প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
সন্তানরা থ্যালাসেমিয়া আর নিজে কিডনি রোগে আক্রান্ত
শিক্ষক শাহপরানের টাকা নেই, নিজের অপারেশন নেই, ২ সন্তানের চিকিৎসা নেই!
হাজীগঞ্জ শহরের একটি স্বনামধন্য কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক শাহপরান। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ভালো চাকুরির পেছনে ঘুরতে গিয়ে মনের অজান্তে শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বাঁধেন সংসার। বিয়ের প্রথম বছর পার হতেই কন্যাসন্তানের বাবা হন। কিন্তু বিধিবাম। মেয়ের বয়স প্রায় দেড় বছর পার না হতেই জানতে পারেন থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত। কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতার বেতন দিয়ে মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে বেশ বড় একটা সময় পার করেন শাহপরাণ দম্পতি। এরই মধ্যে এ দম্পতির কোলজুড়ে জন্ম নেয় ছেলে সন্তান। মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে আর ছেলেকে নিয়ে দিনকাল কিছুটা ভালোই চলছিলো। এখানেও বিধিবাম। ১৭ মাস বয়সে এসে ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়া থ্রেড বা থ্যালাসেমিয়া মেজরে ছেলেটিও আক্রান্ত। এককথায় দুই সন্তানের মধ্যে দুজনই থ্যালাসেমিয়া থ্রেডে আক্রান্ত। ছেলে আর মেয়েকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতোমধ্যে সর্বস্ব খুইয়েছেন শিক্ষক শাহপরাণ। এরই মধ্যে গত কয়েক মাস আগে নিজেই আক্রান্ত হন কিডনি রোগে। কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। চিকিৎসক সোজা বলে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে কিডনির অপারেশন না করালে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রকট হয়ে যাবে। শাহপরাণের দুই সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলিয়ে চারজনের সংসারের তিন জনই সব জটিল রোগে আক্রান্ত। এমতাবস্থায় ঠিক কী করবেন শাহপরাণ কিছুই বুঝতে পারছেন না। প্রকট শারীরিক সমস্যা আর টাকার সমস্যা দুটো এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শাহপরাণের জীবনে।
|আরো খবর
শাহপরাণের বড় সন্তান সাদিয়া আফরিন প্রাপ্তি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। শারীরিক সমস্যার কারণে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। থ্যালাসেমিয়া থ্রেডের কারণে নিয়মিত রক্ত দিতে হয় আর ঔষধ তো আছেই। এরই মধ্যে ছেলে আবু বকর আল ফাহিমের মাত্র ১৭ মাস বয়সে থ্যালাসেমিয়া থ্রেড শনাক্ত হয়। ফাহিমের এখন ২২ মাস। থ্যালাসেমিয়ার সাথে ফাহিম যতো সব জটিল সমস্যায় আক্রান্ত। মুখের প্রতিটি দাঁতের মাড়িতে এখন তার ক্ষত, পায়খানার রাস্তায় ক্ষত।
এদিকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কোনো এক সময় শাহপরানের কিডনিতে বাসা বাঁধে পাথর। যা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শরীর যতোই খারাপ হোক, টাকার অভাবে নিজে চিকিৎসকের কাছে যেতে চাননি। এরই মধ্যে কিডনির পাথর অনেক বড় হয়ে যায়। আর যখন চিকিৎসকের কাছে যান তখন চিকিৎসকের পরামর্শ, এ মুহূর্তে অপারেশনের বিকল্প আর নেই। কিন্তু টাকা নেই তো, অপারেশন নেই, চিকিৎসা নেই।
শাহপরানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার জানান, স্বামীর অল্প আয়ে ভালোই তো চলতে পারতাম। প্রথম সন্তানটি অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক সম্পদ হারিয়েছি। ভাবছি ঠিক হয়ে যাবে। পরের সন্তানটি ছেলে হলো, খুশিতে ছিলাম। ১৭ মাস বয়সে ছোট সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মেজর ধরা পড়লো। কী করবো, আল্লাহ রোগ দিয়েছেন, আল্লাহ রক্ষা করবেন। কিন্তু বিধিবাম। অর্থনৈতিকভাবে যখন কোনো কুল আর পাচ্ছি না ঠিক তখনই আমার জীবনে নেমে আসে আরেক মহাদুর্যোগ। স্বামীর কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। পরিবারের ৪ জনের মধ্যে আমি অভাগা ছাড়া স্বামী আর দুই সন্তান যতো সব দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। আমার কপালটাই যেনো অন্ধকারে ঢাকা।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের কত হাজার হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে থাকেন, আমায় যদি একটু সহায়তা করতেন’-এমন আব্দার করে শিক্ষক শাহপরাণ বলেন, আসলে আমি বরাবর সম্ভবত আল্লাহর একজন পাপী বান্দা। তা না হলে রাব্বুল আলামীন কেনো আমাকে এতোসব জটিল রোগ দিলেন। বুকের দুটি ধন, দুজনই থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত আর আমি নিজেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে আছি। দুই সন্তানকে চিকিৎসা করিয়ে আমরা সর্বস্ব শেষ করে ফেলেছি। এখন আমি নিজে কী দিয়ে চিকিৎসা করাবো আর সন্তানদেরকে কী দিয়ে সবসময় চিকিৎসা চালাবো-ভেবে কূল পাই না।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহপরাণ বলেন, সরকারিভাবে আমি হাজার দশেক টাকা অনুদান পেয়েছি। আর আমাদের সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি আমার কাছ থেকে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ অনুদানের আবেদন নিয়েছেন। তিনি নিজে আমাকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মাওলা বলেন, আমরা সাধারণত থ্যালাসেমিয়া রোগী পেলে তা শনাক্ত করে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ফরম পূরণ করে পাঠিয়ে দিই। এই পরিবারটিকে একই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত রোগের জন্যে যা যা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব তা আমাদের হাসপাতাল থেকে করা হয়ে থাকে।