শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৩

অনলাইন ক্যাসিনো জুয়ায় সর্বস্বান্ত চাঁদপুরের যুবসমাজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ক্যাসিনো জুয়ায় সর্বস্বান্ত চাঁদপুরের যুবসমাজ

পেশায় ছিলেন দর্জি। খুবই দরিদ্র অবস্থায় ছিলেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে অনলাইনে ক্যাসিনো খেলার ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়ে জড়িয়ে পড়েন জুয়ায়। তার সঙ্গে যোগ হয় নিজের সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। লোভনীয় অফার দিয়ে জুয়ার ফাঁদে লোকজনকে ভিড়িয়ে এখন তিনি কোটিপাতি। যুবসমাজ হয়েছে সর্বস্বান্ত।

এসব অভিযোগ চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের রালদিয়া গ্রামের শওকত গাজীর বিরুদ্ধে। গ্লোরি ক্যাসিনো নামে অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া চারজন ভুক্তভোগী যুবকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। mসরেজমিন অনলাইন ক্যাসিনোর পরিকল্পনাকারী শওকত গাজীর রালদিয়া গ্রামের বাড়িতে (বৈদ্যগ বাড়ী) গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তার বিষয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল প্রধানিয়া বলেন, ‘শওকত গাজী ঢাকার মিরপুরে দর্জির কাজ করতেন। পাঁচ বছর আগে আমার দোকানে চাল বাকি নিয়ে টাকা দিতে পারেনি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক। এখন এলাকায় কোটিপতি আর শিল্পপতি বলে তার পরিচয়।’ bশওকত গাজীর অর্থসম্পদ এলাকার সব লোকজনের চেয়ে বেশি। জড়িত আছেন অনলাইন ক্যাসিনোতে। এমন তথ্য দিলেন আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে তারা নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দক্ষিণ রালদিয়া জামে মসজিদের একাধিক মুসল্লির অভিযোগ, শওকত গাজীর অনেক টাকা। তার পক্ষে অনেক লোক কথা বলে। তবে তিনি পঁচ বছর আগে আমাদের দক্ষিণ রালদিয়া ও হোসেনপুর জামে মসজিদ বিদেশি সংস্থার অর্থয়ানে করা হবে বলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষের জন্য নেন। কিন্তু সেই টাকা এখনো ফেরত দেননি। তার এই ধরনের কাজের বিষয়ে ভালো জানেন মসজিদের উপদেষ্টা ওমর মাল।

মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা ওমর মাল বলেন, শওকত গাজীর সঙ্গে গত ৩০ আগস্ট কথা হয়েছে। সে ওই ঘুষের টাকা ফেরত দেবে বলেছে। শওকত গাজীর অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায় রাতারাতি কোটপতি হওয়ার গল্প জানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। তার এই জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করেন বড় ছেলে মোতালেব গাজী এবং সহযোগী ছোট ছেলে মিরাজ গাজী। মোতালেব জুয়ার প্রধান কার্যালয় দুবাইতে আসা-যাওয়া করেন। জুয়ার অনলাইন ও স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হোয়াটস অ্যাপের অ্যাডমিন মোতালেব। স্থানীয়ভাবে ক্যাসিনোর ফাঁদে লোকজনকে যুক্ত করান শওকত আলীর মেয়ের স্বামী মো. কামাল মিজি ওরফে বাবু।

ক্যাসিনোতে জড়িত যুবকদের একজন শান্ত। অনলাইনে এই জুয়ার সন্ধান পান তিনি। শান্ত বলেন, ‘তারপর ১২৫ শতাংশ বোনাসসহ নানা লোভনীয় অফারে এতে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু এই খেলার মধ্যে বিকাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা দেয়ার পর যোগাযোগকারী ব্যক্তির নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তারা অনেক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে সদস্য ছিল দেড় শতাধিক।’ চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট এলাকার ক্যাসিনো জড়িত যুবক মানিক, শামীম ও রওশন। জুয়ার টাকা পরিশোধ করে একসময় জানতে পারলেন কামাল নামে ব্যক্তি এই জুয়ার স্থানীয় দালাল।

ওই এলাকার প্রবাসী নজরুল ইসলাম (সুমন) বলেন, ‘আমি প্রবাসে থাকলেও নানা সামাজিক কাজে জড়িত। সেই সুবাদে শওকত গাজীর মেয়ের স্বামী কামাল মিজির সাথে পরিচয়। সে আমার কাছে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হবে বলে ২০ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। তার শ^শুর পরিবার এলাকায় ক্যাসিনো জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত। রাতারাতি এই পরিবার কোটিপতি হওয়ার বিষয়টি দুদকের খোঁজ নেওয়া সময়ের দাবি।’

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জুয়ার অ্যাডমিন মোতালেব গাজীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মোতালেবের বোনজামাই কামাল মিজি বলেন, ‘অনলাইনে ক্যাসিনো কী আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা সত্য নয়। আমি কোনো জুয়ার সাথে জড়িত না। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলব।’ এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আর ফোন দেননি।

শওকত গাজীর বক্তব্য কয়েক রকম। প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন ক্যাসিনোতে জড়িত না। তিনি আল্লাহর কসমসহ নানা কসম দিয়ে কথা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এক সময় দর্জির কাজ করতাম। এখন আমাদের দুুবাইতে ব্যবসা আছে। ব্যবসার কাজে আমার ছেলেকে বারবার দুবাইতে যেতে হয়।’

ক্যাসিনো ও হোন্ডির ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার ছেলে দুবাই আসা-যাওয়া করে- এমন অভিযোগের কথা জানালে তিনি তা অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকা ও গাজীপুরে নগদের ব্যবসা করে।’ মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে শওকত গাজী বলেন, ‘আমি বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে বরাদ্দ এনে দিব বলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি সত্য। কিন্তু ঘুষের টাকা তো ফেরত পাওয়া যায় না। যার মাধ্যমে ওই টাকা দিয়েছি সে টাকা দেয়নি। তারপরেও আমি বলেছি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতে।’ মসজিদ নির্মাণের জন্য ঘুষ দেয়ার বিষয়টি সঠিক হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়