রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

পাহাড়চূড়ায় বুদ্ধের চোখ
অনলাইন ডেস্ক

মন্দিরে ঢুকতেই দেখি প্রচুর বানরের ঘোরাঘুরি। বুঝলাম, এজন্যেই এ মন্দিরকে অনেকে বানর মন্দির বলেন। বিশেষ করে পর্যটকের কাছে এ মন্দির বানর মন্দির নামেই বেশি পরিচিত। তবে এ বৌদ্ধ মন্দিরটির পোশাকি নাম স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপা। আর এটি ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

বিকেলের দিক হওয়ায় মন্দির প্রাঙ্গণজুড়ে পুণ্যার্থী আর পর্যটকের বেশ ভিড়। সেই ভিড় ঠেলেই আমরা প্রবেশ করি। মূল মন্দিরে যাওয়ার আগের প্রবেশ প্রাঙ্গণে আরও কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির আছে। সেই সঙ্গে বাঁধা আছে বিশাল একটি ঘণ্টা। এর পাশেই আছে ছোট্ট একটি পুকুর। বিশ্বশান্তি নামের এ পুকুরের মাঝখানে আছে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। আর মূর্তির পায়ের কিছুটা দূরে একটা গ্লোব আছে। গ্লোবের গায়ে লেখাথ ওয়ার্ল্ড পিস বা বিশ্বশান্তি। গৌতম বুদ্ধের এ মূর্তির পায়ের কাছে দেখি অনেক পুণ্যার্থী নেপালি রুপির কয়েকটা ছুড়ে দিচ্ছেন এবং এটা তারা করেন পুণ্যের আশায়।

মূল মন্দিরে যাওয়ার জন্য আমরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠি। পাহাড় কেটে এ সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। বেশ দীর্ঘ সিঁড়ি। মূল মন্দিরের আশপাশে আরও অনেক ছোট ছোট মন্দির আছে। আর মন্দিরের পাশে আছে অনেক দোকান। এসব দোকানে সাজানো নানা ধরনের অ্যান্টিক, গহনা, পর্যটন-স্মারকসহ নেপালের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্য। রেস্টুরেন্টও আছে কিছু। সব জায়গাতেই আছে পুণ্যার্থী আর পর্যটকের ভিড়।

ইতিহাস ঘেঁটে পাই, এ মন্দির নেপালের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর একটি। সেজন্যে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের কাছে এ মন্দির পবিত্র স্থান। আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপাল বলেও এ মন্দির বৌদ্ধদের কাছে পুণ্যের তীর্থস্থান। নেপালের গোপাল রাজাবংশাবলির মতে, রাজা মানদেবের (৪৬৪-৫০৫ খ্রিস্টাব্দ) দাদা এ মন্দির তৈরি শুরু করেন। এছাড়া এ মন্দিরে খুঁজে পাওয়া একটি পতিত নামফলক থেকে জানা যায়, সেখানে রাজা মানদেব কর্তৃক কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদিও রাজা অশোক তৃতীয় শতাব্দীতে এ স্থান পরিদর্শন করেন এবং একটি মন্দির তৈরি করেন, যা পরে ধ্বংস হয়ে যায়।

মূল বৌদ্ধ মন্দিরটির কিছুটা পাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার স্থান আছে। ফলে দুই ধর্মের পুণ্যার্থীদের কাছেই এ মন্দির বিশেষ স্থান। এছাড়া বহু হিন্দু রাজা বিভিন্ন সময় এ মন্দির পুনর্নির্মাণে অর্থলগ্নি করেছেন, যার মধ্যে কাঠমা-ুর প্রতাপশালী রাজা প্রতাপ মাল্লাও আছেন, যিনি ১৭ শতাব্দীতে মন্দিরের পূর্বদিকের সিঁড়ির রাস্তাটি সংস্কার করেন। অবশ্য এর পর আরও কয়েকবার এ মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পেও এ মন্দিরের কিছুটা ক্ষতি হয়। তারপর আবার সংস্কার করে বর্তমান অবস্থায় আনা হয় মন্দিরটি।

মন্দিরটি মূলত একটি গম্বুজ দ্বারা গঠিত। গোলাকার একটি ইট-সিমেন্টের তৈরি গম্বুজের ওপর চতুর্ভুজাকৃতি চূড়া উঠে গেছে। সোনালি রঙের এ চূড়া বিভিন্ন ধাতবের তৈরি। এ চূড়ার প্রথম কিছুটা অংশ সমান। এ সমান অংশের চারপাশে দুটি করে চোখ একটি করে নাক আঁকা আছে। বলা হয়, বুদ্ধের চোখ ও নাক। এ চোখ ও নাক বিশেষ কিছু বাণীর প্রতীক। তারপর ১৩টি ধাপে অনেকটা পিরামিডের মতো চূড়া ওপরে উঠে গেছে। এ ধাপগুলোও বুদ্ধের বিশেষ বাণীর প্রতীক। এর পরের অংশ পদ্ম, তারপরের অংশ ছাতা এবং চূড়ার শেষ বিন্দু বা শেষ অংশটুকুরও আলাদা বাণীর প্রতীকী বহন করে।

স্তূপা বা মন্দিরটির চারপাশে পাঁচ বুদ্ধের মূর্তিও আছে। এছাড়া মূল মন্দিরের পাশে কয়েকটি মন্দির আছে, যেগুলো পুরোটাই বিভিন্ন ধাতবের তৈরি। আমরা ঘুরে ঘুরে এসে দাঁড়াই মন্দিরের একটি পাশে, যেখান থেকে কাঠমা-ু শহরটিকে দেখা যায় পাখির চোখে। এ ভিউটা সত্যিই দারুণ। আর এ ভিউ-এর জন্যে এখানে প্রচুর পর্যটকের ভিড়ও আছে। এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার ঘুরতে শুরু করি। সত্যিই মন্দির প্রাঙ্গণজুড়ে অসংখ্য বানরের ঘোরাঘুরি। এরা বেশ শান্তভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পর্যটক বা পুণ্যার্থী কাউকে বিরক্ত করছে না।

মন্দিরের প্রায় সর্বত্র আছে প্রার্থনার হুইলার। পুণ্যের আশায় পুণ্যার্থীরা এটা ঘোরান। ড্রাম আকৃতির এ হুইলার কাঁসা-পিতল বা বিভিন্ন ধাতবের তৈরি। প্রতিটি হুইলারের গায়ে বৌদ্ধ ধর্মের বাণী খোদাই করা। ঘুরে ঘুরে আমরা আসি মন্দির প্রাঙ্গণের জাদুঘরে। এ জাদুঘরে প্রাচীন আমলের কষ্টিপাথর এবং পিতলের তৈরি বুদ্ধের বিভিন্ন মূর্তি আছে। সেই সঙ্গে আছে প্রাচীন আমলের নানা নিদর্শন। এছাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে একটি লাইব্রেরিও আছে।

ঘুরতে ঘুরতে আবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি মন্দিরের গেটে। গেটের কিছুটা দূরে ছোট্ট একটি রেস্টুরেন্টে বসি দুপুরের খাবার খেতে। রেস্টুরেন্টের মালিক মধ্যবয়স্ক মহিলা দুই প্লেট গরম গরম ফ্রায়েড রাইস এনে আমাদের সামনে দেন।

ঠাণ্ডা পড়েছে, আবার ক্ষুধাও লেগেছে বেশ। তাই শেষ বিকেলের এ গরম গরম ফ্রায়েড রাইস অমৃত মনে হলো। খাবার খেয়ে চা চাই। দু কাপ ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে হাজির হলো এক তরুণী। রেস্টুরেন্টের মালিকের মেয়ে। মূলত ছোট্ট এ রেস্টুরেন্ট মা-মেয়ে মিলেই চালান। চা শেষ করে ট্যাক্সিতে উঠি পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়