প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৮
বিমানবন্দরের ছায়ায় নরককুণ্ড!
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে গোপন বন্দিশালার ভয়াবহ চিত্র!

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে একাধিক গোপন বন্দিশালা। তদন্তকারীরা জানান, এই স্থাপনাগুলি ছিল জানালাবিহীন, অন্ধকারাচ্ছন্ন ছোট ছোট কক্ষ, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী ব্যক্তি ও মানবাধিকার কর্মীদের অবৈধভাবে আটক রাখা হতো।
|আরো খবর
ভুক্তভোগীদের স্মৃতিতে গোপন কারাগারের সন্ধান
ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি ২০১৬ সালে নিখোঁজ হন, আট বছর পর ফিরে এসে জানান, তাকে বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি স্থানে আটকে রাখা হয়েছিল। চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনি নিয়মিত বিমানের শব্দ শুনতেন, যা তাকে স্থানটির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেয়। তার বর্ণনায় উঠে আসে, কক্ষগুলি এতটাই ছোট ছিল যে একজন গড়পড়তা মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না।
র্যাবের সংশ্লিষ্টতা ও রাজনৈতিক নির্দেশনার অভিযোগ
তদন্তে উঠে আসে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা এই গোপন জেল পরিচালনা করতেন এবং তারা সরাসরি তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, "সব গুমের ঘটনাই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে হয়েছে।"
নির্যাতনের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ব্যারিস্টার আরমান, যিনি একই স্থানে আটক ছিলেন, জানান, গ্রীষ্মকালে কক্ষগুলিতে অসহনীয় গরম ছিল এবং দরজার নিচে মুখ রেখে হাওয়া নেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, "এটা ছিল মৃত্যুর চেয়েও খারাপ।" আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই ঘটনাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছে।
নতুন সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত আগস্টে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন সরকার এই গোপন বন্দিশালাগুলির তদন্ত শুরু করে। ইতিমধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এবং অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
এই গোপন বন্দিশালাগুলির আবিষ্কার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি অন্ধকার অধ্যায় উন্মোচন করেছে। ভুক্তভোগীদের স্মৃতি ও তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যগুলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নাড়া দিয়েছে এবং এটি নিশ্চিত করেছে যে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সজাগ থাকা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।
ডিসিকে/এমজেডএইচ