প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে
দুই মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ টানা-হিঁচড়ার অবসান
অবশেষে রেল মন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ আট বছরের টানা-হিঁচড়ার অবসান শেষ হচ্ছে। চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডের আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণকাজে আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ আট বছর এটি ফাইলবন্দী ছিলো। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রচেষ্টায় রেলওয়ে বিভাগ পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থলের বড় স্টেশন মোলহেডের ১.০৬ একর জায়গার ওপর ইলিশকেন্দ্রিক আকর্ষণীয় স্থান নির্মাণসহ পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমেেধ্য স্থানীয় প্রশাসন মোলহেডের পুরো চত্বরকে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র’ নামকরণ করে কেন্দ্রের প্রবেশপথে একটি গেইট নির্মাণ করেছে।
|আরো খবর
চাঁদপুরকে পর্যটন কেন্দ্র ও ব্র্যান্ডিং জেলা গঠনের সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল। এজন্যে সে সময় চাঁদপুরের তৎকালীন প্রশাসন এখানকার বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণির ব্যক্তিবগর্কে নিয়ে গঠন করে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি। সেই কমিটি তৎকালে নদীতীরবর্তী প্রায় ২শ’ বিঘা জমির ওপর একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই তো রেলওয়ের অব্যবহৃত এ দুইশ’ বিঘা জমি পর্যটন কেন্দ্রের জন্যে ব্যবহার ও বর্তমান রেলের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের অন্যত্র স্থানান্তরকরণের কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়।
২০১৪ সালে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাঁদপুরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ ও তা নির্মাণের প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। পরবর্তী সময়ে তিনি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে রেল মন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার ভূমি-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে ভূমি স্থানান্তর করার একটি সিদ্ধান্তও হয় বলে জানা যায়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিনিধি দল চাঁদপুর মোলহেড সরেজমিন পরিদর্শন করে ‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভের পর থেকে নদীর তীর পর্যন্ত ১.০৬ একর জমি নির্ধারণ করে তাতে ‘রিভারভিউ ফুড পোর্ট’ নামে আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে তিন নদীর মিলনস্থলে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রায় ১ একর জায়গা চেয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করে। বিষয়টি নিয়ে আর অগ্রগতি হয়নি তখন। দুই মন্ত্রণালয়ের অনেক চিঠি চালাচালির পর অবশেষে রেল মন্ত্রণালয় নিজেরাই এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে। এর পূর্বে রেলওয়ের চাঁদপুর মোলহেডের দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি অন্য কোনো মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর না করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে। ইতোপূর্বে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বড় স্টেশন মোলহেড স্থানকে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র নামকরণ করে পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করে। মোলহেড চত্বরে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটি মোলহোডের প্রবেশপথে ‘সেলফি স্ট্যান্ড’ নামে ইলিশ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ স্টেট অফিসার মাহবুবুল করিম জানান, চাঁদপুর মোলহেডের জায়গাটি যেহেতু রেলওয়ে বিভাগের, তাই রেল বিভাগ এটিকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্যে সেখানকার একটি নকশা রেল বিভাগ চূড়ান্তও করেছে। তিনি আরো জানান, টেন্ডার নোটিস করা হয়ে গেছে। চলতি মাসের শেষদিকে টেন্ডার ওপেন করা হবে। ইতোপূর্বে সেখানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক সদৃশ যা কিছু নির্মাণ করা হয়েছে তা বহাল থাকছে বলে জানা যায়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘রক্তধারা’কেও সুরক্ষিত করা হবে। ছোট আকারে বঙ্গবন্ধু রিভার ভিউ পয়েন্ট, দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা হবে এখানে। এছাড়াও বড় স্টেশন মোলহেডকে উন্মুক্ত পার্ক হিসেবে আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল বিভাগ।