প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২১, ০০:০০
চুল পড়া রোধে করণীয়
ডাঃ ফারহানা মোবিন
চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল ঝরে যায়। তখন ঘটে সৌন্দর্যহানি। আসুন, জেনে নিই চুল পড়ার কারণ ও তার প্রতিকার।
চুল পড়ে যাওয়ার কারণ
* ভেজাল খাবার, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী, মনোদৈহিক সমস্যা, মানসিক অশান্তি, গভীর রাত জেগে থাকা, সঠিক সময়ে খাবারের অভাব, পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও পুষ্টিকর খাবারের অভাব।
* অতিরিক্ত রোদের তাপে কাজ, প্রচুর পরিমাণে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার, চুলে রঙ করা, মাত্রাধিকবার রিবন্ডিং এবং সঠিকভাবে চুলের পরিচর্যার অভাব।
* বড় কোনো অপারেশনের পরে রক্তশূন্যতা বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্যেও চুল পড়ে। ভেজা অবস্থায় চুল বাঁধা, চুল আঁচড়ানোর অভাব, চুলের ধরন না বুঝে মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করার জন্যেও চুল উঠে যায়।
* টাকা বাঁচানোর জন্যে বাজারের খোলা তেল, রঙ, শ্যাম্পু ব্যবহার করা।
* অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ, শাকসবজি, আঁশজাতীয় খাবারে অনীহা, রক্তে চিনির পরিমাণ, রক্তচাপ, হরমোনের মাত্রা সঠিক না থাকলেও চুল পড়ে।
* বড় কোনো অপারেশনের পর দেহে রক্তের পরিমাণ কমতে পারে। ক্যান্সারের রোগীদের কেমোথেরাপি দেয়া হয়। কেমোথেরাপির পরও চুল ঝরে যায়। গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মদান, মাতৃদুগ্ধদানকালে সঠিক পরিমাণে খাবার, বিশ্রাম, পুষ্টির অভাবে চুল পড়ে।
* পারিবারিক বা বংশগত কারণে পুরুষ মানুষের মাথায় টাক পড়ে। মনোদৈহিক সমস্যা, পরিবেশদূষণ, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এই অবস্থার জন্যে দায়ী। আর রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয়স্বজনদের চুলের গঠন অনুযায়ী আমাদের চুল গজানো ও পড়ে যাওয়াটা নির্ভর করে অনেকাংশে।
* অতিরিক্ত ব্যায়াম, হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ, হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, এই কারণগুলোও চুল পড়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী।
* বাজারে বিভিন্ন রকম ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল পাওয়া যায়। চুলের বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্যে এসব খেলেও (চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া) অনেকের চুল পড়ে। কারণ সব ওষুধ সব বয়সের মানুষের জন্যে নয়।
* মাসিক ঋতুস্রাব ও মেনোপোজ (মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া) হওয়ার সময়েও অনেক নারীর প্রচুর চুল পড়ে।
চুল পড়া রোধে করণীয়
* নিয়মিত প্রায় প্রতিদিন দুই লিটার পানি, প্রচুর পরিমাণে সবুজ ও হলুদ শাকসবজি, শরীরে রক্ত তৈরি হয় এমন ধরনের খাবার খান। দুধ ও দুধের তৈরি খাবারে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম। দেহের গড়ন ও ওজন বুঝে পুষ্টিকর খাবার খান। চুলের পুষ্টির জন্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার জরুরি।
* নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করুন। চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, তেল বা জেল ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত রোদ ও ধুলাবালি পরিহারের জন্যে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন এবং ধুলা দূর করার জন্যে খোলা রাখার পরিবর্তে চুল বেঁধে রাখুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভনিরোধক, যৌনবর্ধক ওষুধ খাবেন না। সর্বদা প্রফুল্ল থাকুন। রক্তে চিনির মাত্রা, রক্তচাপ, ওজন, কোলেসটেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেকআপ করান। এতে লুকানো অনেক রোগ ধরা পড়বে। দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যে কোনো অঙ্গ সার্বিকভাবে কাজ করতে না পারলে চুল পড়ে যেতে পারে (উপসর্গ বা লক্ষণ হিসেবে।)
* প্রার্থনা, ধ্যান বা মেডিটেশনে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর বিশ্রাম হয়। ফলে চুল পড়া কিছুটা কমে। আর অবশ্যই নিজের দেহের অবস্থা বুঝে পরিশ্রম করুন ও খাবার খান।
* বড় কোনো অপারেশন, গর্ভাবস্থায়, মাতৃদুগ্ধদানকালে, ছাত্রাবস্থায়, খেলোয়াড় ও অতিরিক্ত দৈহিক পরিশ্রমকারীরা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল (সবুজ ও হলুদ ফল) বেশি করে খাবেন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]