প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। তাদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ, যারা সব সময় আর্থিক সংকটে ভোগে। কিন্তু বেকার হওয়া সত্ত্বেও বিশাল এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই প্রতিদিন মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে প্রচুর অর্থের অপচয় ও মূল্যবান সময় নষ্ট করে। অথচ নিজস্ব উদ্যোগে মাত্র এক সপ্তাহ কিংবা স্বল্প খরচে এক-দুই মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওয়ার্ড, এক্সেল, ইন্টারনেট এগুলো শিখে ডাটা এন্ট্রি কাজে নামতে পারেন
অনেকেই মনে করেন, ডাটা এন্ট্রি মানে টাইপিং করা। আসলে তা নয়। ফ্রিল্যান্সিং জগতে ডাটা এন্ট্রি বলতে সফটওয়্যারের সাহায্যে কীবোর্ড কিংবা ভয়েসের মাধ্যমে কম্পিউটারে তথ্য ইনপুট দেওয়াকে বোঝায়। অনেক ধরনের ডাটা এন্ট্রি আছে যেমন– টাইপিং, ফর্ম ফিলআপ, অনলাইন সার্ভে, কপি-পেস্ট, ক্যাপশন তৈরি, ডাটা এডিটিং, ফরমেটিং, কারেকশন, ডাটাবেজ আপডেটিং, ওয়েবপেজ কিংবা ই-কমার্সে ডাটা এন্ট্রি, ক্যাপচা এন্ট্রি ইত্যাদি। এ রকম প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ প্রকারের ডাটা এন্ট্রি জব আছে। এই পেশায় খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই সমগ্র বিশ্ব থেকে ডাটা এন্ট্রির ক্যারিয়ার গড়া যায় খুব সহজে। আয় করা যায় বৈদেশিক মুদ্রা।
বর্তমান সময়ে প্রায় প্রত্যেকটি কাজই কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ফিজিক্যাল ডকুমেন্টকে কম্পিউটারে ডিজিটালি স্টোর করে ডাটাবেস তৈরি করা খুবই দরকারি একটি কাজ। কাজগুলো হলো– এক্সেল ডাটা এন্ট্রি, স্পেলিং চেকিং, পেপার ডকুমেন্টেশন, জব পোস্টিং, ট্রান্সলেশন, ডাটা কনভারশন, ডাটাবেজ ক্রিয়েশন ইত্যাদি। বিশ্বে ডাটা এন্ট্রির চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে, যা ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। ই-মেইল মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিংয়ের কাজে ডাটার প্রয়োজন হয়। সেজন্য দরকার হয় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইবার ও আপওয়ার্কে ডাটা এন্ট্রির অনেক কাজ আছে।
যে কোনো কোম্পানির সেলস, পারচেজ, কাস্টমার রিভিউ, ফিডব্যাক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ফাইল/ডাটাকে এক্সেলের মাধ্যমে ইনপুট দিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করতে হয়। এসব ডাটাবেজে আরও নতুন ডেটা সংযোগ করা, পরিবর্তন-পরিমার্জন করা, প্রয়োজনে কিছু হিসাব-নিকাশ ও গ্রাফ তৈরি করার চমৎকার অথচ সহজ প্রোগ্রাম হচ্ছে এক্সেল। এ ধরনের কাজের চাহিদাও বাজারে প্রচুর। ‘স্পেলিং চেকিং’ ডেটা এন্টি টাইপের একটি চমৎকার কাজ। আগে থেকেই লেখা আর্টিকেল, উপন্যাস, বই বা অন্যান্য টেক্সট কনটেন্টের বানান, শব্দ ইত্যাদি চেক করে দেওয়াই হচ্ছে স্পেলিং চেকিং। ‘পেপার ডকুমেন্টেশন’ ডাটা এন্ট্রির খুবই জনপ্রিয় কাজ। এখানে মূলত কাগজের মধ্যে প্রিন্ট আকারে হার্ড কপিতে যেসব ডেটা থাকে সেগুলোকে কম্পিউটারে টাইপ করে সফ্ট কপি (ডিজিটাল) বানিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে এমএস-এক্সেল, ওয়ার্ড, ওয়ার্ডপ্যাড, নোটপ্যাড ইত্যাদি এই ধরনের প্যাকেজ সফটওয়্যারের ব্যবহার জানলেই যথেষ্ট।
অনেক অনলাইন জব পোর্টাল রয়েছে, যেগুলোতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চাকরির বিজ্ঞাপনসহ নানা অনুসন্ধানী তথ্য সরবরাহ করে থাকে। আবার অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে যেগুলোতে প্রত্যেক দিন বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ নতুন নতুন খবর প্রকাশ করতে হয়। এগুলো সংগ্রহ এবং সময়মতো পাবলিস করাই হচ্ছে ‘জব পোস্টিং’। আবার ধরুন একটি পিডিএফ ফাইল রয়েছে যেটাকে হয়ত ওয়ার্ড ফাইলে কনভার্ট কিংবা একটি ইমেজকে ট্যাক্স আকারে বা টেক্সটকে ইমেজ আকারে পরিবর্তন করতে হবে। এভাবে একটি ফাইলকে অন্য একটি ফাইল ফরম্যাটে রূপান্তর করার কাজটিকে ‘ডাটা কনভার্সন’ বলা হয়। অনেক বড় বড় কোম্পানি এই ধরনের কাজ করার জন্য দক্ষ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর খুঁজে থাকে।
এই ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজে ভয়েস বা অডিও ফাইল থেকে ডাটা কম্পিউটারে টেক্সট হিসেবে টাইপ করতে হয়। অনেক সময় অন্যান্য ভাষায় থাকা ভয়েস ফাইলকে বদলে লোকাল ভাষায় পরিণত করা হয়। ভয়েস বা অডিও ছাড়াও এ রকম অনেক ডাটা এন্ট্রির কাজ রয়েছে, যেখানে কোনো অন্য ভাষায় লেখা বই, আর্টিকেল বা যে কোনো টেক্সট ফাইলকে অন্য একটি ভাষায় কনভার্ট করা হয়। এ ধরনের ডাটা এন্ট্রিকে বলা হয় ‘ট্রান্সলেশন’
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা দেশ ও জনস্বার্থে বিভিন্ন ধরনের জরিপ করে থাকে। যেমন– কোনো একটি দেশ, গ্রাম বা শহরে মোট কতটা পরিবার রয়েছে, পরিবারের লোকসংখ্যা, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজকর্ম, আয়-ব্যয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদির সমন্বয়ে ডাটাবেজ তৈরি করতে হয়। যা করা হয়ে থাকে ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ফিজিক্যাল নথিপত্র দেখে টাইপ করে কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য জমা/রেকর্ড করা হয়। এভাবে ফিজিক্যাল ডকুমেন্টস থেকে ডাটাগুলো ডিজিটাল রেকর্ড করার প্রক্রিয়াকে ‘ডাটাবেজ ক্রিয়েশন’ বলা হয়।
সুতরাং ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে অনেকটা ‘কপি-কাট অ্যান্ড পেস্ট’ এর মতো। যেহেতু প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বব্যাপী তথ্যের আদান-প্রদানের গতি ও পরিধি বেড়েই চলেছে, তাই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে ডাটা ম্যানেজমেন্টের জন্য কাস্টমাইজ সফটওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবসায়িক, প্রাতিষ্ঠানিক, ডিরেক্টরি, বিনোদন, ই-কর্মাসসহ নানা ধরনের ওয়েবসাইট। এসব কাজের জন্য প্রয়োজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। তাদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ, যারা সব সময় আর্থিক সংকটে ভোগে। কিন্তু বেকার হওয়া সত্ত্বেও বিশাল এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই প্রতিদিন মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে প্রচুর অর্থের অপচয় ও মূল্যবান সময় নষ্ট করে। অথচ নিজস্ব উদ্যোগে মাত্র এক সপ্তাহ কিংবা স্বল্প খরচে এক-দুই মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওয়ার্ড, এক্সেল, ইন্টারনেট এগুলো শিখে ডাটা এন্ট্রি কাজে নামতে পারেন। তবে ডাটা এন্ট্রির কাজে মূলত ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ বেশি। তাই কিছুটা ইংরেজি ভাষা বিশেষ করে টেকনিক্যাল ওয়ার্ডগুলো ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। ধৈর্য ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে অল্প শিক্ষিত হয়েও দৈনিক মাত্র তিন-চার ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর এভাবেই হতে পারেন আপনি একজন গর্বিত ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সার
লেখক : অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।