প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
রাত তখন প্রায় ১২টা বাজে। রাতুল প্রায় ক্লান্ত। আমি অনেকটা বিষণ্ন। রাতুল হঠাৎ সামনে এগিয়ে এসে বললো রাহেদা তোমার মন খারাপ?
আমি নরম সুরে মুচকি হেসে বললাম নাতো।
তাহলে কথা কম বলো কেনো?
আমি কথা বেশি বললে কখনো কখনো নীরব থাকতে হয়।
রাতুল চোখে চোখ রেখে। বলে আমার শূন্য শূন্য লাগে।
আমি অবাক হয়ে বললাম তাহলে তুমি চাও আমি বেশি কথা বলি।
রাতুল বললো হুম। কারণ আমি তো অনেক শান্ত আমি চিরকাল চেয়েছি আমার বউ বেশি কথা বলুক।
আমি তাই বলো।
আমি হাত চেপে বললাম চা খাবে?
রাতুল তুমি চাইলে খাবো।
আচ্ছা বসো আমি আসতাছি। ট্রেতে চায়ের কাপ সাজিয়ে আমি বারান্দা থেকে বেলীফুল তুলে ট্রেতে সাজালাম।
রাতুল শুধু ট্রেতে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো রাহেদা আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের এতোকাল দেখা হয়নি কেনো?
আমি কথা থামিয়ে তোমার জন্য উপহার এনেছি। তারপর হাতে তুলে দিলাম।
রাতুল মোড়ানো কাগজ খুলতে খুলতে বললো সত্যি দারুণ অনুভূতি লাগছে।
দুটি চিরুনি, একটি গোলাপ, পাঞ্জাবি আর কালো রংয়ের একটি শার্ট। রাতুল উপহার হাতে নিয়ে বললো অনেক সুন্দর। আমি শুধু ওর মুখ দেখে খুশি হয়েছি।
রাতুল এই প্রথম আমার হাতের মুঠো শক্ত করে বললো চলোনা চাঁদ দেখি।
আমি বললাম হ্যাঁ চলো।
পরের দিন সন্ধ্যা বেলা আমি রান্না করছি। রাতুল বাসায় হাজির। আমি ঘামে ভেজা শরীরে ক্লান্ত হয়ে এদিক থেকে সেদিক দৌড়াদৌড়েতে ব্যস্ত। রাতুল বললো, রাহেদা এদিকে এসো।
আমি গেলাম।
এই যে তোমার উপহার। আমি কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা হাতে নিলাম।
সত্যি আমি অবাক।
একটি কমলা রংয়ের শাড়ি, একমুঠো কমলা রঙের চুড়ি, একটি উপন্যাস আর একজোড়া কানের দুল আমি সাথে সাথে শাড়িখানা পড়ে ফেললাম।
রাতুল অবাক হয়ে তোমাকে অত্যধিক সুন্দর লাগছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম ভালোবাসি ভালোবাসি প্রিয়।
রাতুল তারপর হাতের মুঠো চেপে বললো দুঃখিত। আমি বললাম কেনো বলোতো?
এই যে সুতি শাড়িটা তোমায় দিলাম। ইচ্ছে ছিলো একটা দামি জামদানি তোমাকে দেবো। মাস শেষ হাতে টাকা ছিলো না তাই।
আমি কথা থামিয়ে বললাম আমার জামদানি লাগবে না তুমি আমাকে সুতি শাড়ি দিলেই তো আমি খুশি। শোনো আমার কাছে সুতি শাড়ি আরাম লাগে।
রাতুল অগোচরে আমার খোঁপাতে গোলাপ লাগিয়ে দিতে দিতে বললো আমিও জানতাম তুমি অল্পতেই খুশি।
এইভাবে আমাদের ভালোবাসা গভীর হতে লাগতো। একদিন রাতুল আমায় বললো আচ্ছা রাহেদা তুমি তো সমুদ্র দেখোনি?
আমি নাতো।
তোমার ইচ্ছে হয়?
আমি বললাম এই কথা রাখো।
রাতুল তারপর প্রতি মাসে আমাকে তিনহাজার টাকা হাতে রেখে বললো তোমার কাছে জমা রাখো।
এভাবে রাখতে রাখতে আমাদের তিরিশ হাজার হলো।
একদিন এসে রাতুল টাকাটা চাইলো। আমি ভাবলাম হয়তো ব্যাংকে জমা রাখলাম। রাতে এসে বললো ব্যাগ গুছাও। আমরা কাল সেন্টমার্টিন যাচ্ছি। আমি অবাক হয়ে সত্যি?
রাতুল বললো হুম। রাতুল বললো তোমার শপিং লাগবে তো।
আমি বললাম না। যা আছে তা দিয়ে চালিয়ে নেবো। রাতুল তোমার এই চালিয়ে নেওয়ার অভ্যাস আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে।
আমি বললাম যদি সুখী হতে চাও এইভাবেই অল্প সন্তুষ্টি হতে হবে।
সেই প্রথম আমাদের সমুদ্র ভ্রমণ ছিলো। রাতুল আর আমি হাতে হাত রেখে জলরাশিতে পা ভেজালাম। রাতুল বললো রাহেদা শোনো আমি বললাম জ্বি।
রাহেদা তোমার এই স্বল্পমূল্যের প্রেম চিরকাল থাকবে তো?
আমি সমুদ্র জলে তাকিয়ে অশ্রুসজল হয়ে বললাম হ্যাঁ থাকবে।
ধরো একদিন সংসার সামলাতে গিয়ে আমরা আর সমুদ্র দেখতে না পারি তখন তুমি কীভাবে ভালোবাসা দিবে?
আমি বললাম, এই তো মধ্যরাত্রিতে এককাপে চায়ে চাঁদ দেখবো নয়তো শীতে হলদে ফুলে মাঠে বেড়াবে
আর?
আমি বললাম নদীর তীর ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে তোমার মুঠো চেপে বলবো কয়েক মাসের শপিং খরচ বাঁচিয়ে চলোনা সমুদ্র দেখার টাকাটা জমাই।
রাতুল হো হো হেসে বললো তোমার এই চালিয়ে নেয়ার অভ্যাস আমাকে বলেছে আমরা আবার এই সমুদ্র জলে নামবো।
আমি বললাম আর কিছু?
রাতুল আমার মুখে মুগ্ধ হয়ে বললো সংসার খরচ কমিয়ে আরো বহুবার প্রকৃতিতে ভালোবাসায় মত্ত হবো।