প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০:৫৭
"ফাঁকা রাস্তা পেয়েছি..." - কৈশোরের ভুলে মুন্সীগঞ্জে উড়তে পারত শোকের পতাকা!
শ্রীনগরে শিশুচালকের বেপরোয়া ট্রলি দুর্ঘটনা: অল্পের জন্য রক্ষা পেল শত শত শিক্ষার্থী

|আরো খবর
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শিশুটির নিয়ন্ত্রিত ট্রলিটি বেপরোয়া গতিতে বিপরীত লেন ব্যবহার করে আসছিল। অতিরিক্ত গতি আর ভারী মালামালসহ ট্রাক্টরের সংযুক্ত যন্ত্রের ভারে রাজু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে ট্রলি এবং ট্রাক্টরের যন্ত্রাংশ উল্টে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছিটকে পড়ে।
ভাগ্যের পরিহাস, তখনও বিদ্যালয়ের প্রধান অংশের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ করেনি। ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
শিশুটির বক্তব্য
ঘটনার পর শিশুচালক মোহাম্মদ রাজু স্বীকার করে জানায়, "রাস্তা ফাঁকা দেখে দ্রুত পৌঁছাতে চেয়েছিলাম। তাই গতি বেশি ছিল।"
এলাকাবাসীর উদ্বেগ
স্থানীয় মুদি দোকানদার মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বেপারী জানান, "প্রতিদিন শত শত ছাত্রছাত্রী ও পথচারী এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। আজকের দুর্ঘটনাটি সকালে ঘটায় সবাই রক্ষা পেয়েছে। তবে দিনভর যদি এ ধরনের বেপরোয়া ট্রলি চলাচল করে, বড় ধরনের ট্র্যাজেডি অস্বাভাবিক কিছু হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "বিশেষ করে স্কুলমুখী রাস্তায় স্পিড ব্রেকার না থাকা খুবই উদ্বেগজনক। দ্রুত গতির যানবাহন প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।"
স্থানীয় সূত্র জানায়
বাঘড়া ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য বাঘড়া আলহেরা আইডিয়াল মাদ্রাসা—দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শতাধিক ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০-এর বেশি বাস, সিএনজি, ট্রলি, মোটরসাইকেল এবং পণ্যবাহী যান চলাচল করে।
সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সড়কে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
প্রশাসনিক উদাসীনতা!
স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন, ট্রলি-ট্রাক্টরের চলাচল নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ১৬ বছর বয়সের নিচে কোনো ব্যক্তি কোনো যানবাহন চালাতে পারবে না—এ মর্মে সড়ক পরিবহন আইনে (২০১৮) স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না।
এছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী ট্রলি বা ট্রাক্টরকে মূল সড়কে চলাচলের অনুমতি নেই। এগুলো শুধু কৃষিকাজ বা গ্রামীণ রাস্তায় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অথচ নিয়ম ভেঙে প্রতিদিনই এসব যান চলাচল করছে ব্যস্ত রাস্তায়, দেখার কেউ নেই।
বিশ্লেষণ: বড় বিপদের ইঙ্গিত
"শিশুদের হাতে ভারী যানবাহন থাকা শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, এটি সরাসরি জনগণের জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়। স্থানীয় প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত নজরদারি ছাড়া এ ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।"
এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ট্রাফিক পুলিশ বা স্কুল-পলিসি (স্কুল এলাকা নিরাপত্তা) কার্যকর না থাকাটাও এ ধরনের ঝুঁকি বাড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দ্রুত ব্যবস্থা জরুরি
- দ্রুত রাস্তায় স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করতে হবে।
- ট্রলি-ট্রাক্টর চলাচলের নিয়ম কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- কমবয়সী চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
- স্কুল এলাকার আশপাশে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের মধ্য বাঘড়ার দুর্ঘটনাটি অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও বারবার এভাবে ‘ভাগ্যের উপর’ নির্ভর করে থাকা কোনো সমাধান নয়। প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ এবং অভিভাবকদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া শিশু চালকের হাতে প্রাণনাশের ঝুঁকি থেকে এলাকাবাসী মুক্তি পাবে না। আজ যদি কেউ হতাহত হতো, তাহলে দায়ভার কার উপর বর্তাতো?
প্রশ্ন রয়ে যায়: আমরা কি আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি?
ডিসিকে/ এমজেডএইচ