বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪২

স্বামীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী কারাগারে

সংবাদদাতা
স্বামীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী কারাগারে

স্বামীর দায়ের করা যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারার মামলায় স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শাহরাস্তির আমলী আদালত, চাঁদপুর। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) বিজ্ঞ এ বিচারক তন্ময় কুমার দে এই আদেশ দেন। মামলার আসামি কামরুন নাহার (৩২) শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের স্ত্রী। তার স্বামী মজিবুর রহমান বিগত ২০ জুলাই ২০২৫ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শাহরাস্তির আমলী আদালত, চাঁদপুরে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় সি আর-৩৭১/২০২৫ নং মামলা দায়ের করেন। শাহরাস্তির আমলী আদালতের বিচারক তন্ময় কুমার দে এ মামলায় বিগত ২১/৮/২০২৫ তারিখে আসামী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে সমন দেন। সমন জারির পরেও আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় বিগত ০৫/১০/২০২৫ তারিখে বিচারক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর শাহরাস্তি থানা পুলিশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কামরুন নাহারের অবস্থান নির্ণয় করে ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহরাস্তির কালী বাড়ি এলাকা থেকে তাকে আটক করে। পুলিশ মঙ্গলবার আসামিকে আদালতে প্রেরণ করে। কামরুন নাহার আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন চাঁদপুর বারের বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা। স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধন আইনের ৩ ধারায় দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুন শাহরাস্তি উপজেলার উল্লাশ্বর গ্রামের আবুল কালামের কন্যা কামরুন নাহারের সঙ্গে একই উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র মজিবুর রহমানের ২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মজিবুর রহমান ও তার অভিভাবকগণ কামরুন নাহারকে প্রায় ৪ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার দেন এবং মেহমানদারি করাতে ২.৫ লক্ষ টাকা খরচ করেন। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী কামরুন নাহার তার স্বামীকে নগদ অর্থ, জমিজামা লিখে দিতে ও শহরে তার নামে ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার জন্যে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কামরুন নাহার সুকৌশলে তার স্বামী মজিবুর রহমানের নিকট থেকে বিগত ৯/০৮/২০২৪ তারিখে ১,৯৭,০০০/-(এক লক্ষ সাতানব্বই হাজার) টাকা এবং ১০/০২/২০২৫ তারিখে ১,৬০,০০০/-(এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কথা বলে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকারে নিয়ে আর ফেরত দেননি।

স্ত্রী কামরুর নাহার বিভিন্ন পরপুরুষের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে আসক্ত ছিলেন। সারাক্ষণ মোবাইলের ইমোতে ও হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকতেন। কামরুন নাহার বিয়ের সময় তার স্বামীকে আগে একটি বিয়ে হয়েছে বললেও তার স্বামী জানতে পারেন যে, ইতঃপূর্ব তার স্ত্রীর তিনটি বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী কামরুন নাহার ১০ শতাংশ জায়গা, তার স্বামীর দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার নিজ নামে লিখে দিতে ও শহরে একটি ফ্ল্যাট যৌতুক হিসেবে কিনে দেওয়ার জন্যে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এই নিয়ে সংসারে চলতে থাকে চরম পর্যায়ের দাম্পত্য কলহ। ব্যবসায়িক কাজে রাখা স্বামীর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে কাউকে না বলে তিনি বাপের বাড়ি চলে যান। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করলেও স্ত্রী কামরুন নাহার সবাইকে গালাগালি করে এবং কাউকে পাত্তা দেননি।

স্বামী মজিবুর রহমানের পক্ষের চাঁদপুর বারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা বলেন, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮-এর ৩ ধারায় যদি বিয়ের কোনো এক পক্ষ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিয়ের অন্য কোনো পক্ষের নিকট কোনো যৌতুক দাবি করেন, তাহলে সেটি হবে এই আইনের অধীন একটি অপরাধ এবং তজ্জন্যে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কিংবা অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। স্ত্রী যদি যৌতুক দাবি করে, তাহলে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করতে কোনো আইনি বাধা নেই। আমরা তা-ই করেছি। আদালত আমাদের মামলা আমলে নিয়েছে।

এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের স্থানীয়রা জানান, কামরুন নাহার সংসার করতে এসে এভাবে সংসারে অশান্তি করাটা ঠিক হয় নি। তার এতো চাহিদা! এর আগেও তিনটা সংসার ভেঙ্গেছে। এসব মহিলার আইনের মাধ্যমে উপযুক্ত বিচার হোক। এদিকে চাঁদপুরের সুশীল সমাজের দাবি, বর্তমানে পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষরা নারী দ্বারা নির্যাতিত। সমাজে পুরুষ নির্যাতন বর্তমানে একটি ভয়ঙ্কর রূপে পরিণত হয়েছে। সমাজে নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতিত বা নিগৃহীত হলে সেটা অনেকে লোক লজ্জায় প্রকাশ করে না বা সমাজ সেটাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে না। সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন, যেটি দেখার কেউ নেই। বলারও কোনো উপায় নেই। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়াই হচ্ছে এর মূল কারণ।আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মুজিবুর রহমানকে ।তিনি আইনগতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। মাননীয় আদালতকেও ধন্যবাদ সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্যে। এই জঘন্য অপরাধের জন্যে একজনকে শাস্তি দিয়ে আরও দশজনকে সতর্ক করে দেয়া দরকার। সেমতে আদালত প্রমাণ করে দিলো আইন সবার জন্য সমান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়