মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ১৪:১৫

তালেবানের পকেটে কী টাকা আছে?

অনলাইন ডেস্ক
তালেবানের পকেটে কী টাকা আছে?

বসে বসে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস কিংবা চেকপোস্ট পাহারা দিয়ে কতদিন! অর্থনীতির এমনিতেই রুগ্নদশা, তারওপর পকেট ফাঁকা হতেও দেরি নেই। এখন তো সাধারণ আফগানদের ঘরে ঘরে গিয়ে রুটি আর ফল কেড়ে নিচ্ছে। মারধর করেও যখন রুটি মিলবে না, তখন উপায় কী? তালেবানরা সবাই কি জানে যে, তাদের দেশের রিজার্ভের এক হাজার কোটি ডলার আফগানিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাংকে (দা আফগানিস্তান ব্যাংক) নেই!

আশরাফ গনির সঙ্গে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আজমল আহমদি। গত বুধবার এক টুইটে জানালেন, ‘তালেবানের ওপর একের পর এক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। বেশিরভাগ টাকাকড়িই তো দেশের বাইরে রাখা। সেগুলো তালেবানের হাতে পৌঁছানোর কোনও সম্ভাবনাও নেই।’

আজমলের মতে, আফগানিস্তানের রিজার্ভে যত সম্পদ ছিল (বিদেশি মুদ্রা, সোনাদানা, রুপার মুদ্রা) তার শূন্য দশমিক ১ কিংবা ২ শতাংশ তালেবানের হাতে যাবে। এটা মোটেও যথেষ্ট নয়। বাদবাকি পুরোটাই আটকে থাকবে দেশের বাইরে।

এ বছরের জুনের হিসাব অনুযায়ী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরফে ড্যাব-এর রিজার্ভ ছিল প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। যার মধ্যে স্বর্ণ ছিল ১৩০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের। আর বিদেশি মুদ্রার নগদ রিজার্ভ প্রায় ৩৬ কোটি ডলার।

ড্যাব-এর স্টেটমেন্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেই আফগানিস্তানের বেশিরভাগ সম্পদ রক্ষিত। এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের ব্যাংকটিতেই আছে ১৩২ কোটি ডলারের সোনা।

আবার আফগানিস্তানের ৬১০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগেরও বিস্তারিত জানায়নি ড্যাব। তবে ধারণা পাওয়া গেছে, ওগুলোর বেশিরভাগও মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ও বিল আকারে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কড়া নির্দেশ- এ সবের এক টাকাও যেন তালেবানের হাতে না যায়।

তবে আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিক মহল অবশ্য একটা ব্যাপার নিয়ে টেনশনে আছে। আফগান সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভল্টে আছে প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও ২১ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। সেন্ট্রাল ব্যাংকের গোপন ভল্টে আছে এগুলো। এর আগে যখন তালেবানরা ক্ষমতায় ছিল তখন অবশ্য তারা এগুলোর হদিস পায়নি। আফগান নীতিনির্ধারকরা অবশ্য গত জানুয়ারিতেই বলেছিলেন, এসব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলো দেশের বাইরে কোথাও গচ্ছিত রাখতে। তাদের কথামতো হয়তো সেসব সম্পদেরও একটা অংশ চলে গেছে তালেবানের নাগালের বাইরে।

অনিশ্চিত এসডিআর

এর বাইরেও একটা বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার কথা ছিল আফগানিস্তানের। সেটা হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস)। কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য আইএমএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত এক ধরনের বিশেষ তহবিল এটি। এখান থেকেও আফগানিস্তানের পাওয়ার কথা ছিল সাড়ে ৪৫ কোটি ডলার। সেটাও আপাতত স্থগিত আছে।

এর আগে ২০১৯ সালে আইএমএফভুক্ত ৫০টি দেশ একযোগে ভেনেজুয়েলার নিকোলা মাদুরোর সরকারের বিরোধিতা করায় দেশটির এসডিআর স্থগিত করেছিল আইএমএফ। আজমল আহমদি নিজেও টুইটে এ তহবিল নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তালেবানের হাতে যাতে এ অর্থ না যায় সে জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জেনেট ইয়েলেনের কাছে অনুরোধ করেছেন ১৮ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা।

খনিজ দিয়ে পারবে?

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তা ও ভূতত্ত্ববিদরা বলেছিলেন, আফগানিস্তানে লক্ষ কোটি ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে।

এই খনিজ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হলেও সেটা সংগ্রহ করা ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করার সক্ষমতা পেতে তালেবানের এখনও বহু দেরি। অস্ত্র দিয়ে ভূমি আর ভবনই দখল করা যায়, কূটনীতি নয়।

আফগানিস্তানের মাটির নিচে লোহা, তামা ও সোনা আছে ঢের। গুরুত্বপূর্ণ ধাতু লিথিয়ামের মজুতও সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হয়। যার কারণে তালেবানের সঙ্গে মিষ্টিমধুর মিটিং করতে দেখা গিয়েছিল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

কাজ করতে যাও!

এ প্রজন্মের তালেবানরা আবার অর্থনীতির জ্ঞান রাখে ভালো। প্রেসিডেন্ট ভবন দখলে নেওয়ার পর একদিনও দেরি করেনি। মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে জানাচ্ছে, তারা যাতে ঘর থেকে বের হয়, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে শুরু করে। তা না হলে গত বিশ বছরের ঘা নাকি শুকাবে না।

৩৬ বছর বয়সী কাবুলের বাসিন্দা ওয়াসিমা রয়টার্সকে জানালেন, অস্ত্রধারী কয়েকজন তালেবান তার ঘরে আসতেই তিনি আঁতকে ওঠেন। ওরা তার বিস্তারিত তথ্য লিখে নিয়ে গেছে। বলে গেছে, তিনি যাতে একটি ত্রাণ সংস্থার হয়ে কাজ করেন। এমনকি ওরা তার বেতনও ঠিক করে দিয়ে গেছে।

কাবুল এখনও মরুভূমির মতোই সুনসান। কেবল বিমানবন্দরের দিকে ছুটে যাওয়া কিছু গাড়িই চলছে। দোকানপাটও সব বন্ধ। এ অবস্থা বেশিদিন চললে তালেবানরাও বিপদে পড়বে। তাদের কপালে এখনই চিন্তার ভাঁজ- অস্ত্র ছেড়ে না আবার ভেড়ার দড়ি ধরে টানাটানি করতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়