প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দেহের প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম
দেহের প্রয়োজনে বিভিন্ন মিনারেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট যেমন আছে তেমনি আছে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। ক্যালসিয়াম আমাদের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। যে সকল পুষ্টি উপাদান খুব কম পরিমাণে লাগে সে সব পুষ্টি উপাদানই হলো আমাদের জন্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হিসেবে ক্যালসিয়াম আমাদের দেহ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেহে প্রতি লিটার রক্তে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৮.৫-১০ মিগ্রা এর মতো। এর কম হলে বলা হয় হাইপোক্যালসেমিয়া এবং বেশি হলে বলা হয় হাইপারক্যালসেমিয়া।
|আরো খবর
দেহে ক্যালসিয়ামের মান নিয়ন্ত্রণকারী অনালগ্রন্থি হলো প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি যা থেকে প্যারাথরমোন নিঃসরণ হয়।
ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে দুধ, ডিম, মাছ,মাংস, লিভার ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার উল্লেখযোগ্য। এছড়াও মুড়ি, মৌরি প্রভৃতি খাদ্যেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমাদের দৈনিক বারোশ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা রয়েছে যা গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে আরো বেশি।
ক্যালসিয়াম আমাদের দেহে হাড় ও দাঁত গঠনে এবং মাংশপেশির উপাদান হিসেবে অপরিহার্য। হৃদ্-পেশিতে ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের কারণে দেহে অ্যাকশন পোটেনশিয়াল তৈরি হয়। হৃদপেশির সংকোচনে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অপরিহার্য। কিডনির স্বাভাবিক ক্ষমতা বজায় রাখতে গেলেও ক্যালসিয়াম আবশ্যক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম আমাদের দেহে রক্তক্ষরণ রোধ করে এবং রক্ততঞ্চনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের রিকেটস্ রোগ হয় যাতে পায়ের নি¤œাংশ তথা টিবিয়া-ফিবুলা বাইরের দিকে ধনুকের মতো বেঁকে যায়। এর পাশাপাশি রিকেটস্ রোজারি নামে বুকের পাঁজরাস্থিতে নডিউল দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ঘাটতিতে হাড় ছিদ্রালু হয়ে ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং হাড়ে চিড়্ ধরে। বড়দের অস্টিওম্যালেশিয়া নামেও একটি রোগ হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাবে খিঁচুনি রোগ বা টিটেনি হতে পারে। এ ছাড়াও মাংশপেশি ও হৃদপেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। চলনে অবসন্নতা এবং হাতেপায়ে ঝিম্ ঝিম্ অনুভূত হয়।
দেহে ক্যালসিয়ামের পূর্ণতা বজায় রাখার জন্যে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট দরকার হয়। বাজারে ক্যালসিয়াম ওরোটেট, কার্বনেট, ল্যাকটেট, সামুদ্রিক শৈবালের উৎস হতে পাওয়া ক্যালসিয়াম, প্রবালের উৎসজাত ক্যালসিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা দৈহিক প্রয়োজন অনুয়ায়ী সেবন করা যায়। ক্যালসিয়াম ওরোটেট দেহের পরিপাকতন্ত্র হতে সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়। শতকরা পঁচানব্বই ভাগ ক্যালসিয়াম ওরোটেট আকারে শোষিত হয়। পরিপাকতন্ত্র হতে ক্যালসিয়াম সাইট্রেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে শোষিত হলেও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আকারে শোষিত হতে গেলে পর্যাপ্ত এসিড নিঃসরণের প্রয়োজন হয়, যা কেবল খাবার গ্রহণের সাথে সাথেই পাওয়া যায়।
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সেবন করলে পেটে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, হৃদপেশির অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। শরীরের তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ ক্যালসিফিকেশন হয়। কিডনিতে পাথর হতে পারে।