রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

শেষ দেখা
অনলাইন ডেস্ক

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি শুয়ে আছি। শরীর ও মন দুটোই ভালো নেই। ভাবছি ইন্নার কথা। ইদানীং সে আমার সাথে কেমন জানি ব্যবহার করে। ঠিক করে কথা বলে না। আমার নাম ধরে ডাকে না। আমাকে শুধু হুকুম দেয়। কিছুই বলতে পারি না। বাধ্য ছেলের মতো ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সব কথা মেনে চলি। তবুও সে আমায় ঠিক করে কেয়ার করে না। আমাকে আমার মতো করে বুঝতে চায় না।

এইতো গতকাল সে অকারণেই ঝগড়া শুরু করে দিলো। ঝগড়া সবাই করতে পারে। অবস্থান বুঝে ঝগড়ার গতি নির্ধারণ হয়। ঝগড়া করার নিয়ম হলো, বিপরীত ব্যক্তিকে কোন সুযোগ দেয়া যাবে না। তাকে বাক্রুদ্ধ করার জন্যে একটানা কথা বলে যেতে হবে। ঝগড়ায় জিততে হলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে হবে। অতীত কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। যদিও কারো অতীত নিয়ে কথা বলা ঠিক না।

ঝগড়ায় রাজ করতে হলে বিপরীত ব্যক্তি যে-ই কথাগুলো শুনতে চায় না। বা শুনলেই লজ্জা পায় সেগুলোই বারবার বলতে হবে। দীর্ঘক্ষণ ঝগড়া করা কোনো ব্যপার না। অধিকাংশ সময়ই মানবিকতার কারণে করা যায় না।

কথা ধনুকের তীরের চেয়েও মারাত্মক। কেননা, ধনুকের তীরে শরীরে যে ক্ষত হয় তা ঔষধ খেলে সেরে যায়। কিন্তু মানুষের কথা অন্তরে যে ক্ষত হয় তা কোনো ঔষধে ভালো হয় না। আজন্ম ব্যথা বয়ে বেড়াতে হয়।

তাই ভালোবাসার মানুষকে শুধুমাত্র ঝগড়া জেতার জন্য অতীত কথা বলে এতো বড় আঘাত দিতে পারি না। আমি শুধু তাকে বুঝিয়ে যাচ্ছিলাম যে, তুমি যা শুনছো তা ভুল। এটার পিছনে আরেকটা ঘটনা আছে। সে সেই ঘটনা শুনতে চায় না। অধিকাংশ সম্পর্কই ভুল বোঝাবুঝির জন্য ভেঙ্গে যায়।

সে একসময় বলে ফেলল, তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না। আমি তোর মুখ দেখতে চাই না। তোর প্রতি আমার কোনো রুচি নাই। আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ।

যে আমি থাকতেও আরেকটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব রাখে। ফোনে গভীর রাতে চুয়ান্ন মিনিট কথা বলে তাকে আমার প্রয়োজন নাই। ঐ মেয়েটার সাথে এতক্ষণ ফোনে কি কথা হয়েছে আমি বুঝে গেছি। আমাকে আর কিছু বোঝাতে হবে না। ওরা এতদিন ঠিকই বলত, তুই একটা খারাপ ছেলে।

প্রিয়া, রিয়া, হানি, শ্রাবণী নাম না জানা আরো কত মেয়ের সাথে তোর সম্পর্ক । তুই থাক তোর প্রাণের বান্ধবীদের নিয়ে। আমি চললাম। আমাকে আর কোন দিন বিরক্ত করিস না। আল বিদায়।

আল বিদায় কথাটা মনে পড়তেই চোখে পানি চলে আসলো। বিছানা থেকে উঠে গেলাম। বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে। দোকানে আসলাম। সিগারেট কিনে নদীর পাড়ে আসলাম।

নদীর পাড়ে বসে পড়লাম। ইন্নাকে নিয়ে আবারো চিন্তায় মগ্ন। সিগারেট একের পর একটা খাচ্ছি। শেষ সিগারেট ধরাতেই হঠাৎ মনে হলো, সে সিগারেট খেতে পছন্দ করে না। আমাকে অনেক বার নিষেধ করেছে । শুনি নাই এই একটা কথাই। তাই একদিন আচমকা আমার ঠোঁটে চুমো দিলো। তারপর একটা চিরকুট হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।

চিরকুটে লেখা ছিলো, যে ঠোঁটে আমি আদর করলাম সেই ঠোঁটে কোনদিন সিগারেটে টান দিস না ।

কথাটা মনে পড়তেই সিগারেট ফেলে দিলাম। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার।

আমি রিসিভ করলাম। দশ সেকেন্ডের মতো কথা বললাম না। যখন কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না। তখন বললাম, হ্যালো কে?

-এটা কি রাজের নাম্বার?

-জ্বি। কিন্তু আপনি কে?

-আমি প্রিয়া।

-কোন্ প্রিয়া?

-চশমা প্রিয়া।

কথাটা শুনেই আমি হেসে উঠলাম। সেও হাসছে। বললাম, তুই নাম্বার পেলি কেমনে?

-তোর প্রিয় মানুষের কাছ থেকে নিয়েছি।

-আমার প্রিয় মানুষ! আমার কোনো প্রিয় মানুষ নাই।

-আছে আছে। তোর চোখ অন্ধ। তুই এখনো শ্রাবণীর প্রেমে ডুবে আছত। এইদিকে ঐ মেয়েটা নিরবে তোকে সত্যিকারে ভালোবাসে যাচ্ছে। কিন্তু তুই কখনো বুঝতে চেষ্টা করছ না।

তুই অন্তরের চোখ খুলে দেখ, শ্রাবণী থেকে ইন্না অনেক বেশি সুন্দর।

আচ্ছা একটা কথা বলি তো, তুই এখন ইন্নাকে ভালোবাসিছ?

-হুম অনেক অনেক।

-কচুটা ভালোবাসছ। তোর চেয়ে দ্বিগুণ ও তোকে ভালোবাসে।

তুই কি জানোস? সেদিন তুই যখন বললি, ইন্টারে গিয়ে কোনো মেয়ের সাথে আর কথা বলবি না। সেদিন নীলা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। এমন কি তুই যদি ওর সাথে কথা না বলছ, এটা ভেবে সে অনেক কেঁদেছিল।

-কিন্ত তাহলে সে গতকাল আমার সাথে এমন ব্যবহার করলো কেন?

-তুই তামান্নার সাথে সেদিন এতক্ষণ কিসের কথা বলছত?

এটা সে মেনে নিতে পারেনি। তারপর ঐ মেয়েটার সাথে নাকি ৫৪ মিনিট কথা বলছত! কোনো মেয়েই তার প্রিয় মানুষকে আরেকটা মেয়ের সাথে এতক্ষণ কথা বলা সহ্য করতে পারে না।

-আমি কি প্রেমের কথা বলছি নাকি? ও একটা বিপদে পড়েছে। তাই ওকে বুঝিয়েছি। হেল্প করেছি। জানিস, সে আত্মাহত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। সেখান থেকে ফিরিয়ে এনেছি।

-বুঝলাম। এগুলো তুই ওর কাছে বলতে পারতি। সে তৃতীয় আরেক জনের কাছে শুনছে। কি না কি বলছে। অন্য কারো কাছে এগুলো শুনলে মাথা ঠিক থাকার কথাও না। তাছাড়া এখনো তুই তাকে তোর ভালোবাসার কথা বলছ না।

ভালোবাসার কথাটা শোনার সাথেই ফোনটা কেটে দিলাম। আর মনে করতে থাকলাম সে আমাকে ভালোবাসে! না আজই তাকে প্রপোজ করতে যাবো।

আমি নোটের বাহানা দিয়ে সোজা চলে আসলাম ইন্নার বাসায়। এসে দেখি তার ভাই বেডরুমে শুয়ে আছে। দেখেই আমার গলা শুকিয়ে গেল। চোখে চোখ পড়তেই আমি সালাম দিয়ে আমতা আমতা করে ইন্নার নোট নিতে এসেছি বললাম। সে ইন্নার রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ইন্নাসহ নোট নিয়ে হাজির হলো। ইন্নার মনোভাব দেখে কিছুটা বুঝলাম না। সে খুশিও না। বিরক্তও না!

আমি সুযোগ বুঝে ইশারা দিলাম। তবুও কোনো সাড়া পেলাম না। নানা অজুহাতে অনেক্ষণ থাকলাম। তবুও কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু আমি ইশারায় তাকে বুঝিয়ে দিলাম। আমি তাকে ভালোবাসি। তা-ও কোনো সাড়া পেলাম না। অতঃপর চলে এলাম।

বাড়িতে এসে শুধু একটা কথাই ভাবলাম, প্রিয়া যে কথা বলেছে তার সাথে আজকের ঘটনার কোনো মিল নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেল।

রাতে ভাত খেতে বসলাম। হঠাৎ মামা ফোন করে জানানালেন, আমি মেসেজ পেয়েছি কি না। পরশু বিকেলে আমার ট্রেন। ভারতে যাবো। সেখানে সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছেন এজেন্ট অফিসে। শুনে সবাই খুশি। শুধু আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ইন্নার ব্যক্তিগত মোবাইল নাই। তাই তাকে জানাতে পারলাম না। সেদিন অনেক চেষ্টা করেও প্রিয়ার সাথে কথা বলতে পারিনি। সেদিন চার বছর সম্পর্কের কথা ভাবতে আর ঘুমাতে পারিনি।

পরেরদিন সকালে আবার নোট নিয়ে ইন্নার বাসায় গেলাম। দেখি ওরা বেড়াতে গিয়েছে। এইদিকে প্রিয়ার সাথেও কথা বলতে পারছি না। সেদিন বিকেলে মামা বললো, একদিন আগেই ঢাকায় চলে আসতাম। খালাম্মার বাসায় থাকতাম। বাধ্য হয়েই একদিন আগে ঢাকায় চলে আসলাম।

পরের দিন সকালে ‘চলে যাচ্ছি’ বলে একটা পোস্ট দিলাম ফেসবুকে। এর আগের দিন রাত প্রিয়াকে সব বলতে পেরেছিলাম।

তিন ঘণ্টা আগে কমলাপুর চলে আসলাম।

আমি জানি ওরা মিরপুরে বেড়াতে এসেছে । ও চাইলেই দেখা করা যায় স্টেশনে। আমি বারবার পেছনে তাকাচ্ছিলাম। আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো সে আসবে। সে আসবে। শেষ দেখা হবে। যাওয়ার আগে আমি চিৎকার করে তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে যাবো।

তিনঘণ্টা পার হয়ে গেল। সে আসলো না। ট্রেন ছাড়ার এক মিনিট আগে ট্রেনে উঠলাম। এক সময় ট্রেন ছেড়ে দিলো। তবুও সে আসলো না।

কলকাতা নামার পর ফেসবুকে ঢুকলাম । দেখি অনেকগুলো মেসেজ। প্রিয়ার মেসেজ। মেসেজ পরে আঁতকে উঠলাম। ট্রেন ছাড়ার একটু পরেই ইন্না ইস্টিশনে এসেছিলো। আমাকে কল করেছিল। কিন্তু আমার ফোনে সংযোগ পাচ্ছিল না। আমি তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, দুই জনে এত চেষ্টা করেও শেষ দেখা করতে পারলাম না!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়