মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মোবাইলে সরকারি সেবার তথ্য সহজলভ্য হোক
অনলাইন ডেস্ক

ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের খবর বলছে, সেবার তথ্য গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ কম জানে। বিষয়টি খটকা লাগার মতো হলেও এটাই বাস্তব। এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, গ্রামের মানুষের পাড়া-প্রতিবেশী বা পারস্পরিক যোগাযোগ বেশি; অন্যদিকে শহরের মানুষ আত্মকেনিন্দ্রক। গ্রামের মানুষ একটা তথ্য জানলে তা অন্তত দশজনের কাছে প্রচার করে। শহরে ব্যক্তিগতভাবে এমনটা দেখা যায় কম। তবে তারা যেহেতু মোবাইল ফোন সেবার আওতায় থাকছে কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি তাদের কাছে সহজলভ্য, সেবার তথ্য শহরের মানুষেরই বেশি জানার কথা। তাদের সেবার তথ্য কম জানার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, সেবার তথ্যগুলো সেভাবে প্রচার-প্রসার কিংবা উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেই।

ব্যক্তি পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য ১১ জানুয়ারি সমকালে প্রকাশ হয়। সেখানে আমরা দেখছি, গ্রাম-শহর মিলিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনের আওতায় এলেও সরকারি সেবা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য তারা পাচ্ছে না। তথ্যসেবা দেওয়া ছাড়াও আরও নানা কাজে মানুষের কাছে পৌঁছাতে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রসঙ্গত, ৯০ শতাংশ এই ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বড়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এর অর্ধেকের মতো।

সরকারের সার্ভিসেস পোর্টাল, যেটি সেবাকুঞ্জ নামে পরিচিত সেখানে ৩৮৪টি সেবার তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আওতায় ভাতা, ঋণ, অনুদান, বিতরণ, পুনর্বাসন সেবার তথ্য যেমন রয়েছে, তেমনি কৃষকের উপকারী সেবা ও তথ্য এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মা-শিশুসহ সব ধরনের সেবার বিষয় বলা আছে। সরকার মানুষের জন্য এত সেবার আয়োজন করেছে, অথচ তা না জানার কারণে একদিকে সেবাপ্রত্যাশী বঞ্চিত হচ্ছে; না হয় কোথাও ঠকছে। যেমন ৪৫ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্মনিবন্ধনে কোনো ফির প্রয়োজন পড়ে না এবং ৫ বছরের পর নিবন্ধন করলেও ফি লাগবে ৫০ টাকা। এই তথ্যটি হয়তো অনেকেই জানেন না। যে কারণে অনেকেই এর কয়েক গুণ অর্থ দিয়ে জন্মনিবন্ধন করিয়ে থাকেন। এখানে অবশ্য সেবাগ্রহীতা বিষয়টির আধাআধি জানে। মানে সেবা সম্পর্কে জানে, হয়তো ফি সম্পর্কে জানে না। আবার সেবা যে আছে, সেটাও অনেকে জানে না। দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা রয়েছে। প্রথম অথবা দ্বিতীয় যে কোনো সন্তানের জন্য সরকার ৩৬ মাস একটি ভাতা প্রদান করে থাকে।

৯০ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী মানে প্রায় প্রতিটি পরিবারই এর আওতায় রয়েছে। ফলে সবার কাছে সরকারি সেবার তথ্য ফোনের মাধ্যমে পৌঁছানো খুব সহজ। বলাবাহুল্য, এখন মোবাইল ফোন একেবারেই সহজলভ্য। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই স্বল্প অর্থ দিয়ে যেমন কোম্পানির সিম কেনা যায়, তেমনি চার অংকের কম অর্থের বিনিময়েও সাধারণ মোবাইল ফোন সেট ক্রয় করা সম্ভব। সে জন্য এখন একজনকে একাধিক ফোন সেট ও বিভিন্ন অপারেটরের সিম একসঙ্গে ব্যবহার করতে দেখা যায়। সাধারণ মোবাইল বা ফিচার ফোনও এখন অনেক কাজের কাজি। কথা বলা, এসএমএস আদান-প্রদান ছাড়াও এফএম রেডিও চালানো কিংবা ছবি তোলা যায়। আর স্মার্টফোন হলে তো কথাই নেই। বিবিএসের আলোচ্য জরিপেই এসেছে, বর্তমানে স্মার্টফোনের ব্যবহার প্রায় ৩১ শতাংশ। স্মার্টফোনের সঙ্গে ইন্টারনেট থাকলে যে কেউ সেবার তথ্য জানতে পারে বটে। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে সব মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীই যাতে সেবার তথ্য সমানভাবে পায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন হলো-মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব গ্রাহক কীভাবে সরকারি সেবার তথ্য পাবে। এমন নয় যে, সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তর সবাইকে সেবার তথ্য দিয়ে ফোনে খুদেবার্তা পাঠাবে। ফোনেই সেবার তথ্যটি 'ইনবিল্ট' থাকা উচিত। সে জন্য প্রশাসন চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থাটি করতে পারে। *১২১# ডায়াল করে যেমন সংশ্নিষ্ট ফোন অপারেটরের সেবা সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা রয়েছে; এমন নির্দিষ্ট সংখ্যা ডায়াল করে বিনামূল্যে যেন সবাই সরকারি সেবার সব তথ্য পেতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন। এর বাইরেও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সেবার তথ্য প্রচার এবং ফোনে কীভাবে সেবার তথ্য জানা যায়, সেটিও প্রচার করা প্রয়োজন। ফোনের মাধ্যমে সহজে তথ্য জানার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ফির বিষয়ও সেখানে উল্লেখ থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, জাতীয় জরুরি সেবার জন্য ৯৯৯ নম্বরের হটলাইন জনপ্রিয় হয়েছে এবং এর মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই জরুরি সেবা চালু হওয়ার পর ৯৯৯-এ পাঁচ বছরে সোয়া চার কোটি কল এসেছে। একইভাবে ফোনে সরকারি সেবার তথ্য সহজে পাওয়া গেলে অনেকেই উপকৃত হবে।

সরকার ভাতা, ঋণ, অনুদান কিংবা অন্যান্য সেবা চালু করেছে নাগরিকের উপকারে। রাষ্ট্রের নিয়মিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় অনেকেই রয়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, যাদের প্রয়োজন নেই কিংবা সচ্ছল তারাও অনিয়মের মাধ্যমে ওইসব সেবা গ্রহণ করছে। সমাজের মধ্যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেন সরকারের এসব সেবা পেতে পারে সে জন্য প্রথমত তাদের কাছে তথ্য পৌঁছাতে হবে। সেবার তথ্য পেলে তারা সে অনুযায়ী আবেদন বা সেবা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। দেশের ৯০ শতাংশ লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করার মানে, এর মাধ্যমেই ওই শ্রেণির কাছে পৌঁছা সহজ হবে। সে জন্যই সেবার তথ্য মোবাইল ফোনে সহজলভ্য হওয়া জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেবা সহজ করার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ইতোমধ্যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। আগে ভাতা তুলতে গিয়ে উপকারভোগীকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। এখন মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই তারা ভাতা পেয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে সেবার তথ্য অপ্রতুল হওয়ায় প্রকৃতই যার প্রয়োজন, সে সেবাটি সম্পর্কে জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিংবা তার স্থলে যার কম প্রয়োজন, জানার কারণে সেই সুযোগটি সে পেয়ে যাচ্ছে। এই সংকট কাটানো ও সেবা সহজ করার জন্যই মোবাইল ফোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়