প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০
চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত নায়ক তথা শক্তিমান অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান দুলু (ফারুক) (৭৪)-এর মৃত্যুতে শোকাভিভূত। তিনি ১৫ মে ২০২৩ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। কিংবদন্তি এ নায়কের মৃত্যুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে একটি ইতিহাসের ছন্দপতন ঘটলো। বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল চলচ্চিত্র শিল্পের, যা কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়, অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমী খাঁটি বাঙালি সংস্কৃতির মানুষ।
চাঁদপুর বিজয় মেলা মঞ্চে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপস্থিত হয়ে একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেইদিন চাঁদপুর হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ আশেপাশে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রিয় অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান দুলু (ফারুক)-এর মুখে যুদ্ধকালীন স্মৃতিকথা শুনেছিলেন। বিজয় মেলায় আসছেন নায়ক ফারুক, তা পূর্বেই জেনেছিলাম। আর সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি যে মিঠুন ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। তৎকালীন সময় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার অন্যতম সংগঠক অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বর্তমান মহাসচিব হারুন আল রশীদ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বিষয় জানালে আমাকে উৎসাহ দিয়ে তাঁরা বলেছিলেন, ঠিক আছে তুমি প্রস্তুত থেকো।
আমার বন্ধু ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আঃ করিম হাওলাদারসহ আমরা সেইদিন প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে বিজয় মেলা মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফুলের তোরা ও সংগঠনের স্মরণিকাসহ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। তখন মেলা মঞ্চে উপবিষ্ট রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শক্তিমান অভিনেতা বাংলাদেশের মিয়া ভাই খ্যাত নায়ক ফারুক। তাঁকে বিজয় মেলার পক্ষ থেকে ক্রেস্ট, শুভেচ্ছা ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো শেষে, যতটুকু মনে পড়ে, হারুন আল রশীদ ভাই মাইকে ঘোষণা দিলেন দেশবরেণ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা নায়ক ফারুক সাহেবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবে আন্তর্জাতিক সেবা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন মিঠুন ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি পলাশ কুমার দে, সহ-সভাপতি আঃ মমিন মিতু, সাধারণ সম্পাদক আঃ করিম হাওলাদারসহ সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। আর ঘোষণার সাথে সাথে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে মঞ্চে উঠলাম এবং শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা নায়ক ফারুক হাত বাড়িয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন একান্ত আন্তরিকতায়, সাথে ছিল সংগঠনের স্মরণিকা।
মেলা মঞ্চে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দের ছবি তোলা পর্যন্ত নায়কের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, তিনি চমৎকার হাসি হেসে জানতে চাইলেন কতদিন ধরে চাঁদপুরে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর নামে সংগঠন করা হচ্ছে, এ সময় পাশে থাকা শ্রদ্ধেয় অ্যাডঃ মোঃ জহির ভাই বলেন, ভাই ওর নাম পলাশ। ও অনেক বছর ধরে চাঁদপুরে সংগঠন করছেন অভিনেতা মিঠুন দার নামে। তখন সাথে আমিও বললাম, একযুগ পার হয়েছে মিঠুন দার সাথে দেখা করে ওনার নামে সংগঠন করেছি চাঁদপুরে ১৯৯৭ সালে। বললাম, আপনি চাঁদপুর আসছেন তাই অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা আপনাকে। তারপর মঞ্চ থেকে নেমে মানুষের ভিড়ের মাঝ থেকে সরে গিয়ে অঙ্গীকারের কাছে এসে অপেক্ষায় থাকি নায়ক ফারুকের বক্তব্য শোনার জন্য। সেইদিনের স্মৃতি সত্যিই মনে রাখবার মতো। তার কারণ হলো, যখন তিনি তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন, তখন চাঁদপুরে মিঠুন ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন সংগঠন রয়েছে জেনে খুব খুশি হয়েছেন এবং তাঁর ভালোবাসা জানালেন সংগঠনের সকল সদস্যদের। সেইদিন নায়ক ফারুক প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো মিঠুন দাকে ও সংগঠন গঠন নিয়ে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন বক্তৃতায়।
নায়ক ফারুক মিঠুন ফ্রেন্ডস নিয়ে মেলা মঞ্চে বক্তব্য দেয়ায় আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, মিঠুন চক্রবর্তী ও সংগঠন নিয়ে কিছু বলবেন! আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। আসলেই তিনি অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন। আজ তিনি নেই। চিরকালের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তিনি বেঁচে রবেন হাজার বছর, তাঁর সৃষ্টিশীলতা, দেশ প্রেম ও অভিনয়ে হাজার বছর তাঁর ভক্ত ও সাধারণ মানুষের মাঝে। পরিশেষে, সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।