রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সুখি পরিবারের সমাপ্তির গল্প

তাসমিয়াহ রহমান দিপা
সুখি পরিবারের সমাপ্তির গল্প

সুমি ও সুমন বিয়ের কয়েক বছর পর লম্বা কোন ভ্রমণে যাচ্ছে। বিয়ের ৩ বছর পর ওরা এই প্রথম কোন ভ্রমণের জন্যে বের হয়েছে। সাথে তাদের দেড় বছরের ছেলে বর্ণও আছে। খুবই চঞ্চল বর্ণের এই প্রথম ভ্রমণ ওদের মা বাবার সাথে। সুমি ও সুমনের বিয়ে হয়েছে ৩ বছর হলো। ওরা দুজনেই চাকুরীজীবী। বিয়ের মাত্র কয়েক মাস আগে সুমন একটি ব্যাংকে চাকরি পায়। বিয়ে এবং সংসার সামলাতেই অর্থ এবং সময়ের কারণে কোথাও ওদের একসাথে যাওয়া হইনি। এই নিয়ে সুমি যদিও সুমনকে কখনো কিছু বলেনি তবুও সুমনের মনে মনে কষ্ট ছিল কারণ ওরা দুজনেই ঘুরতে খুব পছন্দ করে। সুমি খুবই রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিল, তাই বিয়ের আগে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি। তাই সুমির ইচ্ছা ছিল বিয়ের পর স্বামীর সাথে ঘুরবে। কিন্তু বিয়ের ৩ বছরেও সুমি এই নিয়ে সুমনকে কিছু না বললেও সুমন আজ যেন শান্তি পেল। কারণ তারা আজ তাদের বর্ণকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। ছেলেও যেন মা বাবার এই আনন্দ বুঝতে পেরে চুপ করে চারদিকটা চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। পথে যেতে যেতে দূরের সরিষা ক্ষেতের দিকে চোখ যেতেই সুমনের মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগের কথা। ওরা দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনতো। একবার যখন সুমন সুমিকে কোন ফুল দিতে চেয়েছিল তখন সুমি তার কাছ থেকে সরিষা ফুল চেয়েছিল। সুমি সেই সরিষা ফুল দেখে কী যে খুশি হয়েছিল এখনও তার চোখে ভাসে। সুমিকে বউ হিসেবে পেয়ে সুমন খুব খুশি এবং নিজেকে বেশ সুখী মনে করে। কারণ অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও সুমি সবকিছু আপন করে নিয়েছিল তার পরিবারকে, সংসার সামলিয়েছে। এতো সুন্দর করে সবকিছু আগলে রাখার ক্ষমতা একমাত্র সুমিরই আছে বলে সুমন মনে করে। পথে যেতে যেতে তারা দুজনেই খুব আবেগী হয়ে উঠতে শুরু করলো। কারণ এই দিনটি তাদের জন্য খুব প্রতিক্ষার ছিল। তাদের ৪ বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে। শূন্য থেকে যাত্রা। এতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে তাদের পথ আগানো সহজ হতো না। যদি ওরা দুজনই দুজনকে এই ক্রেডিট দিতে চায়। আশপাশের অহেতুক ঝামেলা কিংবা কুটনামি কোন কিছুকেই তারা পাত্তা না দিয়ে একে অপরের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে। সুমন ও সুমন দুজনই চাকরি করে, অতিরিক্ত টাকার জন্য সুমি টিউশন করিয়েছে। তারা দুজনেই তাদের আর্থিক অবস্থা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছে। ২ বছরের মধ্যে তারা ভালো একটা বাড়ি বাড়া নিয়ে এখন খুব স্বচ্ছল অবস্থায় আছে। তারা মনে করেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকাটা খুব জরুরি একটা সংসারের সিদ্ধান্তে আসতে। সুমিও সংসারে সমানভাবে তার মতামত প্রকাশ করতে পারে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারে। সুমনকে সুমি কখনো অহেতুক হস্তক্ষেপ করে না। তাদের মধ্যে সম্পর্কটা শুধু এখন প্রেম করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই, তারা পরস্পরকে বুঝতে চেষ্টা করে, শ্রদ্ধা করে, খারাপ সময়ে পাশে থাকে। সুমন এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের পায় না। সুমি কানে এয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে, ভ্রমণে তার গান শুনতে ভালো লাগে বলেই সুমন তাকে এটি কিনে দিয়েছিল। হঠাৎ কিসের জন্য একটা ধাক্কায় সুমন চিৎকার করে উঠে। সুমি তার ছেলে বর্ণকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। চারদিক কেমন অন্ধকার লাগছে, সুমির মাথা কাজ করছে না। পাশেই তো সুমন ছিল, সুমনকে দেখতে পাচ্ছে না! সুমির মাথা ভনভন করছে। হঠাৎ বর্ণের মাথা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে সুমির সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মাথা কাজ করছে না। সুমনকে দেখতে না পেয়ে সুমির প্রায় পাগলপ্রায় অবস্থা। চারদিকে মানুষের চিৎকার চেচামেচি, কেউ সেলফি তোলায় ব্যস্ত, কেউ হতাহত মানুষের মালপত্র চুরি করায় ব্যস্ত। চারদিকে রক্ত আর রক্ত।প্রায় অচেতন প্রায় সুমি তার ছেলের কপালে একটা চুমো দিয়ে ছেলেকে আরো জড়িয়ে ধরলো। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহত লোকদের হাসপাতাল নেয়ার ব্যবস্থা শুরু করে দিল। এর মধ্যেও সুমি তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ছিল আর সুমনের জন্য বুকটা হো-হো করছিল। সুমির মনে পড়লো যে ড্রাইভার গাড়িটি চালাচ্ছিল তাকে দেখে মনে হয়েছিল নেশাগ্রস্ত এবং গাড়িও ভালো করে চালাতে পারছিল না। তখন সুমন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করেছিল লাইসেন্স আছে কিনা, ড্রাইভার কেমন যেনো এক রহস্যময় হাসি হেসে বিড়বিড় করে কী যেনো বলছিল। সেই রহস্যভরা হাসির বিড়বিড় করা কথাগুলোর জন্যই কী আজ সুমি -সুমন ও তাদের আদরের ছেলে বর্ণের আজ এই পরিস্থিতি সুমির এই অস্থিরতার মাঝেই সে চুপ হয়ে গেলে। উত্তর পাওয়ার সময় হয়নি।

অতঃপর হয়তো একটি সুন্দর সংসারের ইতি ঘটলো। কতইনা স্বপ্ন ছিল তাদের এই ভ্রমণকে ঘিরে। স্বপ ছিল তাদের ছেলের মুখে মা ডাক শুনবে, বর্ণমালা শিখাবে, স্কুলে ভর্তি করাবে! অথচ এই দুর্ঘটনা তাদের স্বপ্নকে কেড়ে নিল। আর কত কী কেড়ে নিল তাদের জীবন থেকে সেটি হয়তো আমরা কখনো জানতেই পারবো না! এইভাবেই শেষ হলো একটি সুন্দর, সুখি পরিবারের সংসারের গল্প।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়