প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সারাদেশে বেড়েই চলছে। এ রোগ এখন শুধুমাত্র বয়ষ্কদের ক্ষেত্রেই নয় বরং কমবয়সীদের মধ্যেও এখন দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন বয়সের লোকজন আসছে। আর এটা হলে দ্রুতই মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
মানুষের মধ্যে অনিয়মিত জীবনধারণই হার্টের বিভিন্ন অসুখের কারণগুলোর অন্যতম। তাই আমাদেরকে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে হলে হতে হবে অত্যন্ত সচেতন। নিয়মিত ব্যায়ামসহ খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও সচেতন হতে হবে।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা এতো বাড়ছে যে, এজন্য নিয়মিত হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। জেনে রাখুন তেমনই কয়েকটি টেস্ট সম্পর্কে। যার মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনার হৃদয় সুস্থ আছে কি না-
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)
এই পরীক্ষায় হার্টের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। এটি হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ বনাম ভোল্টেজের একটি গ্রাফ তৈরি করে।
এই পরীক্ষায় ইলেক্ট্রোডগুলো ত্বকে স্থাপন করা হয়। ত্বকের সঙ্গে সংযুক্ত সেন্সরগুলো প্রতিবার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক সংকেতগুলো সনাক্ত করে।
করোনারি এনজিওগ্রাম
করোনারি এনজিওগ্রামে এক্স-রে ইমেজিং হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি দেখতে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত একটি ব্লকেজ পরীক্ষা করার জন্য করা হয়, যা হৃৎপিণ্ডে রক্তের প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)
এটি একটি ইমেজিং প্রযুক্তি, যা বেশিরভাগই শরীরের অস্থি অংশ বা নরম টিস্যু চিত্র করার জন্য করা হয়। এতে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র হৃৎপিণ্ডকে চিত্রিত করতে ব্যবহৃত হয়। চৌম্বক ক্ষেত্র শরীরে হাইড্রোজেন প্রোটনের লাইন আপ করে।
রেডিও তরঙ্গ তখন প্রোটনকে অবস্থান থেকে ছিটকে দেয়। যখন তারা সঠিক অবস্থানে ফিরে আসে, তারা রেডিও সংকেত পাঠায়। কম্পিউটার এই সিগন্যাল গ্রহণ করে ও সেগুলোকে দেহের ছবিতে রূপান্তর করে। চিকিৎসকরা কার্ডিয়াক রোগ নিরীক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করেন।
ব্যায়াম স্ট্রেস পরীক্ষা
ট্রেডমিল পরীক্ষা নামেও পরিচিত, এই পরীক্ষা আপনার হৃদয় কতটা ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। একটি ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) আপনার হার্টের বৈদ্যুতিক ছন্দ নিরীক্ষণ করে।
এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার রক্তচাপও পরিমাপ করেন ও বুকে অস্বস্তি বা ক্লান্তির মতো উপসর্গ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। অস্বাভাবিকতা রক্তচাপ, হৃদস্পন্দনসহ শারীরিক বিভিন্ন লক্ষণ করোনারি আর্টারি ডিজিজের (সিএডি) নির্দেশ দেয়।
করোনারি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাম (সিসিটিএ)
করোনারি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাম (সিসিটিএ) হলো একটি থ্রিডি ইমেজিং পরীক্ষার পদ্ধতি, যা করোনারি ধমনী সংকুচিত হয়ে গেছে কি না তা চিহ্নি করে।
এক্ষেত্রে একটি রঞ্জক শরীরে প্রবেশ করানো হয় ও কম্পিউটেড টমোগ্রাফি করা হয়, যা এক্স রশ্মির সংমিশ্রণ ও ছবি তৈরি করতে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
ইকোকার্ডিওগ্রাম
এই আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় হার্টের গঠন পরীক্ষা করা হয়। এটি কার্ডিওমায়োপ্যাথি ও ভালভ রোগের মতো হার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা নির্ণয় করতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষায় বিকিরণ ব্যবহার করে না।
নিউক্লিয়ার কার্ডিয়াক স্ট্রেস পরীক্ষা
এই পরীক্ষায় হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত রক্তের চিত্র তৈরি করতে ট্রেসার হিসেবে অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষাটি করা হয় যখন কেউ বিশ্রামে থাকেন।
কাত পরীক্ষা
এক্ষেত্রে রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার হার্টের রেকর্ডিং নেওয়া হয়। রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্টের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিওমায়োপ্যাথি ভেন্ট্রিকুলার ডিসফাংশন শনাক্তের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা
হৃদরোগ নির্ণয় করার জন্য সাধারণ রক্ত পরীক্ষাগুলো হলো উচ্চ কোলেস্টেরল, প্লাজমা সিরামাইড, ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড, ট্রোপোনিন টি ও উচ্চণ্ডসংবেদনশীলতা সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন।
একজন ব্যক্তির হৃদয় সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা শনাক্ত করতে ডাক্তারগণ এসব পরীক্ষার পরামর্শ দেন। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। অন্তত ৬ মাস পরপর শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করা জরুরি। যার মধ্যে হার্টের পরীক্ষা অন্যতম।
হার্ট অ্যাটাকের আগ মুহূর্তেই দেখা দেয় জটিল ৫ লক্ষণ
হৃদরোগ প্রতিবছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু হয়, এমনটিই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর এই উদ্বেগজনক সংখ্যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণে ঘটে।
হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ কম বয়সীদের মধ্যে অকাল মৃত্যু ঘটে। তাই হৃদরোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারণে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো জটিল হতে পারে, যদি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিলম্বিত হয়। বিশেষ করে হঠাৎ করেই যে কারও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যদিও এর আগে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
সেগুলো উপক্ষো করলে পরবর্তী সময়ে গুরুতর ও জটিল লক্ষণ দেখা দেয়। যা অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। জেনে নিন হার্ট অ্যাটাকের জটিল লক্ষণ কোনগুলো-
বদহজম যেমন বুকে ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের আগে বুকে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করেন কমবেশি সব আক্রান্তরাই। যা বেশিরভাগ রোগীই বদহজম বা গ্যাস্ট্রিক ভেবে ভুল করেন।
আসলে হার্ট অ্যাটাকের কারণে যে বুকে ব্যথা হয় তা শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন আবার অনেকে এ বিষয়ে সচেতন নয় বলেই টের পান না। মনে রাখবেন, হার্ট অ্যাটাকের কারণে বুকে যে ধরনের ব্যথা হয় তা অনেকটা ছুরিকাঘাতের মতো।
বাম কাঁধে ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের আরও একটি জটিল লক্ষণ হলো বাম কাঁধে ব্যথা। অনেকেই এ লক্ষণ সহজে ধরতে পারেন, তবে যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন বা আসীন জীবনযাপন করেন কিংবা এমনিতেও যারা কাঁধে ব্যথার সস্যায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।
পেটের মাঝখানে ব্যথা
এটিকে এপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চল বলা হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার একটি সাধারণ অবস্থান। এক্ষেত্রে পেটের মাঝখানে জ্বলন্ত ব্যথার মতো অনুভত হয়, যা বেশিরভাগ মানুষই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি ভেবে বিভ্রান্ত হন।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াকে শারীরিক দুর্বলতা বলে ভেবে নেন কমবেশি সবাই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হার্ট অ্যাটাকের একটি নীরব লক্ষণ। এক্ষেত্রে বমি বমি ভাব ও বমিও হতে পারে।
ঠান্ডা ঘাম
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের রাতের বেলা ঘাম খুব বেশি দেখা যায়। নারীদের মধ্যে এটি খুব সাধারণ লক্ষণ। হার্ট অ্যাটাকের সময়, শরীর রক্ত পাম্প করার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করে, যার ফলে ঘাম হয়।
যদিও ব্যথার প্রকৃতি অনুমান করে এটি হার্ট অ্যাটাক নাকি অন্য কিছু তা জানা কঠিন, তবে সবারই এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
এসব লক্ষণ নিজের বা কারও সঙ্গে হতে দেখলে দ্রুত সাহায্যের জন্য কাউকে জানান বা ৯৯৯ এ কল করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন।