প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ছোটবেলা থেকেই আমার পত্রিকা পড়ার নেশা। হোক সেটা পুরাতন কিংবা নতুন। পত্রিকা পেলে পড়তেই হবে। আরেকটা শখ ছিলো টিভিতে সংবাদ দেখা। সময় পেলে টুকটাক কিছু নিজের ডায়েরিতে লেখা। নিজের মনে যা আসতো তাই নিয়ে লেখালেখি করতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমি তো আর কবি কিংবা সাহিত্যিক নই যে অসাধারণ গল্প-কবিতা লিখবো। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এখনকার মতো সবকিছু এতো সহজে পাওয়া যেতো না। আর গ্রামাঞ্চলে পত্রিকা! সে তো স্বপ্নের মতো। তারপরেও আমাদের গ্রামের অনেকেই পত্রিকা পড়তো। সে সময় আমিও চাঁদপুর জেলা শহরে, কিংবা মতলব বাজার, বাবুরহাট গেলে পত্রিকা সংগ্রহ করতাম। যত্ন সহকারে রেখে দিতাম। ঠিক সে সময় পরিচয় হয় চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ইসলামীকণ্ঠের নিয়মিত লেখক বন্ধুবর মাওলানা আবু বকর বিন ফারুকের সাথে। তিনিও খুব পত্রিকাপ্রেমি মানুষ। দুজনে মিলে প্রতিদিন তার রুমে বসে সন্ধ্যার পর জমিয়ে পত্রিকা পড়তাম। সে সময় পত্রিকা সংগ্রহ করতে আমাদের খুব কষ্ট হতো। হকার স্থানীয় বিষ্ণুপুর কাজীরবাজারে একটি দোকানে পত্রিকা রেখে যেতো। আমরা গিয়ে দু-এক দিন পরপর নিয়ে আসতাম। কারণ আমাদের গ্রাম থেকে কাজীর বাজার তিন কিলোমিটার দূরে। যাক এমনি করে চলছিলো আমাদের পত্রিকা পড়া। একদিন হঠাৎ করে মাওলানা সাহেব বললেন, আপনিও কিছু লিখেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় এবং সহযোগিতার আমি চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরাম, শিক্ষাঙ্গন বিভাগে লেখা শুরু করলাম। লেখা পত্রিকায় ছাপাও হতে লাগলো। বিশেষ বিশেষ সংখ্যায়ও লেখা পাঠাতাম। সে সময় মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, দন্তন্য ইসলাম, রফিকুজ্জামান রণি, আশিক-বিন-রহিমের লেখা খুবই ভালো লাগতো। আস্তে আস্তে আমি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রেমে পড়ে গেলাম। কি রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-তুফান সব কিছু উপেক্ষা করে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কিলোমিটার হেঁটে এসে হকারের রেখে যাওয়া পত্রিকা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। যেদিন পত্রিকা পেতাম না সেদিন প্রচুর মন খারাপ থাকতো। একটি চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকার জন্যে কতোই কষ্ট করতে হয়েছে, আমি ছিলাম প্রেমিক আর প্রিয় পত্রিকা ছিলো প্রেমিকা। একদিন না পড়তে পারলে নাওয়া-খাওয়াও যেনো বন্ধ। এ কারণে চাঁদপুরের কোনো খবর কারো জানার প্রয়োজন থাকলে গ্রামের লোক ছুটে আসতো আমার কাছে। ব্যাপারটা খুব ভালোই লাগতো।
আমার কাছে দুই হাজার তেরো সালের কোনো এক দিন সারাদিন ধরে চাঁদপুরসহ সারাদেশে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিলো, বিকেলবেলা ঝড়-তুফান মাথায় নিয়ে ছুটে গেলাম পত্রিকার জন্যে গিয়ে দেখি পত্রিকার হকার আসেনি। দোকানীকে জিজ্ঞেস করলাম, হকার আসেনি। দোকানির উত্তর, হকার তো আর আপনার মতো পাগল না। চিন্তা করলাম কথাতো ঠিক। কিন্তু আমার মনকে বুঝাতে পারলাম না। চৌদ্দ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে একটা সিএনজি অটোরিকশায় করে চাঁদপুরে গেলাম। কিন্তু সেদিন আমি আর প্রিয় চাঁদপুর কণ্ঠ জোগাড় করতে পারিনি। একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। সেদিনের কথা যেমন ভুলতে পারি না, ঠিক ভুলতে পারি না প্রিয় চাঁদপুর কণ্ঠকেও। দুই হাজার বারো থেকে শুরু করে পনেরো সাল পর্যন্ত অনেকগুলো চাঁদপুর কণ্ঠ এখনও যত্নসহকারে রেখে দিয়েছি।
পরিশেষে বলতে চাই, চাঁদপুর কণ্ঠ বেঁচে থাকুক শতাব্দির পর শতাব্দি। মহান আল্লাহ তায়ালা এ পত্রিকার সাথে জড়িত সবাইকে নেক হায়াত দান করুক। চাঁদপুর কণ্ঠ এগিয়ে যাক তার আপন মহীমায়।