প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ২০:২১
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার
কচুয়ায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে রোগীরা অতিষ্ঠ
পরিপত্র মোতাবেক সরকারি হাসপাতালের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা যাবে না : সিভিল সার্জন

সরকারি হাসপাতালের আশপাশে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে কোনো ধরনের ক্লিনিক, প্যাথলজি বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন পরিপত্র থাকলেও বাস্তবে তা কোথাও মানা হচ্ছে না। এই চিত্র কচুয়া উপজেলায়ও বিদ্যমান।
|আরো খবর
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়ার জন্যে থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও যন্ত্রপাতি। নিয়ম আছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালুর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। এজন্যে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন মেনে প্রতিষ্ঠান খুলতে হয় । কিন্তু এগুলোতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করা হয়নি।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে চলছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোতে নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার, পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষিত নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ান। নাক, কান, গলা ও সার্জনসহ বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো থাকলেও নিয়মিত রোগী দেখতে বসেন না তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দিয়ে চলছে বিভিন্ন চিকিৎসা।
সরজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, পরিপত্র মোতাবেক সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটার বিশেষ ক্ষেত্রে আধা কিলোমিটারের মধ্যে প্রাইভেট কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি করা যাবে না। কিন্তু কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেইন গেইটের সামনে গড়ে উঠেছে ৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোতে স্থায়ীভাবে কোনো চিকিৎসক নেই। কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে এখানে চলে সব চিকিৎসা। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, এ সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রয়েছে দালাল সিন্ডিকেট। হাসপাতালের সামনে রোগী আসলেই ওই দালাল সিন্ডিকেট রোগীর পিছু নেয়। জরুরি বিভাগ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের টেনেহিঁচড়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
রোড এক্সিডেন্টে আহত রোগী খোশনেহার ও আলামিন বলেন, আমরা সাচার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে দুটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হই। আমার মায়ের হাতের এক্স-রে দিয়েছে । ছোট ভাতিজা রাবির বিভিন্ন স্থানে চামড়া উঠে গেছে। আমি তাকে নিয়ে বসে আছি। মাকে নিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে বের হতে না হতেই আমাদের পিছু নেয় বেশ ক’জন দালাল। এর মধ্যে একজন নিয়ে গেলো আব্দুল হাই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে একটি পরীক্ষার বদলে দুটি পরীক্ষা করিয়েছে বলে টাকা নিয়েছে।
মেঘদাইর গ্রামের ছোট্ট শিশু ইরফানের বাবা কাইয়ুম অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ১২ মার্চ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার ছেলের চিকিৎসার জন্যে জরুরি বিভাগে যাই। জরুরি বিভাগ থেকে যে স্লিপটি দিয়েছে সেখানে ডাক্তারের কোনো স্বাক্ষর নেই। পরীক্ষা দিয়েছে ২টা। কিন্তু সানসাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার পর পরীক্ষা করেছে ৬টি।
ভর্তিকৃত একজন রোগী শাহিনুর জানান, ডাক্তার যখন রাউন্ডে আসেন তখন পরীক্ষা দেয় ১/২টা। মনোয়ারা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে তারা বলে ৩/৪ টা করাতে হবে। তখন বাধ্য হয়েই করতে হয়। তিনি বলেন, যত বেশি পরীক্ষা করাতে পারে ডাক্তার ও দালালরা তত বেশি কমিশন পান।
সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী ক্ষোভের সাথে জানান, হাসপাতালে সেবা নিতে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের বসে থাকতে হয়। ডাক্তাররা সঠিক সময়ে আসেন না। আসলেও সঠিকভাবে চিকিৎসা দেন। কিছুক্ষণ পর পর হাসপাতালের চেম্বারে তারা রোগীদের বসিয়ে হাসপাতালের সামনের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতে চলে যান। প্রাইভেটভাবে ভিজিট দিয়ে যখন সেবা নেই তখন ভালোভাবে চিকিৎসা দেন তারা।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সোহেল রানার সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দীন এসব বিষয়ে বলেন, পরিপত্র মোতাবেক সরকারি হাসপাতালের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা যাবে না। নির্ধারিত সীমানার বাইরেও তৈরি করতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পৌরসভার লাইসেন্স অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিবছর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নবায়ন করা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। দালালদের বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে দালাল নির্মূল করতে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।