শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ২৩:৫৪

রিকশা চালকের হাতে খুন হলেন শাহরাস্তির সেই দম্পতি

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
রিকশা চালকের হাতে খুন হলেন শাহরাস্তির সেই দম্পতি

নূরুল আমিন (৬৫) ও কামরুন নাহার (৬০) নামে শাহরাস্তির এক দম্পতি আঃ মালেক নামে এক ছিঁচকে চোরের হাতে খুন হয়েছেন বলে গতকাল পিবিআই প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে। হত্যার শিকার স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময় তারা ব্যাংকে যাতায়াতকালে তাদের দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশী রিকশা চালক মোঃ আব্দুল মালেকের রিকশায় চড়তেন। তারা আঃ মালেকের রিকশায় ঘনঘন ব্যাংকে যাতায়াত করায় আঃ মালেক ফন্দি আটে ওই দম্পতির ঘরে চুরি করার, কেননা ছিঁচকে চুরিতে তার ছিলো অভ্যস্ততা ও অভিজ্ঞতা। অবশেষে ছিঁচকে চুরি করতে গিয়েই আঃ মালেক খুন করেছেন এই দম্পতিকে।

নূরুল আমিন-কামরুন নাহার দম্পতি শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া এলাকা নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে।

এই দম্পতির হত্যারহস্য উদ্ঘাটন শেষে সাংবাদিকদের সাথে প্রেসব্রিফিং করেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভীন। শনিবার সন্ধ্যায় বাবুরহাট এলাকায় অবস্থিত পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এই প্রেসব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এক আসামীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাদেরকে কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন : শাহরাস্তি উপজেলার ঘুঘুশাল এলাকার মোঃ আবদুল মালেক, চোরাই মালের ক্রেতা ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান এলাকার মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও বরিশাল জেলার কাউনিয়া উপজেলার চরবাড়ীয়া এলাকার মোঃ বশির। তারা উভয়েই চাঁদপুর শহরে বসবাস করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির মূল গেইট খোলা পেয়ে আঃ মালেক ওই দম্পতির বাড়ির ছাদে কৌশলে অবস্থান নেয়। রাত ৯টার দিকে নুরুল আমিন ছাদে উঠলে পিছন থেকে আঃ মালেক তার সাথে থাকা লোহার রড দিয়ে সজোরে তার মাথায় আঘাত করে। তার পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ছাদে শুকাতে দেয়া পায়ের মৌজা দিয়ে শ^াসরোধ করে সেখানেই হত্যা করে তাকে। পরবর্তীতে চুরি করতে বিল্ডিংয়ের একটি রুমে ভেতরে প্রবেশ করে একটি ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ার টানাটানি করতে থাকে। এ সময় ড্রয়ার খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে আঃ মালেককে দেখে চিনে ফেলেন কামরুন্নাহার। এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্যে। এ সময় আঃ খালেক তার হাতে থাকা রড দিয়ে কামরুন্নাহারের মাথায় আঘাত করে। এতে করে তিনি ফ্লোরে পড়ে যান এবং তার মাথা ফেটে রক্ত বেরুতে থাকে। পরবর্তীতে নূরুল আমিনের ব্যবহৃত একটি অপো এ-৮৩ মডেলের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে ছাদ থেকে গাছ বেয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। ১ জুলাই সংবাদ পেয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে মৃত অবস্থায় নুরুল আলমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অজ্ঞান অবস্থায় তার স্ত্রী কামরুন নাহারকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। এই ঘটনায় নিহতদের ছেলে মোঃ জাকারিয়া বাবু বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, মামলাটি প্রায় এক মাস শাহরাস্তি থানা পুলিশ তদন্ত করে। তদন্তাধীন অবস্থায় মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই মামলার পরবর্তী তদন্ত পিবিআইকে করার নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক কবির আহমেদ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বলেন, পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার স্যারের তত্ত্বাবধয়নে আমরা শুরু থেকেই এই ঘটনায় নিবিড়ভাবে তদন্ত কাজ চালু রাখি। আমরা এই ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছি। শাহরাস্তির প্রতিটি অঞ্চলে সন্দেহভাজন মানুষদের এনে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করি। বিশেষ করে এই ঘটনায় চুরি যাওয়া মোবাইল নিয়ে আগে থেকেই আমাদের নজরদারিতে চাঁদপুরের একজনকে রেখেছিলাম। পরবর্তীতে গোপন সোর্সের মাধ্যমে তাকে আমরা ফলো করতে থাকি। আমরা নিশ্চত হই সেই সন্দেহভাজন ঝালকাঠিতে রয়েছে। পরবর্তীতে চাঁদপুর থেকে পিবিআইয়ের একটি টিম পাঠিয়ে সেই সন্দেহভাজনকে ধরতে সমর্থ হই। গত ১৯ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার গাবখান এলাকা থেকে মোঃ ইলিয়াস হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে চুরি যাওয়া মোবাইল সেটটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় তিনি আমাদের বলেন, মোবাইলটি চট্টগ্রামের ফুটপাতের একজন হকারের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন, তবে তিনি তার নাম বলতে পারেনি। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে খোঁজ করে সেই হকার বশিরকে গ্রেফতার করি। এ সময় বশির বলেন, প্রায় দুই মাস আগে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে একজন এই ফোন সেটটি বিক্রি করতে এসেছিলেন। মোবাইলের দাম সাড়ে ৩হাজার টাকা দাবি করে আবদুল মালেক। কিন্তু বশিরের কাছে এতো টাকা না থাকায় তার মাধ্যমে ২৫টাকার বিনিময়ে মোবাইল সেটটি ক্রয় করেন ইলিয়াস হোসেন। এর জন্য বশিরকে ৫শ’ টাকা দেয় ইলিয়াস।

পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনায় পরে ২১ অক্টোবর আবদুল মালেককে গ্রেফতর করতে শাহরাস্তি ও চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন কাঁচাবাজার আড়তে ও লাকসাম এলাকায় অভিযান চালাই। বশিরের দেয়া তথ্যে আমরা জানতে পারি আবদুল মালেক রিয়াজ উদ্দিন কাঁচাবাজারে মাল আনডোল-আপলোড করে। আবদুল মালেক অনেকটা সময় আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ২২ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের পাশে একটি বোর্ডিং থেকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছদ্মবেশে থাকা আমার অফিসাররা অনেক মানুষের উপস্থিতিতে আবদুল মালেককে গ্রেফতার করতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে তাকে চাঁদপুর পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় এবং তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি আমাদের সাথে খুনের সকল কিছু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। পরে তাকে নিয়ে শাহরাস্তি গিয়ে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করা হয়। তিনি (আবদুল মালেক) অনেক আগে থেকেই এলাকায় ছিঁচকে চুরির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই ঘটনায় মামলার বাদী নিহত নুরুল আমিন দম্পতির ছেলে মোঃ জাকারিয়া বাবু বলেন, আমরা পিবিআইয়ের এই কার্যক্রমে অত্যন্ত খুশি। পুলিশ এভাবে মানুষের জন্যে কাজ করলে তাদের প্রতি সাধারণের আস্থা ও ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সাথে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়