প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ০৪:৫০
কাউন্সিল দিয়ে দেশ চালাবে তালেবান! গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনাই হবে না
আফগানিস্তানকে ইসলামিক আমিরাত ঘোষণা
একটা কাউন্সিলের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তান পরিচালনার চিন্তা-ভাবনা করছে তালেবান। তবে এই পরিষদের ঊর্ধ্বে আরেকজন নেতা থাকবেন, যাঁর হাতে থাকবে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন সদস্য গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই আভাস দিয়েছেন।
|আরো খবর
এদিকে আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করেছে তালেবান। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির ১০২ বছর পূর্তির দিনে গতকাল টুইটারে এই ঘোষণা দেন তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।
বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে না ছাড়তেই এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নেয় তালেবান। এর মধ্যে গত রবিবার রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় কট্টর ইসলামপন্থী এই সংগঠন। ওই দিনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। বিদেশি কূটনীতিকদের পাশাপাশি দেশ ছাড়ছে অনেক আফগানও।
তালেবানের নেতৃত্বে নতুন সরকারের কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের যেসব জ্যেষ্ঠ নেতা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের একজন ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি। গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সদ্যোবিদায়ি সরকারের অধীনে থাকা সামরিক বাহিনীর অনেক সেনা সদস্য ও যুদ্ধবিমানের পাইলটদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছে তালেবান। নতুন একটি জাতীয় বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে এই চেষ্টা চালাচ্ছেন তালেবান নেতারা। তাঁদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, গত ২০ বছরে অনেক সেনা ও পাইলট তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন।
নতুন সরকারের কাঠামো নিয়ে ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা তালেবানের প্রথম সরকারের (১৯৯৬-২০০১) মতোই। ওই সময় একটা কাউন্সিলের মাধ্যমে পুরো দেশ চলত। কাউন্সিলের ঊর্ধ্বে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে ছিলেন তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর। ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমির তথ্যানুযায়ী, এবার সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হতে পারেন হায়বাতুল্লাহ আকুন্দজাদা। তাঁর ক্ষমতা থাকবে কাউন্সিল প্রধানের চেয়েও বেশি। কাউন্সিল প্রধানের মর্যাদা হবে প্রেসিডেন্টের সমান। মোল্লা ওমরের তিনজন ডেপুটি ছিলেন। তাঁরা হলেন—মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রভাবশালী নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ও তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদুল গনি বারাদার। এবারও তিনজন ডেপুটি নিয়োগ হতে পারেন।
আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক কোনো ব্যবস্থা থাকবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন হাশিমি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি নেই। আমরা এই ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনাও করব না। কারণ আফগানিস্তান চলবে শরিয়া আইনে। এটা পরিষ্কার।’ হাশিমি জানান, নতুন সরকারের রূপরেখা নিয়ে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে হাশিমিও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইসহ সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা চলছে, তাতে সমর্থন জানিয়েছেন দেশ ছেড়ে পালানো প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘রক্তপাত বন্ধ করতেই আমি দেশ ছেড়েছি।’ শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে দেশটির বিভিন্ন শহরে গতকাল তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এতে তালেবান যোদ্ধাদের গুলিতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্রের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি তালেবানেরও।
বিমানবন্দরে নিহত ১২ : কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ও আশপাশে গত রবিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তালেবানের এক কর্মকর্তা গতকাল এই তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এই ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে ও পদদলিত হয়ে। এর আগে রাশিয়ার গণমাধ্যমে জানানো হয়, বিমানবন্দর এলাকায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে মার্কিন সেনাদের গুলিতে।
সূত্র : রয়টার্স।