শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২১, ০০:০০

রক্তে কোলেস্টেরল : কারণ ও প্রতিকার

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

অনলাইন ডেস্ক
রক্তে কোলেস্টেরল : কারণ ও প্রতিকার

কব্জি ডুবিয়ে মাংশ খাওয়া বাঙালি বাড়ির গোয়ালের গরুর এক-দেড় লিটার দুধ সাবাড় করতে না পারলে এক সময় নিজের পৌরুষের জন্যে তা হানিকর মনে করেছে। কিন্তু যতোই চিকিৎসাব্যবস্থা আধুনিক হতে শুরু করলো ততোই সেই পৌরুষেয় মানুষকে পেয়ে বসলো রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ভীতি। আগেকার দিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও দুর্বলতার জন্যে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রার রক্তমান নির্ণয় করা সম্ভব হতো না। ফলে স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাকজনিত মৃত্যুগুলো হয়ে উঠতো আলগা বাতাসে মৃত্যুর সান্তনামূলক ব্যাখ্যা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার বদৌলতে আজ আমরা জানতে পেরেছি, কোলেস্টেরলের উচ্চ রক্তমানই এসব রোগীর নিরব ঘাতক।

কোলেস্টেরল কী

কোলেস্টেরল এক ধরনের মোম-সদৃশ চর্বিবিশেষ, যা রক্তে প্রবাহিত হয়ে অতিমাত্রাজনিত কারণে জমাট বেঁধে প্ল্যাক তৈরি করে এবং রক্তনালীর গতিপথ আটকে দেয়। কোলেস্টেরল লাইপোপ্রোটিন জাতীয় প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত হয়ে তৈরি করে হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রেটিন যা এইচডিএল নামে পরিচিত। এটাকে ভালো কোলেস্টেরল বলে। কারণ এরা রক্ত হতে ঝুঁকিপূর্ণ কোলেস্টেরলকে অপসারণ করে। ভিএলডিএল বা ভেরি লৌ ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন আছে যারা খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি ট্রাই গ্লিসারাইড নামে বিশেষ ধরনের কোলেস্টেরল আছে যা আমাদের দেহের জন্যে অতিমাত্রায় হলে ক্ষতিকর।

কোষের স্বাভাবিক কাজের জন্যে স্বাভাবিক মাত্রার কোলেস্টেরল প্রয়োজন। কিন্তু এর বেশি হলেই তা ক্ষতিকর। রক্তে টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ হতে ২০০ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার রক্ত। এর ওপরে গেলেই তা শরীরের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তেমনিভাবে ট্রাই গ্লিসারাইডের স্বাভাবিক মান ১৫০ মিগ্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্ত, এইচডিএলের মাত্রা ৪০ হতে ৬০ মিগ্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্ত, যা এর চেয়ে যতো বেশি হবে ততো বেশি ভালো। ভেরি লৌ ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৩০ গ্রাম এর কম থাকে।

বেশি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য

ডিমের কুসুম, লাল মাংশ যেমন : গরু-খাসীর মাংশ, বড় বড় চিংড়ি, পনির ও ঘনীকৃত দুগ্ধজাত খাদ্য, নারকেল ইত্যাদি।

কম কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য : বিভিন্ন রকমের ফল, শাক-সবজি, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল প্রভৃতি।

অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ক্ষয়ক্ষতি

রক্তনালীর রক্তসংবহন ক্ষমতা হ্রাস করে, বিভিন্ন অংগে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, হার্টঅ্যাটাক হয়, বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা হয়, শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি তৈরি হয়। ব্রেইন স্ট্রোক হয়। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল যৌন সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

কোলেস্টেরলের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা

অতিরিক্ত মেদবহুলতা, বিশেষত যাদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) ইনডেক্স তিরিশ এর বেশি, যাদের শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যেস কম, যারা ধূমপায়ী ও অ্যালকোহল সেবনে অনিয়ন্ত্রিত, যাদের ডায়বেটিস আছে, উচ্চ রক্ত চাপের রোগী ও যাদের হৃদরোগ আছে... এ ধরনের মানুষগুলো কোলেস্টেরলের বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হতে বাঁচার উপায়

শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। দেহের ওজন বডি-মাস ইনডেক্স অনুযায়ী কমিয়ে আনতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করে দিতে হবে। অতিরিক্ত লবণ ও চিনি পরিহার করতে হবে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মানসিক চাপ হতে মুক্ত রাখতে হবে নিজেকে। পর্যাপ্ত বিনোদনের মাধ্যমে মনোদৈহিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে। হেলদি ডায়েট গ্রহণ করতে হবে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ঔষধ সেবন

আজকাল বাজারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর বিভিন্ন ঔষধ এসেছে। এর মধ্যে অ্যাটরোভাস্টেটিন, রসুভাস্টেটিন উল্লেখযোগ্য। আবার রক্তে অতিরিক্ত ট্রাই গ্লিসারাইড কমাতে বিভিন্ন লিপিড লোয়ারিং এজেন্ট (যেমন : লিপিরেড ক্যাপস্যুল) বাজারে প্রচলিত আছে। রক্তে এইচডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধিতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও ক্যাপস্যুল আকারে বাজারে পাওয়া যায় যা নিরাপদে সেবনযোগ্য।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর

ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়