সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

রাক্ষুসে বোয়ালের পরিণতি

কনক কুমার প্রামানিক
রাক্ষুসে বোয়ালের পরিণতি

শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত অনিন্দ্য সুন্দর সোনাপুর গ্রামখানি। সবুজ শ্যামলের বৈচিত্র্যে ভরা সৌন্দর্য মন কাড়ে সকলের। আর দশটা গ্রামের চেয়ে সোনাপুর যেন একটু বেশিই সুন্দর। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট বোয়ালমারী নদী। যা গ্রামের নৈসর্গিক রুপকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যিই এ যেন কল্পনার এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার পরিবেশের মতো মানুষগুলোও খুব ভালো। সবার মাঝে রয়েছে মধুর একটা সম্পর্ক। ঝগড়াঝাঁটি নেই, নেই কলহ কিংবা ভেদাভেদ। যুগ যুগ ধরে এখানে হিন্দু-মুসলমান সকলে এক সাথে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছে। নামের মত সোনাপুর গ্রামটির প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সোনা। বর্ষাকালে বোয়ালমারী নদীতে প্রচুর মাছ আসে। গ্রামবাসীরা তখন মহোৎসবে একযোগে মাছ ধরতে নেমে পরে নদীতে।

অনেক কাল আগের কথা। একবার প্রলয়ঙ্করী বন্যায় বোয়ালমারী নদীর দুপাশের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। ডুবে যায় পুকুর-পুষ্করণী, রাস্তাঘাট আর ফসলের মাঠ। সে বন্যার জল সরতে প্রায় আট-দশ দিনের মত সময় লেগেছিল। সেবার গ্রাম খাদ্যাভাব দেখা দেয় কিন্তু ওরা একে অপরের সহযোগিতায় কিছুদিনের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। বন্যার জলে গ্রামের বড় পুকুরে ঢুকে পড়ে বিশাল দৈত্যাকৃতি এক বোয়াল মাছ। তারপর সে পুকুরের অন্য মাছগুলোকে খেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সে মাছ শূন্য করে ফেলে জলাশয়টি। খেয়ে খেয়ে সে ক্রমেই দানবের আকার ধারণ করে। রাতের বেলা পুকুরের পানিতে মহাতান্ডব শুরু করে। আস্তে আস্তে গ্রামের লোকজনদের মধ্যে প্রচন্ড ভীতির সৃষ্টি হয়। একদিন পুকুরের মালিক জেলেদের ডেকে এনে মাছ ধরার জন্য পুকুরে জালের টান দেয়। কিন্তু হায় কপাল! তাতে কোন মাছ ওঠে না। জেলেরা পুকুরে পরপর তিন তিনবার টান দেয়। কিন্তু একই অবস্থা। জালে কোন মাছ উঠে না। পুকুরের মালিক খুব নিরাশ হয়ে পড়েন। কপালে হাত দিয়ে পুকুরপাড়ে বসে পড়েন। খবরটা খুব তারাতারি চারপাশে ছড়িয়ে পরে। লোকজন এসে পুকুরপাড়ে ভীড় করে নানা জনে নানা কথা বলতে থাকে। বয়স্ক যারা ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই বললেন, এ নিশ্চয় মেছো ভূতের কাজ। সে নিশ্চয় রাত বিরাতে মাছগুলোকে সাবাড় করে দিয়েছে। এদিকে পুকুরে যতবার জালের টান দেয়া হয় ধুর্ত বোয়াল মাছটি পুকুরের এককোণে ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকে। তাই সে আর জেলেদের জালে ধরা পড়ে না। জেলেরাও নিরাশ হয়ে সেদিনের মতো চলে যায়। পুকুরটি এক রকম ভূতুরে পুকুরে পরিণত হয়। রাত বিরাতে আর কেউ ওদিকে যায় না। ছোট ছেলে মেয়েরা পুকুরে স্নান করতে নামলে পা কামড়ে ঘা করে দেয়। ভয়ে এখন আর কেউ পুকুরেও নামে না। সব মাছ শেষ হয়ে যাওয়াতে রাক্ষুসে বোয়ালটা পুকুরের নামা হাঁস, পাখি আর বকদের কৌশলে ধরে খেতে শুরু করে। সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। শান্তির এ গ্রামটিতে অশান্তির ছোঁয়া লেগে যায়। সবার মনে আতঙ্ক। কপালে চিন্তার ভাঁজ। কি করা যায়? ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যায়। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। এ ভাবনা যেন শেষই হয়না।

ঈদের কয়েকদিন আগে সন্ধ্যাবেলা কাজি বাড়ির রহমত কাজী শহর থেকে গ্রামে আসেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। অনেকটা পথ আসতে তার দীর্ঘ সময় লেগে যায়। পুকুরের কাছে এসে শান বাঁধানো ঘাটের কাছে এগিয়ে যান হাত মুখ ধোয়ার জন্য। জলে পা দিতে না দিতেই তুমুল বেগে তার দিকে তেড়ে আসে ক্ষুধার্ত রাক্ষুসে সে বোয়াল মাছটি। দ্রুত তিনি সরে যান সেখান থেকে। সরতে সরতে তবুও দাঁতের আঁচড় লেগে যায় তার পায়ে। খানিকটা রক্তও বের হয় । অল্পের জন্য রক্ষা পান রহমত কাজী। অনেকদিন কোন কিছু খেতে না পেয়ে সে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে গেছে। রহমত কাজী বোয়ালটিকে ভালো মতই দেখতে পান। অনেকদিন পর সে গ্রামে ফিরছিল। তাই গ্রামে এতকিছু ঘটে গেছে সে কিছুই জানে না। এখনকার মত সে সময় তো কারো হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। তাই তিনি কিছু জানতে পারেনি। রাতে গ্রামে বিরাট বৈঠক বসে। ছোট বড় সব লোক সেখানে আসে। রহমত কাজী সবিস্তারে সবকিছু বর্ণনা করেন। সবকিছু শুনে সবার চোখ কপালে উঠে। সিদ্ধান্ত হলো এ বোয়ালকে সাধারণ ভাবে ধরা যাবে না। পুকুর শুকাতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। পরদিন সকাল পুকুরের চার কোণায় চারটি শ্যালো বসানো হয়। ফলে দ্রুত জলে শুকিয়ে আসে। দুপুর নাগাদ দৈত্যাকার বোয়াল মাছটি সবার নজরে আসে। শুরু হয় তার তুমুল ছটফটানি। কাদার মধ্যে তার দাপাদাপিতে মনে হচ্ছিল যেন সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে। দুপুরের পরপরই সম্পূর্ণ পুকুরের জল শুকিয়ে যায়। প্রথমে পুকুর মালিক লম্বা এক লাঠি হাতে নেমে পড়লেন পুকুরে। তারপর ক্রোধান্বিত হয়ে লাঠির কয়েকটা ঘা বসিয়ে দিলেন বোয়ালটার মাথায়। নিস্তেজ হয়ে পড়ে মাছটা। তুমুল উল্লাস ধ্বনিতে ফেটে পড়ে সমস্ত পুকুর পাড়। এতো বিশাল ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে যায়। তারপর পনেরো বিশ জন লোক পুকুরে নেমে মাছটিকে তুলে গ্রামে নিয়ে যায়। এতো বিশাল আকৃতির বোয়াল মাছ যে এতগুলো লোক মিলে নিয়ে যেতেও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল। তারপর মাঝরাত অবধি চলে সে বোয়াল মাছ দিয়ে খানাপিনার মহা আয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়