প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
মানুষের জীবনাচরণ বা লাইফস্টাইল তার জীবনকে দিতে পারে দীর্ঘজীবিতা। একেক জনের জীবনাচরণ একেক রকম। ফলে স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাবও ভিন্ন। পেশাভেদেও জীবনাচরণ পাল্টে যেতে পারে। পাল্টে যেতে পারে স্বাস্থ্যের অবস্থা। বর্তমানে কোভিড-১৯-এর আক্রমণে বিশ্ব মহামারিতে আক্রান্ত হলেও হার্ট বা হৃদপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এখনো অধিক। প্রতি বছর পৃথিবীতে আঠার মিলিয়নের মতো রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, যা প্রায় সারাবিশ্বে রোগাক্রান্ত মানুষের বাৎসরিক হারের বত্রিশ ভাগ। হার্টের রোগ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখে সর্বদা। হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো সময় পায় না। প্রবাদে বলে, হার্টের রোগী নিজ পায়ে হেঁটে হাসপাতালে আসে আর লাশ হয়ে কাঁধে চড়ে বাড়ি যায়। তাই চল্লিশ বছর বয়সের পর বছরে অন্তত একবার করে হৃদপিণ্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেয়া উত্তম।
হার্টের রোগসমূহ
হার্টের দু ধরনের রোগ আমরা দেখতে পাই। এক ধরনের হার্টের রোগ হলো জন্মগত রোগ। এতে মায়ের পেট থেকে শিশু হার্টের জটিলতা নিয়ে জন্মায়। হার্টের চেম্বারের পর্দায় ফুটো, হার্টের রক্তনালী অসঙ্কোচনযোগ্য হয়ে দৃঢ় হয়ে যাওয়া, হার্টের ভাল্বে ফুটো হওয়া, হার্টে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত এক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এগুলোর জন্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
অন্য এক পদের হার্টের রোগ আছে যা জন্মের পর থেকে ব্যক্তি তার আচার-আচরণজনিত কারণে বাধিয়ে বসে। যারা ধূমপান করে, তারা হার্টের রক্তনালীর গতিপথ অভ্যন্তরীণভাবে আটকে যাওয়ায় ভোগে। আবার গরু-খাসী-শূকরের মাংস আহারে রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড নামে রক্ত-চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ছোট ছোট রক্তনালীগুলো রক্ত পায় না এবং তৎপরবর্তী হার্টের অংশে পঁচন ধরে ও হার্টের রক্ত ও অক্সিজেন স্বল্পতাহেতু হার্টঅ্যাটাক হয় যা বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। শারীরিক স্থুলতা এবং শারীরিক পরিশ্রমে অনীহার কারণে হার্টের ওপর রক্ত সঞ্চালনের একদিকে চাপ বাড়ে আবার অন্যদিকে শারীরিক পরিশ্রমহীনতায় রক্তনালীর অভ্যন্তরীণ অংশে ছিদ্রের ব্যাস কমে যায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ যেমন হয় তেমনি হার্ট ফেইলিওর বা হার্টের অসামর্থ্য তৈরি হয়। হার্টের তিন স্তরবিশিষ্ট দেয়ালের যে মধ্যের উর্বরতা স্তর আছে তাকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াম বা মাংশপেশির স্তর। হার্ট অক্সিজেন কম পেলে তা যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, রক্তচাপ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তেমনি, মাংশপেশির স্তরটি পঁচে যায়। কেউ কেউ রাগ-ক্ষোভ-উত্তেজনা ও উদ্বেগে ভুগে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। এতে রক্তচাপ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি হার্টের রক্তনালীতে তৈরি হয় প্ল্যাক। অতিরিক্ত চিনি-মিষ্টি তথা কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খেয়ে অনেকের ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্টের সমূহ ক্ষতি হয়। যারা পাতে আলগা লবণ খান, কাঁচা বা টালানো, তাদের রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং তারা হৃদপিণ্ডের জটিলতায় ভোগে।
হার্টকে ভালো রাখতে হলে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন পরিত্যাগ করতে হবে। উত্তজনা পরিহার, অনিদ্রা পরিহার ও লাল মাংস আহারে ইতি টানতে হবে। রাত জেগে টিভি দেখার বিষয়টি ত্যাগ করতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর আহারের অভ্যাস করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে হৃদপিণ্ডের রোগে ভুগছেন, তারা নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]