প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তৃপ্তি সাহার জন্মদিন এবং আত্মজীবনী লেখার দাবি
‘পড়ুন। পড়ুন। পড়ুন। শুধু এক ধরনের বই পড়বেন না। বিভিন্ন লেখকের বই পড়ুন, যাতে আপনি বিভিন্ন শৈলীর বিকাশ করেন- আর এলস্টাইন’। আর এলস্টাইনের শব্দভাণ্ডারে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তৃপ্তি সাহা। ফুটন্ত তারুণ্যে বই ছিল তাঁর প্রিয় সখা। কর্মজীবনে সরকারি দপ্তর পালাবদলে লাইব্রেরিয়ান থেকে পর্যায়ক্রমে পদন্নোতির আসনযুক্ত হয় লাইব্রেরি উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাউশি। একজন গ্রন্থাগারিক বই পড়ান না। বইয়ের সন্ধান দেন। একজন শিক্ষক ডিপার্টমেন্টালি বিষয়ের বই অনুসন্ধানে থাকেন সাধারণত। তৃপ্তি সাহা একান্ত অধ্যবসায় দিয়ে বিভিন্ন বিষয়াবলি বইয়ের সন্ধান দিতেন দায়িত্বশীল ভূমিকায়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ডিপার্টমেন্টালি ভালো লেখকদের বইয়ের সন্ধান দিয়ে সকলের প্রিয় তৃপ্তি সাহা ম্যামে ভূষিত হন। এক্ষেত্রে তৃপ্তি সাহা ম্যামের ভূমিকা ছিল শিক্ষকের ন্যায় অগ্রগণ্য। বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে গ্রন্থের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। অনায়াসে গ্রন্থের তথ্যভাণ্ডারে নিজেকে সমৃদ্ধশালী করেছেন। সাথে সাথে জ্ঞানপিপাসায় তৃষ্ণা মিটিয়ে সমৃদ্ধি হয়েছেন বিদ্যার্জনকারীরা। যাঁর বিস্তার ব্যাপ্তি প্রসার অবলোকন করা হয়েছে বিভিন্ন দিনলিপিতে।
সরকারি কর্মজীবীরা সাধারণত শেষ বেলায় গুটিয়ে থাকেন। অথচ এই সময় দায়িত্বভার বেশি অর্পণ হয়। বেশিরভাগ নিজেদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সঞ্চিত জ্ঞান অকাতরে বিলিয়ে না দিয়ে দিনক্ষণ জপতে থাকেন বিদায় ঘণ্টার। ব্যতিক্রম, বুদ্ধি দীপ্ত তৃপ্তি সাহা অনন্য ভূমিকায় ছিলেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে যুগোপযোগী আধুনিক স্মার্ট বই সংরক্ষণ তত্ত্বাবধায়ন পরিবেশন রুচিশীল গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টতায় কার্যক্রম পরিচালনা করে হয়েছেন নন্দিত। যাঁর ভূয়সী প্রশংসায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিদায়ী অনুষ্ঠানটি ছিল তাঁর সৌজন্যে আড়ম্বরপূর্ণ (প্রথম ব্যক্তি), যা চাঁদপুরের জন্যেও সুখর অনুভূতির।
চাঁদপুরে এক সম্ভ্রান্ত সাহা পরিবার। অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা ও অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। একই পরিবারে তৃপ্তি সাহার জন্ম। যে পরিবার বইয়ের সঙ্গে মিতালী এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ‘পৃথিবী তাদেরই, যারা বই পড়ে- রিক হল্যান্ডে’র এ উক্তি তৃপ্তি সাহা পরিবারে বাস্তবতায় দৃশ্যত। জন্ম শিক্ষা-কর্মের উল্লেখযোগ্য সময় চাঁদপুরে অতিবাহিত করেন। সেই জন্য তৃপ্তি সাহা নিজ নামে চাঁদপুরের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সুধীজনের কাছে পরিচিতমুখ। একটি ভালো বইয়ের ভাষা ও উপজীব্য প্রচ্ছদের ন্যায় তৃপ্তি সাহার জীবনাচারণ। ব্যক্তিগত রুচি আভিজাত্য কোমল ভাষার শুদ্ধতায় নিপুণ শৈলীর জীবনরূপে সবার আন্তরিকতার পরশে অভিষিক্ত থাকেন তৃপ্তি সাহা। চাঁদপুরের সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দের আয়োজনে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমিতে ২৬ জানুয়ারি তৃপ্তি সাহার শুভ জন্মদিন উদযাপন করা হয়। শুভাকাঙ্ক্ষী-শুভানুধ্যায়ীদের কণ্ঠমালায় ভেসে আসে জ্ঞানের-গুণের বন্ধুত্বের দায়িত্ববোধের স্নেহের আঁচলে আগলে রাখার অজানা হৃদয়স্পর্শী কথামালা। উন্মুক্ত হয় অধরা বন্ধুত্বের বিকাশ। শীতের চাদর উপেক্ষা করে লাকসাম থেকে সরাসরি জন্মোৎসব সন্ধ্যায় হাজির হয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা করুণ কণ্ঠে ‘মা’ সম্বোধনে স্মৃতিচারণে জীবনে বেঁচে যাওয়ার অনুপ্রেরণা-সাহস-জোগানোর শব্দচয়নের সময় সত্যি অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য্যতা এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করে। শিক্ষক না হয়েও শিক্ষত্রী মায়ের স্বরূপ ধরা দেয়।
পিনপতন নীরবতায় শব্দের মূর্ছনা বাইরের ডাক-ঢোলের ঝংকারের অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য হয়ে উঠে। উল্লাসে সব্যসাচী লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার স্মৃতিচারণে চলে আসে হাতের কব্জি ভেজানোর সমাদর ও তৃপ্তি সাহা একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। এই গুণীজনের সাথে আমার বন্ধন চাঁদপুর কণ্ঠের সুবাদে। সাহিত্য একাডেমির প্রোগ্রামে একদিন লেখার প্রশংসা করতেই স্মিত হাসিতে ধন্যবাদ জানালেন। তাঁর সৌজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠে বিষয়ভিত্তিক ফিচার প্রতিযোগিতা ‘বেদনার স্মৃতি’ লিখে মিশে আছি তাঁর একান্ত আনন্দ বেদনার স্মৃতির মায়াজালে।
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। তৃপ্তি সাহা একজন সরকারি চাকুরিজীবী। একজন লেখক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘জীবনের গান’ (২০২০)। উচ্চশিক্ষা অর্জন করা মেয়েরা রান্না-বান্নায় পারদর্শী না বলে অনেকে মন্তব্য তুলেন। তৃপ্তি সাহা একজন তৃপ্তিদায়ক রন্ধনশিল্পী হিসেবে বন্ধুমহলে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
তৃপ্তি সাহার শিক্ষা কর্মজীবন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণে মুখরিত হয় অনুষ্ঠানস্থল। বন্ধুর-বন্ধনে, জ্ঞানে-গুণে-কর্মে একই সুতোয় বেণি বাঁধে অনুষ্ঠানের সভাপতি কাজী শাহাদাত। তৃপ্তি সাহা ও কাজী শাহাদাত দুজন ক্লাসমেট। দুজনের গল্প, গল্পের মহড়ায় তাড়িয়ে বেড়ায় ফেলে আসা স্মৃতির আয়না।
অনুভূতির অনুভবে ‘আত্মজীবনী’ লেখার প্রসঙ্গ উঠে আসে। চাঁদপুর জেলার ইতিহাসে প্রায় চল্লিশ বছর কাজী শাহাদাত বিন্দু থেকে শিহরণে আজ। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক, রোটারিয়ান, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের দুবারের সভাপতি ও আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত সদস্য, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক, চাঁদপুর বিজয় মেলা ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত সংগঠক, টিআইবি-সনাক, চাঁদপুর সাঁতার পরিষদ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্ষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ও করেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিবিড়ভাবে নিয়োজিত আছেন। সর্বোপরি একজন লেখক।
আত্মজীবনী লেখার সময় অতিবাহিত হতে চলেছে। অতীতের স্মৃতি-কোলাহল এখনো সংরক্ষিত আপন অস্থিমজ্জায়। বয়সের বেড়াজালে, স্মৃতিরা ঝরে পড়ে। তৃপ্তি সাহার জন্মদিনের উৎসবে মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের উপস্থাপনায় কাজী শাহাদাতের আত্মজীবনী লেখার তাগিদ এক উল্লেখযোগ্য ‘দাবি’।
তৃপ্তি সাহার সুস্বাস্থ্য-স্মিত হাসি জড়িয়ে থাকুক অবিরাম। ধারাবাহিক কর্মণ্ডপরবর্তী আপনার জীবনে, আনন্দচিত্তে, নিত্যসঙ্গী ও অকৃত্রিম বন্ধু হবে বই বই এবং বই। অশেষ শুভকামনা।