প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
বুকের মাঝে অ্যালার্ম বাজে
ফরিদুল ইসলাম নির্জন
বউয়ের ‘এই শোনো’ ডাকটি শুনলে বুকের মধ্যে সকাল বেলার অ্যালার্ম বেজে ওঠার মতো মনে হয়। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। না জানি বউ নতুন কী আবদার নিয়ে হাজির হয়েছে! অথচ বিয়ের আগে এই ডাকটি শোনার জন্যে কত অস্থির ছিলাম! ডাকটি কী মধুর মনে হতো! কী রোমান্টিক ডাক ভাবতাম! এখন কি-না এই ডাক শুনলে ভয়ে অস্থির।
ভয়টি বিয়ের পর শুরু হয়েছে। বউ বিয়ের কয়েকদিন পরই বললে, এই শোনো।
হ্যাঁ বলো।
তোমাকে একটা কথা বলবো। কিছু মনে করবে না তো।
না, বলো। পরে বউ একটি আইফোনের দাবি করলো। আমি বউয়ের এই দাবিকে হেসেই মেনে নিলাম। কয়েকদিন পরপরই বউ খালি বলে, এই শোনো। আর একটি করে দাবি করে বসে। অমুক ভাইয়ের বউয়ের শাড়িটা সুন্দর, অমুক ভাবির সোনার চেনটা জোস, অমুক খালার বাড়ির ড্রেসিং টেবিলটা হেব্বি, ইত্যাদি।
এই তো কয়েকদিন আগেই বউ আবার ডাকলো, এই শোনো।
আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, হ্যাঁ বলো।
তুমি এমনভাবে হ্যাঁ বললা কেনো? আমার কলেজের বন্ধুরা এক বেলা ফাস্টফুডে খেতে চায়। কলেজ লাইফের বন্ধু বলে কথা। তোমার তো একটা সম্মান আছে। সেই সম্মান রক্ষার স্বার্থে তাদের এক বেলা ফাস্টফুডে খাওয়াতে হবে। কী আর করা, আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। প্রথম ভাবলাম, সবাইকে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে যে কোনো বিয়ে খাইয়ে দিব। বিয়ের আগে কতদিন মাগনা খেয়েছি, তার হিসাব মেলানো কঠিন। অপমানও হয়েছি। একদিন গিয়েছি এক কমিউনিটি সেন্টারে খেতে। কিছুক্ষণ পর একটা লোক এসে বললো, ভাই বরপক্ষের লোক কারা। হাত তোলেন। আমি হাত তুললাম। পরেই আবার বলল, কনে পক্ষের লোকজনও হাত তোলেন। অনেকেই হাত তুললো।
এবার লোকটি বললো, ভাই এটা সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান। দয়া করে আপনারা সবাই এবার বাইরে যান। সেবার হাত তুলে অপমানই হলাম। পরে ভাবলাম আর কোনো অনুষ্ঠানে এভাবে খাবার খাব না। কিন্তু পরবর্তীতে আবার এটা ভুলে যাই। এবার আমি একা নয়। কয়েকজন মিলে যাওয়া ধরলাম। একবার এক কমিউনিটি সেন্টারে কয়েকজন আমাদের বলল, আপনারা কোন পক্ষের।
আমি বললাম, আমরা বর পক্ষের।
তারা এবার আসামি ধরার মতো আমাদের ধরে ফেলল। আচ্ছা মতো উত্তম-মধ্যম দিল। পরে জানলাম। বর পক্ষের লোকজনের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম ছিল। বর পক্ষের রাগ আমাদের তিনজনের ওপর ঝেড়ে দিয়েছিল। কোনোভাবে জান নিয়ে সেদিন বেঁচে এসেছিলাম। তওবা পড়েছিলাম জনমে আর কোনোদিন এভাবে খাব না। এখন বউয়ের কলেজ বন্ধুদের এমন শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। তা আর দিলাম না। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে বউয়ের আবদার পূরণ করলাম।
আজ আবার বউ বলছে, এই শোনো, ডিএসএলআর ক্যামেরা বলতেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বউ টেনশনে পড়ে যায়। পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। আমার জ্ঞান ফিরতেই বউ বলল, এই শোনো, তোমাকে আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম। তার আগেই তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে। ডিএসএলআর ক্যামেরা বলতেই এবার আমি বললাম, তোমায় হাত জোড় করে বলি। তুমি আর এই আবদার করো না।
তুমি কী সব আবল-তাবল বকছ। আমি বলছি, এবার ঈদে তোমাকে না জানিয়ে বাবার কাছে ডিএসএলআর ক্যামেরার কথা বলেছিলাম। বাবা সেটা কিনেছে। তোমাকে আর আমাকে বাসায় যেতে বলেছে। তুমি যেহেতু অসুস্থ তাহলে কাল গিয়ে নিয়ে আনব।
বউয়ের এই কথায় যে কী স্বস্তি পেলাম, তা প্রকাশ করতে পারছি না। আমি তো ভেবেছিলাম বউ এবার ক্যামেরার আবদার করে বসবে। বউকে বললাম, প্লিজ তুমি এই শোনো ডাকটি কখনও দিয়ো না। এইটা শুনলেই আমি ভয়ে আঁৎকে উঠি। তোমার যা দরকার এমনিতেই বলো তবুও তুমি এই শোনো ডাকটি দিয়ো না।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা