবি : প্রতীকী

❝তপ্ত বালুর প্রান্তরে রক্ত ঝরেছিল, কিন্তু মাথা নত হয়নি। এক শিশু পিতার বুকের উপর লুটিয়ে পড়েছিল, কিন্তু ন্যায়বোধ হারায়নি।❞ কারবালা কেবল ইতিহাস নয়—এটি একটি অনন্ত প্রতিজ্ঞা, একটি অমর বার্তা।

হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম। ইরাকের কারবালা প্রান্তরে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ইতিহাসের বুকে রক্তের অক্ষরে লেখা হয় এক অমর মহাকাব্য। ইমাম হোসেন (রাঃ), মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, ৭২ জন অনুসারী নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।

তিনি জানতেন, এ লড়াইয়ে তিনি শহীদ হবেন। কিন্তু সত্য রক্ষায় আত্মত্যাগই ছিল তাঁর আদর্শ। ইয়াজিদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এ ছিল এক মহাবিপ্লব।

কারবালার যুদ্ধ ছিল ক্ষমতার নয়, ছিল নৈতিকতার। হোসেন বলেছিলেন — ❝আমার মতো লোক কখনো ইয়াজিদের মতো স্বৈরাচারের বায়াত দিতে পারে না।❞

এই উচ্চারণ আজো ধ্বনিত হয় নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে, প্রতিটি গলিতে, প্রতিটি প্রতিবাদে।

চাঁদপুরের শহর ও গ্রামের প্রতিটি গলিতেও আশুরা উপলক্ষে জেগে ওঠে আবেগের স্রোত। মসজিদ-মাদরাসায় হয় দোয়া, কোরআনখানি, দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ।

শিশুদের হাতে থাকে পানি, যেন একটিবারের জন্য হলেও যেন আলী আসগরের তৃষ্ণা ভুলে যাওয়া যায়।

চাঁদপুরে আশুরা মানেই বিষাদের ধ্বনি। তবে শুধু কান্না নয়, এটি জেগে ওঠার দিন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আত্মত্যাগের বার্তা নিয়ে আশুরা ফিরে ফিরে আসে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আশুরার বার্তা যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। যখন বাকস্বাধীনতা সংকুচিত, ভোটাধিকার হরণ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ হয়—তখন হোসেনের প্রতিবাদ শিক্ষা দেয়, মাথা নত নয়, রক্ত দিয়ে হলেও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আশুরা আমাদের শেখায়— সংখ্যা নয়, আদর্শই চূড়ান্ত। রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপ নয়, বিবেকই শ্রেষ্ঠ শক্তি।

চাঁদপুরের বিভিন্ন মাদরাসা ও স্কুলে আশুরা উপলক্ষে আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখন সময় এসেছে হোসেনের আদর্শ শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করার

একজন শিশুও যদি জানে, সত্যের জন্য একা লড়াই করাও গৌরবের—তাহলে হোসেনের আত্মত্যাগ বিফলে যায় না।

কারবালার নারীদের কষ্ট আমাদের শেখায় নারীর মর্যাদা রক্ষা করতে হলে তাকেও প্রতিবাদের পাশে রাখতে হবে।

ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর স্ত্রী ও শিশুদের বন্দিত্ব আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। আজও নারীরা যখন নির্যাতিত হন, আশুরা তাঁদের জন্য এক প্রেরণা।

আশুরার শিক্ষা:

  • প্রতিরোধের সাহস অর্জন
  • ত্যাগ ও নৈতিকতার চর্চা
  • অন্যায়ের কাছে মাথা না নত করার শপথ
  • নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় সচেতনতা
  • পরিবারে হোসেনি চেতনার আলো জ্বালানো

এই আশুরায় চাঁদপুর হোক হোসেনি চেতনায় উদ্দীপ্ত। মাদরাসা, মসজিদ, পরিবার, রাজনীতি—সবখানে হোক সত্যের জয়গান।

আসুন, হোসেনের আদর্শে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। অন্যায়, দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠি।

কারবালা আমাদের শেখায়, মৃত্যুই সব নয়—আদর্শই চিরজীবী। হোসেন বেঁচে থাকুক চাঁদপুরের প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি বিবেকে।

❝হোসেন মরে নাই। হোসেন বেঁচে আছেন প্রতিটি সত্যপ্রেমী হৃদয়ে।❞

লেখক :মো. জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জেলা বিএনপি, চাঁদপুর।

✍️ ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়