মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

বাঙালির স্বপ্ন পূরণের বাতিঘর
অনলাইন ডেস্ক

লাইট হাউজ বা বাতিঘর হচ্ছে এমন এক ধরনের সুউচ্চ মিনার আকৃতির দালান যা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আলো ফেলে সমুদ্রের জাহাজের নাবিককে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আমার বিবেচনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির আকাঙ্খা পুরণের বাতিঘর। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের এই নেত্রী পরিবার হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থা থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হন শেখ হাসিনা। স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভানেত্রী ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ছাত্রলীগ থেকে তিনি ইডেন কলেজের প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। শেখ হাসিনা ১৯৬৭ সালে ইডেন গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী। সেই সময় তিনি রোকেয়া হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যা করা হয়। কিন্তু ওই সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। পরম করুনাময়ের অশেষ কৃপায় তাঁরা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ভারত সরকারের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি। শেখ হাসিনা নির্বাসিত অবস্থায় দিল্লীতে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। দেশবিরোধী চক্রের ২১বারের হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান তিনি। দেশে ফেরার পরই ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা চালায় ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা। শেখ হাসিনার ওপর দ্বিতীয় হামলা হয় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারিতে, চট্টগ্রামে। ১৯৮৯ এর ১১ আগস্ট রাতে ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি বর্ষণ করে ও গ্রেনেড হামলা চালায়। ১৯৯১ এর ১১ সেপ্টেম্বর গ্রীনরোডে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কয়ারের নিকট সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার উপর গুলি বর্ষণ করা হয়। শেখ হাসিনাকে আরেকবার হত্যার চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায়। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্রকন্যাসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা সংবলিত ইমেইল আদান-প্রদানের খবর পাওয়া যায়।

২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তাকে হত্যাচেষ্টার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরের বছরও বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জঙ্গিরা সেখানে বোমা পুঁতে রাখে যা গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে। ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে সিলেট গেলে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে হুজি। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। ২০০২ সালেরই ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। শেখ হাসিনার ওপর পরবর্তী হামলা চালানো হয় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। ২০১১ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার এক পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানব বোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। পরের বছর ২০১৫ এর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদযানে যাওয়ার সময়ে কাওরানবাজারে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রাণ সংশয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে আগস্টের মিছিলে জঙ্গিগোষ্ঠী আত্মঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা চালায়। এতবার হত্যাচেষ্টার পরও তিনি দেশ সেবা থেকে বিরত হননি। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এই মহিয়সী নারী। তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দেশের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশের শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজাতে শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে শিক্ষা কাজকে সহজতর ও আধুনিক করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি স্কুলে আইসিটি ল্যাব চালু হচ্ছে। কম্পিউটার কোর্সকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার প্রয়াসে আইসিটি মেলা ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে স্কুলভিত্তিক। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে বিকাশমান করার লক্ষ্যে স্কুলভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখছে। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং গণতন্ত্রের বিকাশে তার অবদান অতুলনীয়। শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। শেখ হাসিনার সাহসিকতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে। বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এমন অবদানের কারণে এখন পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও খেতাবে ভূষিত হয়েছেন তিনি। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এমন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়ার এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। তিনি আমাদের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিশারী-আমাদের আশার বাতিঘর।

লেখক : উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়