প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮
সচিবালয়ে আগুন: নাশকতার চিহ্ন, তদন্তে নতুন মোড়
গত ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ছয় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এরও চার ঘণ্টা পর ভবনটির পুরোপুরি আগুন নির্বাপণ সম্ভব হয়। এ ঘটনায় ৭ নম্বর ভবনের ছয় তলা থেকে নয় তলা পর্যন্ত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অফিস ছিল। এতে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
|আরো খবর
নাশকতার প্রাথমিক আলামত
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি স্বাভাবিক ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদের মতে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে সেটি একই ফ্লোরে সীমাবদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু পৃথক তিনটি ফ্লোরে একই সময়ে আগুন ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সচিবালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে পৃথক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকায় শর্টসার্কিট থেকে এ ধরনের আগুনের সম্ভাবনা কম। সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলামত পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তে উচ্চপর্যায়ের তৎপরতা
সরকার ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কিছু আলামত বিদেশে পাঠিয়ে পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পারে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
নথি পুড়ার কারণে শঙ্কা
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রশাসনিক কাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতের আধুনিকায়ন পরিকল্পনা, এবং স্থানীয় সরকারের বাজেট সংক্রান্ত তথ্য ধ্বংস হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সচেতনতা ও প্রশ্নবোধকতা
অগ্নিকাণ্ডের সময়, তিনটি পৃথক ফ্লোরে আগুন লাগা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় নাশকতার তত্ত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে। কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা জানতে আগ্রহী পুরো দেশ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর আসল সত্য উদঘাটিত হবে বলে সবার আশা।