শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কতদূর আর কতদূর

সোহেল নওরোজ
কতদূর আর কতদূর

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে সবে ঢাকায় এসেছি। বাড়িঘর, আপনজন ছেড়ে সেই প্রথম বাইরে থাকা। কোচিংয়ের ক্লাস শেষ করে কিছুই করার থাকত না। খুব একা একা লাগত। ঢাকায় কোনো বন্ধুবান্ধবও ছিল না, যাদের সঙ্গে সময় কাটাব। মফস্বল শহরের মায়া আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রাখত।

একদিন কোচিং শেষ করে ফার্মগেট ওভারব্রিজের ওপরে উঠেছি। দেখি আনন্দ সিনেমা হলের দেয়ালজুড়ে বড় স্ক্রিনে দেখাচ্ছে- পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব মাগো বলে কবে শীতল হবো/কতদূর আর কতদূর বলো মা...

মুহূর্তেই চোখ ভিজে যায়। বুকের ভেতরটা শূন্যতা দখল নেয়। আমার কথাগুলোই যেন চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে অনুরণিত হচ্ছে!

একটু দূরেই গোল টুপি আর স্পোর্টস ক্যাপের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন মাঝবয়সি এক লোক। তিনি বোধহয় আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন! মনের অবস্থাটাও পড়তে পারছিলেন! ইশারায় আমাকে ডাকেন। আমি চোখ মুছে তার কাছে যাই। লোকটি এক সমুদ্র বিষাদ ছড়িয়ে বলেন, বাবা ঢাকায় যখন আইছো, ভালোমতো পড়বা। হাসিখুশি থাকবা। কেউই চিরদিন বাপ-মার কাছে থাকে না। নতুন আইছো পরথম পরথম একটু খারাপ লাগবেই। কয়দিন পরেই ঈদ। তখন তো ঠিকই বাড়ি যাবা। আর এখন যদি পড়াশোনা না করে মন খারাপ কইরে থাকো, তাইলে আমার মতোন ঈদেও বাড়ি যাতি পারবা না। ঈদের আগের দিন রাতে আর ঈদের দিন সকালে টুপির বিক্রি ভালো হয়। কয়ডা বাড়তি টাকার জন্যি এই শহরেই থেইক্যে যাই। বাড়ি ছেড়ে দূরি থাকার এই কষ্ট কাউরে বুঝাতি পারব না।

লোকটার জন্য হঠাৎ খুব মায়া হয়। তার কথাগুলো আমার কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই আমি ক্যাপ পরতে পছন্দ করি। চিত্রনায়ক সালমান শাহ এই প্রবণতার প্রধান কারণ। তার ফ্যাশন আমাকেও সংক্রমিত করেছিল। লোকটার কাছ থেকে গাঢ় নীল রঙের একটা ক্যাপ নিই। ক্যাপের সামনে আমার নামের আদ্যক্ষর লেখা ছিল। লোকটা ক্যাপের বিনিময়ে টাকা নেয় না। এটা ছিল তার পক্ষ থেকে আমার জন্য ঈদের উপহার!

ঈদে সেই ক্যাপ পরেই বাড়ি ফিরেছিলাম। অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিল। বারবার করে তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম আর খুব করে চাইছিলাম সে যেন তার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারে। লোকটার দেওয়া ক্যাপটা আজও যত্ন করে তুলে রেখেছি।

সেই ঈদের পরে গিয়ে লোকটাকে আর ওভারব্রিজের ওপর পাইনি। এদিক-ওদিক খোঁজ করেও দেখা মেলেনি। লোকটা তার পেশা বদলেছিল কি না জানা নেই। আজও ঈদ এলে জানতে ইচ্ছা করে, লোকটা কি তার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছে, নাকি একা একা আড়ালে চোখের পানি ফেলছে!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়