প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ০০:২৬
চাঁদপুরে 'মৃত' মুক্তিযোদ্ধা জীবিত!
পরকীয়া, নির্যাতন, এবার মুক্তিযোদ্ধার 'মৃত্যু'! স্ত্রীর অপকর্মে হতবাক চাঁদপুর

|আরো খবর
চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা মোড়ের এক প্রান্তে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা সুজন তালুকদার আজ জীবিত, কিন্তু সরকারি নথিপত্রে তিনি মৃত। তার এই 'মৃত' পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার।
এই ঘটনায় চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকে গিয়েই ফাঁস হয় প্রতারণা
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ মে, মঙ্গলবার। চাঁদপুর শহরের সোনালী ব্যাংক শাখা, চিত্রলেখা মোড়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বিস্ময়কর তথ্য। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহবুব আলম জানান, “আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী, সুজন তালুকদার মৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত। তার স্ত্রী নিয়মিতভাবে তার নামে ভাতা উত্তোলন করছেন।”
এই ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশ নিয়মিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সরকারি সিস্টেমেও মৃত!
‘বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম’-এ দেখা গেছে, সুজন তালুকদার মৃত হিসেবে তালিকাভুক্ত। তার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর: ০১১৩০০০১৬০২ এবং গেজেট নম্বর: ৫৫। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি এখনো জীবিত এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন।
অসীমার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ
অনুসন্ধানে জানা যায়, সুজন তালুকদার একসময় প্রবাসে ছিলেন। সেই সময় তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার চাঁদপুর শহরে বসবাস করতে গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, অসীমার বিরুদ্ধে পরকীয়া, স্বামীকে গৃহবন্দি করে রাখা, এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার জানান,
"আমার কাকাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। কাগজে-কলমে তাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা নিচ্ছেন। আমাদের ধারণা, তিনি এখন কাকাকে সরিয়ে দিয়ে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন।"
সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রশাসনের হুঁশিয়ারি
চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও সামাজিক সংগঠনগুলো এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিনয় ভূষণ মজুমদার, আমিনুর রহমান ও বাসুদেব মজুমদার বলেন,
"এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ ভয়ানক অপরাধ। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।"
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান,
"অভিযোগের সত্যতা মিললে অবিলম্বে ভাতা বন্ধ এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকরা যদি তথ্য-প্রমাণ দেন, তাদের পুরস্কৃত করা হবে।"
অসীমার বক্তব্য: দায় এড়ানোর চেষ্টা
অভিযুক্ত অসীমা তালুকদার বলেন, তিনি শিগগির ঢাকায় চলে যাবেন এবং সুজন তালুকদারকে তার আত্মীয়দের জিম্মায় রেখে চিকিৎসার জন্য রেখে যাবেন। তবে ভাতার অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
সামাজিক ক্ষোভ ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
এ ঘটনাটি এখন চাঁদপুর শহরে আলোচিত একটি প্রতারণার উদাহরণ। মুক্তিযোদ্ধার সম্মানহানি এবং রাষ্ট্রীয় ভাতা আত্মসাতের এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা জাগাচ্ছে।
সচেতন নাগরিকদের দাবি,
"এভাবে একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভাতা নেওয়া শুধু আইনি অপরাধ নয়, এটি জাতির গর্বকে কলঙ্কিত করা। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।"