প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করি। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যারা চাকরি করে তারাই জানে তাদের কত রকম হেরেজমেন্টের শিকার হতে হয়। কখনো কখনো নিজের সম্মান বাঁচাতে জব (চাকুরি) ছেড়ে চলেও আসতে হয়েছে ক’বার।
তারপর এক বড় ভাইয়ের অনলাইন বিজনেসের জন্য স্টাফ লাগবে জেনে আমি সেখানে যোগ দেই। ভাইয়ার অফিস পরিবর্তন করে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়ার কারণে জবটা কন্টিনিউ করতে পারিনি। ২০১৯ সালের কথা, উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হই। খুব ইচ্ছা ছিল নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করার।
নিজের একটা বুটিক হাউজ থাকবে কিন্তু পরিবারে সাপোর্ট ছিলো না; আর নিজেরও আর্থিক সমস্যার কারণে বুটিক হাউজ দেওয়া কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। করোনাকালীন সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করলাম। আসলে বলতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হলো। সংসারের বড় মেয়ে হওয়ায় ইচ্ছা ছিলো পরিবারের জন্যে কিছু করার। আর সেটি সম্ভব হয়েছে ই-কর্মাসের মাধ্যমে। এভাবেই বললেন সোনিয়া রহমান।
সোনিয়া রহমানের বাড়ি পুরান ঢাকার গেন্ডরিয়া এলাকায়। তার মামা বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকায়। কিছু করার ইচ্ছায় সোনিয়া কয়েকটি ই-কমার্স গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। তার মধ্যে প্ল্যাটফরম ‘উই গ্রুপ’ উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, নারীরা কত ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন।
এসব দেখে নিজের মধ্যেও তার আত্মবিশ্বাস জন্মায়। ভাবেন তিনিও তো কিছু করতে পারেন। কিন্তু কী করবেন, কোন্টা ভালো হবে, এসবের ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক নিয়ে ভাবেন। কিন্তু তার কোনো প্ল্যাটফরম নেই। তাই ‘ইউ মি ফ্যাশন’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন। এতে তার আগ্রহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে সোনিয়া রহমান তথ্য ও প্রযুক্তি কণ্ঠকে বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা চান গতানুগতিকভাবে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করে সংসার করি। তারা আমাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে না। এর মাঝে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে সেখান থেকে বেশকিছু টাকা জমিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে সেপ্টেমবরে ওই টাকাগুলো থেকে নিজের খরচের জন্যে কিছু রেখে বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি।
ডিসেম্বরে মার্কেট যাচাই করে মাঝামাঝি সময়ে শুরু করি মেয়েদের শাড়ি ও থ্রি-পিচের প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস। ব্যবসার পেজের নাম দেই ‘ইউ মি ফ্যাশন’। করোনার এ মহামারি সময়ে আমাদের অফিস বন্ধ থাকায় বাড়িতে ছিলাম। তাই ব্যবসায় বেশি মনোযোগ দিতে পারি। অল্প দিনের মধ্যেই অনলাইনে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করায় ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকি।
ঢাকাসহ প্রায় ৬৪ জেলায় তার পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকরা কিনছেন। প্রথমদিকে একা কাজ করলেও এখন মা, বোন, প্রতিবেশীসহ প্রায় ১০ জন নারী কাজ করছেন। কাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়ে-কমে। সেই সঙ্গে হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার করার জন্যে একজন ছেলে কাজ করছেন। প্রতিমাসে তার বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার পণ্য। এর থেকে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো।
সোনিয়া আরও বলেন, প্রথমদিকে পারিবারিক সহযোগিতা না পেলেও এখন পাচ্ছি। মেয়েরা ঘরে বসেই রোজগার করতে পারেন। তাই অন্যের ওপর নির্ভর না হয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করা উচিত।
মাদারীপুরের উন্নয়নকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যম ই-কমার্সের ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে উদ্যোক্তারা আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে মেধা খাটিয়ে মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে কীভাবে ঘরে বসে আয় করতে পারবে। ই-কর্মাসের মাধ্যমে মেয়েরা অনেক এগিয়েছেন। শিবচরের সোনিয়া আমাদের উদাহরণ।
লেখক পরিচিতি : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি।