প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ওমানে ফটিকছড়ির প্রবাসীর আত্মহত্যা
সকালে ঘন্টা ধরে স্ত্রীর সাথে কথোপকথন, বিকেলে গলায় ফাঁস
নিজের এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিল না। অন্যদের কাছ থেকে মুঠোফোন চেয়ে নিয়ে ইমোতে কথা বলতেন পরিবারের সাথে। যেদিন আত্মহত্যা করেছেন, সেদিন সকালেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন স্ত্রী, সন্তানদের সাথে। এমনকি স্ত্রীর সাথে উচ্চ স্বরে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে শুনেন আশপাশের লোকজন। সেদিন কথা বলেছিলেন স্থানীয় ফটিকছড়ির আইয়ুব নামের আরেক প্রবাসীর মুঠোফোন থেকে।
|আরো খবর
আইয়ুব বলেন, আমার ফোনে তার স্ত্রী একটা রেকর্ডিং পাঠিয়েছিলেন সর্বশেষ। সেখানে শোনা যায়, 'কিস্তির টাকা দিতে পারিনি।'
মাওলানা মোঃ বেলাল ( ৫০)। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাইজভান্ডার গ্রামের মৃত খুইল্লে মিয়ার সন্তান। চলতি বছরের জুনের শুরুর দিকে বেলাল আর তার বড় ভাই হাসেম কর্মের তাগিদে প্রবাসে আসেন। ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে প্রায় ১৭০ কি. মি. দূরে মুদাবী নামক স্থানে তারা বসবাস শুরু করেন। বেলাল একসময়ে নানুপুর বাজার, পরে নাজিরহাট বাজারে ব্যবসা করেছেন। ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে প্রবাসে আসেন। তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক বেলাল কোনো ধরনের হাতের কাজ না জানা সত্ত্বেও প্রবাসে আজাদ ((নির্দিষ্ট কোন কর্ম ছাড়া) ভিসায় আসেন। এখানে এসে কাজ না জানায় শুরুতে কর্মহীনতায় ভোগেন। একটা সময় পর একটি কোম্পানিতে চাকরি করলেও সময় মতো জোটেনি বেতন। দেশ থেকে তার সাথে আসা বড় ভাই হাসেমও চলে যান অন্যত্র ( ইবরা বাজারে)। ফলে নিজে পড়েন অর্থকষ্টে।
গত শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে বেলালের রুমমেট মোজাম্মেল বলেন, বেলাল হুজুর মানুষ। শারীরিকভাবেও সক্ষম ছিলেন না। ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। দেশেও ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রবাসে এসেছেন। এখানে এসে সুবিধা করতে পারছিলেন না। দেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে আমাকে বার বার বলতেন। আমি নিজেও আশ্বস্ত করেছিলাম, দেশে পাঠানোর জন্যে সহযোগিতা করবো। বকেয়া বেতন আদায়ের অপেক্ষায় ছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে রুমমেট মোজাম্মেল আরো বলেন, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) একসাথে জুমার নামাজ পড়ে দুপুরের খাবারও খেয়েছেন আমাদের সাথে। দুপুরে খেয়েদেয়ে সবাই যখন ঘুমাতে গেলো, ঠিক ওই সময় বেলাল রান্না ঘরের পাশে গ্যাসের সিলিন্ডারের উপর দাঁড়িয়ে রান্না ঘরের ভিমের সাথে রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। বিকেল চারটার দিকে আমাদের আরেক রুমমেট তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। রাতে পুলিশ এসে সুরতহাল তৈরি করে লাশ মর্গে নিয়ে যায়।
এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন বড় ভাই হাসেম। তিনি বলেন, আমি আগেও ওমানে ছিলাম। ভাইকে বলেছি, বিদেশে কষ্টের কাজ করতে হয়। তুই আলেম মানুষ, পারবি না। তারপরও সে আসার জন্যে জোর করে। পরে তার জন্যে ভিসা সংগ্রহ করি। এভাবে করুণ পরিণতি হবে জানলে কখনোই বিদেশে আসতে বলতাম না। এদিকে লাশ দেশে পাঠাবেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তার ভাই। কেননা লাশ দেশে পাঠাতেও প্রয়োজন মোটা অংকের খরচ।