শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০

বিয়ে

রেজাউল করিম রোমেল
বিয়ে

মিলনের পুরো নাম জাবেদ খান মিলন। তবে মিলন নামে সবাই তাকে চেনে। তিন বছর হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি এ শেষ করেছে। স্বপ্ন দ্যাখে একদিন বড় ব্যবসায়ী হবে এবং সব সময় ব্যবসায়ের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একদিন ঢাকা সিটি মার্কেটে কিছু লোকজনের সাথে ব্যবসায়িক আলোচনা শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিল মিলন। হটাৎ তার চোখ পড়ল একটি গোলাপী রঙের প্রাইভেট কারের দিকে। মনে হচ্ছে প্রাইভেট কারটি মিলনের পরিচিত। সে গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িটি মিলনের সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ির দরজা খুলে পরীর মতো সুন্দরী একটি মেয়ে মিলনের দিকে আসতে লাগল। আর মিলন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মেয়েটির দিকে। যেন চোখের পলক পড়ছে না।

মিলনের কাছাকাছি এসে মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি এখানে?

মিলন কেনো উত্তর না দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মেয়েটি আবার বললো,

-একটা সুখবর আছে। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এভাবে জীবন চলে না। এভাবে আর কতদিন বলো?

মিলন কথার কোনো উত্তর দিলো না। মেয়েটি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিটি মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করল। মেয়েটির নাম রিয়া। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে। রিয়াকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার পরিবার অনেক ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মা-বাবার একটি মাত্র মেয়ে। সে খুব সুন্দরী এবং শিক্ষিতা। তাই বাবা মায়ের খুব ইচ্ছা অনেক ভাল ঘরে মেয়েকে বিয়ে দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর রিয়ার সাথে মিলনের একটা ভাল সম্পর্ক তেরী হয় এবং সেই সম্পর্ক এক সময় প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। দুজনে পাঁচ বছর ধরে চুটিয়ে প্রেম করে। এম. বি. এ শেষ করে মিলন সিদ্ধান্ত নিল ব্যবসা করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। অনেক বড় এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হবে। এ স্বপ্ন বাস্তব না হওয়া পযন্ত বিয়ে করবে না বলে ছাফ জানিয়ে দেয় রিয়াকে।

তারপর থেকে দুজনের মধ্যে একটা দুরত্বের সৃষ্টি হয়।

মিলন ব্যবসার কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেভাবে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত বা কথা বার্তা হয় না। মাঝে মাঝে চলতি পথে দেখা হলে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় চলে, কথা হয় এতটুকুই।

আজ খুব রিয়ার কথা মনে পড়ছে। জানি না কেন এমন হচ্ছে। তাকে দেখার পর থেকেই এমনটি হচ্ছে। রিয়াকে নিয়ে ভাবনা কোনো অবস্থাতেই মন থেকে সরাতে পারছে না। পুরোনো দিনের সেই স্মৃতি মনে পড়ছে বার বার। কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। ক্লাস শেষ করে কফি সপে কফি খাওয়া, সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে রিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া স্মৃতি গুলো। লং ড্রাইভে যাওয়া, মটর সাইকেলে ঘুরে বেড়ানো, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা এমন অনেক কিছু।

রিয়ার বাবা ব্যারেস্টার এবং মা একটি সরকারি কলেজের শিক্ষিকা। বিয়ের সম্বন্ধ পাকাপাকি হওয়ায় রিয়ার বাবা মা খুব খুশি। পাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। লন্ডন থেকে পি. এইচ. ডি করে নতুন জয়েন্ট করেছে। আর আগেও দুই বার বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল কিন্তু রিয়া বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তবে এবার বিয়েতে সন্মতি দিয়েছে। রিয়া অপরূপা সুন্দরী এবং খুব ভাল পরিবারের মেয়ে। তাই কোনো পাত্র পক্ষ দেখতে এলে রিয়া এবং তার পরিবারের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ পাকাপাকি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

বেশ কিছুদিন হল মিলন ভাল নেই। খুব একটা কথা বলে না, চুপচাপ থাকে। সব সময় কি যেন চিন্তা করে! একটি বার রিয়াকে দেখার জন্য সব সময় ছটফট করে। একদিন কল দিল রিয়াকে। রিয়া কল রিসিভ করলো,

-হ্যালো।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিয়া আবার বললো,

-কি ব্যাপার হটাৎ করে ফোন দিলে?

-তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

-তাই!

-হ্যাঁ।

দুই জনই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর মিলন আবার বললো,

-এখন আসতে পারবে?

-এখন! এখনতো ছয়টা বাজে। আর একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এই সময় বাসা থেকে বের হওয়া কি ঠিক হবে?

-কেন ঠিক হবে না। তুমি কি বাচ্চা মেয়ে যে সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হলে হারিয়ে যাবে?

-দ্যাখ, এভাবে যাওয়াটা ঠিক হ...

রিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিলন বললো,

-আমি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে হোটেল শেরাটনের দশ তলায় রেষ্ট্ররেন্ট কক্ষে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।

-আমি আসব না।

-আমি অপেক্ষা কোরব।

কথাটি বলে মিলন মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।

সন্ধ্যা সাতটা। পুরো রেস্টুরেন্ট ভাড়া করেছে। আধাঘণ্টা হয়ে গেল অন্ধকার ঘরে একা বসে আছে মিলন। এখনো রিয়া এসে পৌছায়নি। তাহলে কি সে আসবে না! এই আধঘণ্টার ভিতরে দুজনের মধ্যে মোবাইলে কোনো কথা হয়নি। সন্ধ্যা সাতটা বেজে দশ মিনিট। একটা ঝন ঝন শব্দ শোনা গেল। মেয়েরা চুরি পড়ে হাত নাড়ালে যেমন শব্দ হয় ঠিক সেরকম শব্দ। মিলন রেষ্টুরেন্টের দরজার দিকে তাকাল। দেখল দরজার সামনে শাড়ি পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে। বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটি রিয়া। অন্ধকার থাকায় ভিতরে ঢুকতে পারছে না। কিছুক্ষণের মধ্যে সব লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হল এবং আলোয় আলোয় ভরে গেল ঘরটি। লাল শাড়ি লাল টিপে অপূর্ব দেখাচ্ছে। মিলন কোনোভাবেই চোখ ফেরাতে পারছে না। সে এগিয়ে গেল। এক হাঁটু মেঝেতে ঠেকিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে বললো,

-স্বাগতম তোমায় স্বাগতম।

রিয়া হালকা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। রেষ্টুরেন্টের একটা সুন্দর টেবিল বেছে নিয়ে দু’জনে মুখোমুখি বসলো। এবং দুজন দুজনের দিকে তাকাল। কথা বললো। কিছু কথা মুখে, কিছু কথা চোখের ভাষায় আর কিছু কথা হলো ইশারায়। দুজনের চোখাচখি আর আলাপ বিনিময়ের পর তারা বাড়ি ফিরে গেল। তারপর দেড় মাস হলো তাদের মধ্যে কোনো দেখা সাক্ষাত নেই।

আজ রিয়ার বিয়ে। বাড়িটি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়িতে লাল নীল বাতি জ্বলছে। বাবা মায়ের একটি মাত্র মেয়ে রিয়া। অনেক ধুমধাম করে বিয়ে দিতে চায় মেয়েকে। তাই বড় আয়োজন করা হয়েছে। মিলন কোনো এক মাধ্যমে জানতে পারল আজ রিয়ার বিয়ে। সে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। সে রিয়াকে বলেছিল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী না হওয়া পযন্ত বিয়ে করবে না। ব্যবসা মুটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। এখন চায়লেই বিয়ে করতে। কারণ পারিবারিক ও সামাজিক ভাবেও সে একটি অবস্থান তৈরী করতে পেরেছে। কোনো কিছু চিন্তা না করেই মিলন মোবাইল কল করল রিয়ার কাছে।

রিয়া মোবাইল রিসিভ করল,

-হ্যলো।

-শুনলাম আজ তোমার বিয়ে?

-হ্যাঁ। তুমি ঠিকই শুনেছ।

-আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই কথাটা স্কুলের একজন কিশোর একজন কিশোরীকে যেভাবে বলে, তোমাকে কি সেভাবে বলে বোঝাতে হবে?

রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর বললো,

-তুমি আমার প্রতি উদাসীন ছিলে। এতো দিন তুমি আমার কোনো খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করোনি। কোথায় ছিলে এতো দিন যখন বাবা মা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছিল? এর আগে তোমার কথামত আমি দুটি বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাক্ষাণ করেছি। এ কারণে আমার বাবা-মা যে কত কষ্ট পেয়েছে সেটা আমি জানি। আমি আমার বাবা-মাকে আর কষ্ট দিতে চাই না।

-সরি, আমি স্বীকার করছি আমার ভুল হয়েছে। আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যেও না, প্লিজ। আমি তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না...

মিলন ও রিয়া পরস্পর দুজনকে অনেক ভালোবাসে। মিলনের সাথে রিয়ার বিয়ে না হলে মিলনের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। ঠিক তেমনি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলে রিয়া মন থেকে কখনো সুখি হতে পারবে না। তাহলে এখন কি করবে? তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল আজই বিয়ে করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে একটি মাইক্রোবাস ও তিনজন বন্ধু নিয়ে রিয়াদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল মিলন। কল করলো রিয়ার কাছে।

-হ্যালো।

-আমি তোমাদের বাড়ির সামনে একটা হলুদ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি চলে আসো।

-কি করে আসব বাড়িতে অনেক লোকজন। আর বাবা মা ড্রইং রুমে বসে আছে। বাসা থেকে বের হতে গেলে ড্রইং রুমের সামনে দিয়ে আসতে হবে।

-আমি কিছু জানিনা। তুমি চলে আসো।

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।

রিয়া কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। সবাই ডাকতে লাগল-

রিয়া কোথায় যাচ্ছিস? রিয়া... রিয়া...

রিয়ার বাবা মা ডাকতে লাগলো-

রিয়া আজ তোমার বিয়ে। তুমি কোথায় যাচ্ছ?

কারো কথা কানে না নিয়ে বাড়ির গেট থেকে বেরিয়ে হলুদ গাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মিলন দরজা খুলে দিল। গাড়িতে উঠেই রিয়া মিলনকে বললো-

তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও।

এদিকে রিয়ার বাবা মা আত্মীয় স্বজন খুব চিন্তায় পড়ে গেল। কোথায় গেল মেয়েটি! রিয়ার মোবাইল-ও বন্ধ। অনেক রেগে গিয়ে বাবা ব্যারেষ্টার মোঃ কামাল হোসেন তাঁর স্ত্রী-কে বললো-

তোমার মেয়ে এর আগেও দু দুটি বিয়ে ভেঙ্গেছে এবারও যদি সেরকম কিছু করে, তাহলে মা মেয়ে দুজনেরই খবর আছে।

একথা শোনার পর বাড়িতে আসা আত্মীয় স্বজনদের বুঝতে বাকি থাকল না রিয়া কোথায় গিয়েছে, কেন গিয়েছে!

পরের দিন সকাল দশটায় রিয়ার মোবাইল সংযোগ খোলা পাওয়া গেল। রিয়ার মা কল দিল। রিসিভ করেই হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করলো রিয়া।

-আমার ভুল হয়ে গেছে মা। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। মিলন-কে ছাড়া আমি বাঁচব না।

-আচ্ছা ঠিক আছে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু তুই যে কাউকে ভালোবাসিস এটা আমাদের-কে কেন বললি না?

-আমার ভুল হয়ে গেছে মা। আমাকে তুমি মাফ করে দাও।

-তোরা কি বিয়ে করেছিস?

-হ্যাঁ। আমরা গতকাল কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছি। মা আমি এখন রাখছি।

কথাটি বলে রিয়া মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। রিয়ার বিয়ের কথা ব্যারেষ্টার মোঃ কামাল হোসেন জানতে পারলেন। কথাটি শুনে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।

বিয়ের এক সপ্তাহ পর মিলনের বাবা মোঃ কামরুজ্জামান খান ব্যারেষ্টার মোঃ কামাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা করলেন। এবং বললেন,

-আপনার মেয়ে অর্থাৎ রিয়ার কোনো দোষ নেই। সব দোষ মিলনের। আমি সব শুনেছি। কারণ মিলন তাদের ব্যাপারে সিরিয়াস ছিল না। সিরিয়াস থাকলে এ সমস্যার সৃষ্টি হত না। আপনি ওদের মাফ করে দেন। ওরা-তো আমাদেরই ছেলে মেয়ে। তারা একটা ভুল করে ফেলেছে। তাই বলে-তো আমরা ভুল কোরে ওদের জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারি না। কি বলেন?

রিয়ার বাবা ব্যারিস্টার কামাল সাহেব প্রথম দিকে বিষয়টি মেনে না নিলেও পরে তাদের বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন।

তারপর অনেক ধুমধামের সাথে রিয়া এবং মিলনের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়