প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
ন্যাচারাল থেরাপি
ক্যান্সার প্রতিরোধে আকুপ্রেশার চিকিৎসা
অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন
আমাদের শরীর দুভাবে রোগাক্রান্ত হয়। জীবাণু দ্বারা আক্রন্ত হয়, আবার শরীরের কোনো অঙ্গে সমস্যা হলে তা কিছু লক্ষণ (সংকেত) প্রকাশ করে। একেও আমরা রোগ বলে জানি। যেমন সর্দি-কাশি হলো লিভারের সমস্যার সংকেত, হাত-পা ফুলে যাওয়া কিডনীর সমস্যার সংকেত। ক্যান্সার হলো কোনো অঙ্গের সমস্যার শেষ সংকেত।
|আরো খবর
কোনো অঙ্গের সংকেতগুলোকে ক্রমাগত অবহেলা করা : আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এক একটি যন্ত্র সদৃশ্য। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় অথবা এর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে তা একের পর এক সংকেত দিতে থাকে। এই সংকেতগুলো ক্রমাগত অবহেলা করতে থাকলে এক সময় তা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত ধুমপান ও মাদক সেবন ফুসফুস, অতিরিক্ত জর্দা সেবন ও অধিক গরম চা, কফি পান গলায়, অধিক পরিমাণে চা, কফি পান করা এবং অধিক ভোজন পাকস্থলি ও অন্ত্রে এবং ক্রমাগত কোস্টকাঠিন্য মলাধারে (কোলন) ক্যান্সারের মূল কারণ হতে পারে।
আবার মেয়েদের গোপন অঙ্গের অবহেলা, অযত্ন এবং যৌন উত্তেজনা দমন করে রাখার কারণে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। একইভাবে পুরুষের যৌন উত্তেজনা দমন এবং অতিরিক্ত যৌনক্রিয়া প্রোস্টেট ক্যান্সারের মূল কারণ হতে পারে।
যেভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সূত্রপাত হয় : প্রতিদিন আমাদের দেহে অসংখ্য কোষ পুরান ও অকেজো হয়ে যায়। একে নিয়ন্ত্রণ করা এবং মৃত কোষগুলো দেহ থেকে বের করে দেয়ার কাজটি লসিকা গ্রন্থি করে থাকে। আবার মৃত কোষের জায়গায় নতুন কোষ তৈরি করার কাজটি সম্পাদন করে প্লিহা। যখন কোন অঙ্গের সংকেতগুলো ক্রমাগত অবহেলা করা হয়। তখন ঐ অঙ্গে নতুন কোষ উৎপাদন ক্রিয়া ধীরগতিসম্পন্ন হয় সেই সাথে পুরাতন কোষ অপসারণ ক্রিয়া বেড়ে যায়। ফলে প্লিহা ও লসিকা গ্রন্থির চাপ বেড়ে যায় এবং দেহে বিষাক্ত টক্সিন জমা হতে শুরু করে। শুরুতে কোন সমস্যা দেখা না দিলেও ধীরে ধীরে দেহের মধ্যে মারাত্মক অনভিপ্রেত কোষ বৃদ্ধি (Tumor) ঘটে। ইতিমধ্যে দেহের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গে এই বিষ জমা হতে শুরু করে। এই বিষ অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হয়ে তা একটি নলের আকার ধারণ করে। তখন দেহে নতুন কোষ উৎপাদন ক্রিয়া খুব ধীরগতিসম্পন্ন হয় এবং দেহ থেকে পুরাতন কোষ অপসারণ ও পুঁজ উৎপাদন রোধ করতে লসিকা গ্রন্থিকে অধিক কাজ করতে হয়। ফলে লসিকা গ্রন্থি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং ১৬নং বিন্দুতে চাপ দিলে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। যেহেতু গ্রন্থিগুলো অভ্যন্তরীণভাবে যুক্ত সুতরাং এই গ্রন্থির সাথে অন্যান্য গ্রন্থিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা সময় এমন হয় যে গ্রন্থিগুলো প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসণের পরিবর্তে বিষ নিঃসরণের শুরু করে দেয় এবং আক্রান্ত স্থানে নলের সংখা বাড়তে থাকে। এই সময় দেহের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পরিবর্তন শুরু হয় যেমন : দুঃসহ মাথা ব্যথা, গলার স্বর পরিবর্তন, দেহের দাগগুলোর রং পরিবর্তন, ক্রমাগত জ্বর এবং হজম ক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি। ফলে দেহের ওজন দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে এবং রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরা হয়।
আমাদের দেহের রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ ও রোগ নিরাময়ে আকুপ্রেশার আল্লাহ তা’আলার এক বিস্ময়কর দান। কোনো অঙ্গে সমস্যা হলেই তা তার সুঁইচের মাধ্যমে আমাদেরকে তা জানিয়ে দেয়। কোনো রকম ঔষধ ব্যবহার ছাড়াই আকুপ্রেশারের সাহায্যে আমরা তা নিরাময় করতে পারি।
লসিকা গ্রন্থি বিন্দুর সাথে শরীরের কোনো অঙ্গের বিন্দুর অসহ্য ব্যথা হলেই বুঝতে ঐ অঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। যেমন মস্তিষ্ক ১ থেকে ৫; লিভার ২২ ও ২৩; ফুসফুস ৩০; গলা ৬; অন্ননালী ৬ ও ২৭; পাকস্থলি ২৭; ক্ষুদ্রান্ত্র ১৯; বৃহদন্ত্র ও মলাধার (কোলন) ১০ ও ২০; জরায়ু ১১ থেকে ১৩; প্রোস্টেট ১১, ১২ ও ১৪; রক্ত ৩৭; হাড় ৯ ও ৩৭ এবং স্তন খই অথবা জই ইত্যাদি বিন্দুর সাথে লসিকা গ্রন্থির বিন্দুর অসহ্য ব্যথাই ঐ অঙ্গের ক্যান্সারের পূর্বাভাস।
চিকিৎসা : ক) প্রতিদিন সকালে নাভীচক্র ঠিক করে দিন।
খ) দেহ থেকে টক্সিন বের করার জন্য সপ্তাহে একদিন আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঢুঁস দিন।
গ) যদি আক্রান্ত স্থানে নল/গাঁট হয়ে যায়। এই নলের উপর গরম সেঁক দিন।
ঘ) প্রতিদিন সকালে ও রাত্রে দু কাপ করে সবুজ রস পান করতে দিন এবং প্রতি রাত্রে এক গ্লাস তাজা ফলের রস পান করতে দিন।
ঙ) আক্রান্ত স্থানে ১০ মিনিট করে দিনে দুবার নীল আলোর থ্যারাপি দিন।
চ) সকল অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর বিন্দু (৩, ৪, ৮, ১১, ১৬, ২৫, ২৮ ও ৩৭নং) হজমশক্তি বাড়ানোর জন্যে ২২, ২৩ ও ২৭নং বিন্দু, আক্রান্ত অঙ্গের বিন্দু এবং ২৬নং বিন্দুতে দিনে তিনবার চিকিৎসা করেন।
জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ১ লিটার হালকা গরম পানিতে ৪/৫ ফোঁটা তরল অ্যান্টিসেপটিক ঔষধ মিশিয়ে ঐ পানি যোনিপথে ঢুস দিন।
ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপরের চিকিৎসার সাথে থ্যালাসেমিয়ার ৬ ও ১১নংয়ে বর্ণিত চিকিৎসা করুন। (চলবে)
অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]