প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বলা হয় বাংলাদেশকে। দেশের আনাছে-কানাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অপার সৌন্দর্য। শুধু চোখ মেলে দেখতে হয় সৌন্দর্যের অপার এ লীলাভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলায় দেখা মেলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সুন্দরবন, সুউচ্চ পাহাড় আর পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা জলস্রোতে। তাইতো এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে নিজের অজান্তে মন থেকে বেরিয়ে আসে, ‘স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এদেশে। স্বার্থক জমন মাগো তোমায় ভালোবেসে’।
বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান দখল করে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর চট্টলার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছেন অনেকেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি ঝরণা আজ দর্শনার্থীদের টানছে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটছেন। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশ বাড়িয়া সমুদ্রসৈকত এবং সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক দেখতে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। আমরা ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম ঘুরে এলাম সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় আর তার সাথে দেহমন শীতল করা খৈয়াছড়া ঝর্ণায়।
ভ্রমণের নির্ধারিত তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর। যাত্রা করবো ভোর ৪টায়। এতো রাতে সবার আসা সম্ভব হবে না বিধায় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভ্রমণসঙ্গীরা আমার বাসায় রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্রামের পরিবর্তে সবাই মিলে হাসি-আনন্দে মেতে উঠি। সবারই অপেক্ষা কখন গাড়ি আসবে। গাড়িতে উঠার সময় ছিলো ভোর চারটা। সবাই তাই সাড়ে তিনটার ভেতর তৈরি হয়ে রাস্তাায় নেমে আসে। কিন্তু আমাদের গাড়ি সঠিক সময়ে আসেনি। গাড়ি আসলো ৪টা ৪০ মিনিটে। দেরি না করে সবাই দু গাড়িতে ভাগ হয়ে উঠে গেলাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো আর আমরা সবাই গান, কবিতা, গল্প বলে মজা করতে লাগলাম। ইচ্ছে ছিলো সকালের নাস্তা খাবো সীতাকুণ্ড বাজারে কিন্তু গাড়ি দেরিতে আসায় পথেই নাস্তা সেরে নিলাম। আবার গাড়ি চলতে লাগলো। চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম কাক্সিক্ষত লক্ষ্য চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে।
এবার পাহাড়ে উঠার পালা। আমাদেরকে লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম ফরহাদ ভাই সময় বেঁধে দেন। পাহাড়ে থাকতে পারবো দুপুর ১২টা পর্যন্ত। শুরু হয়ে গেলো ছবি তোলার উৎসব। সবাই পাহাড়ের উপরে উঠতে লাগলো। কিন্তু ঝুঁকি মনে করে ফরহাদ ভাই ভয়ে উঠলেন না। তিনি জানালেন, তিনি নাকি অসুস্থ। নির্দিষ্ট সময়ে কিছু সদস্য ব্যতীত সবাই চলে আসলো। তাদের জন্যে অপেক্ষা করে সবাই দুপুর একটার মধ্যে খাবার সেরে নিলাম। এবার গন্তব্য খৈয়াছড়া ঝর্ণা। গাড়ি ৩০ মিনিটে এসে পৌঁছলো খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। এবার শুরু হলো ঝর্ণার পানিতে ভিজে গা শীতল করার পালা। যতোই ঝর্ণার কাছাকাছি যাচ্ছি, মনে হচ্ছে দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছি। আর মাঝে মাঝে রাস্তা হারিয়ে ফেলছি। অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আসলাম ঝর্ণার কাছে। আসতে আসতে কয়েক জায়গায় ছবি, সেলফি নিলাম সবাই। পাথর আর মাটির পিচ্ছিল এ দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে হলো পায়ে হেঁটে। হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। তা না হলে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এবার দেখলাম সুবিশাল উচ্চতা থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে কীভাবে ঝরণার পানি পড়ে। এবার ঝর্ণার পানিতে ভিজার পালা কিন্তু আমরা অন্যদের জন্যে জায়গা পেতে বিলম্ব হলো। তারপরও এক এক করে আমরা সবাই ঝর্ণায় জায়গা করে শীতল পানিতে দেহকে ভিজিয়ে মনকে শান্ত করলাম। আমাদের মতো আবার অনেকে গা ভিজিয়ে নিতে অপেক্ষা করছে। এসব মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করছে সবাই। ঝর্ণার বয়ে চলা স্রোতে স্থির হচ্ছে নিচেই। সেখানে সবাই ঝর্ণার গায়ে দাঁড়িয়ে ঝাঁপ দিচ্ছে। সবার দেখাদেখি আমরাও ঝাঁপ দিলাম। এখানেও আমরা ফ্রেমবন্দি হলাম। সূর্য অস্তমিত হতে লাগলো আর আমাদের ভ্রমণের আনন্দময় সময়গুলো সংকুচিত হতে লাগলো। এবার ঝর্ণা থেকে ফিরে আসলাম গাড়িতে। ভেজা জামা-কাপড় পরিবর্তন করে সবাই আবার গাড়িতে বসলাম। শুরু হলো আলাপচারিতা, কে কতটুকু আনন্দ উপভোগ করলো। কথা বলা শেষে আবার গান শুরু হলো। সবার ক্লান্ত শরীর, কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম তাড়ানোর জন্যে নাস্তা বিরতি দিয়ে সবাইকে নাস্তা খাওয়ানো হলো। নাস্তা খাওয়া শেষে আবার গাড়িতে বসলো সবাই। এবার একটু সতেজ ভাব আসলো সবার মাঝে। শুরু হলো হৈ-হুল্লোড়। আর রাস্তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে শুরু করলো গাড়ি। অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম অফিসের সামনে। তখন রাত ১০.৩০ মিনিট।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল