প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
অফিসে যাওয়ার সময় ওর জন্য বাড়তি একটা সিট নিয়ে যেতে হয়। দুইটা স্টপেজ পর ও বাসে ওঠে। যেদিন থেকে আমার ওপর এ গুরুদায়িত্ব অর্পেছে, সেদিন থেকে আরও অনেক কিছুই মেনে নিতে শিখেছি। যেমন ও বাসে ওঠার পর জানালার পাশের আসনটা অবধারিতভাবে ছেড়ে দেওয়া। অফিসের ঠিক আগের স্টপেজে নেমে বাকি পথটুকু হেঁটে যাওয়া। হঠাৎ বৃষ্টি এলে তড়িঘড়ি ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে ওর মাথার ওপর মেলে ধরা। এসবে আমার অবশ্য ক্লান্তি নেই; বরং যদি কোনো কারণে ও একদিন অফিসে না আসে, তবে দিনটাকে বড্ড দীর্ঘ আর মলিন মনে হয়। জানালার পাশের সিটে বসেও অফিসের পথটুকু মহাকাশযাত্রার মতো দীর্ঘ ও দুরূহ লাগে। রোদণ্ডবৃষ্টিতে ছাতা মেলতে ইচ্ছে করে না। অল্পতেই বিরক্ত হই।
ওর একটা নাম দিয়েছি, কাশকন্যা। প্রথমবার আমার মুখে এ নাম শুনে তো হেসেই খুন!
-কাশফুলের মতো ফর্সা বলেই কি এ নাম দিলে?
-তা হবে কেন! কাশফুল আমার ভীষণ প্রিয়। তোমার মধ্যে শুভ্র একটা ব্যাপার আছে। তা ছাড়া...
-তা ছাড়া কী?
-আমার একটা স্বপ্ন আছে।
-কী স্বপ্ন?
-এখন বলা যাবে না। কোনো একদিন তোমার কানে বলব।
২.
শরৎকাল শেষ হয়ে আসছে। রুদ্র-কঠিন প্রকৃতি নরম হতে শুরু করেছে। জানালার পাশের সিটে আমি বসে আছি। পাশের যাত্রী অচেনা। রাস্তার দুই পাশের বিস্তীর্ণ মাঠের ঘন শুভ্র কাশফুল দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হওয়ার ব্যর্থ প্রয়াসের মধ্যেই মুঠোফোন বেজে ওঠে। কাশকন্যার নম্বর ভাসছে। গত সপ্তাহে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। অফিসে হঠাৎ একদিন ‘আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে রে! হবু স্বামী চাইছে না বিয়ের পর আর চাকরি করি। আমি দ্বিমত করিনি। চাকরিটা ছেড়ে দেব’, বলে হুট করে চাকরি ছেড়ে দেয়। ওর সামনে আমার চোখ দুটো নামিয়ে রাখি। যদি এ চোখের ভাষা পড়ে ফেলে! সে সম্ভাবনা অবশ্য ক্ষীণ। এত দিন যখন পারেনি...! কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে স্নিগ্ধ-রিনরিনে কণ্ঠ।
-তুমি নিশ্চয় অফিসে যাচ্ছ? কী যে একটা বোরিং লাইফ পার করেছি, উফ!
নিজের বিস্ময় আড়াল না করেই বলি, তাই নাকি!
-হুম। আচ্ছা, তুমি না বলছিলে কী যেন বলবে? এখন বলো। নইলে আবার ভুলে যাব।
-আমি তো কাশকন্যার কানে কানে বলতে চেয়েছিলাম।
-ওই একই কথা। মোবাইল তো আমার কানেই ধরা!
দ্রুত নিজেকে সামলে নিই। কাশবনের মধ্যে কাশকন্যার জন্য স্বপ্ন বাড়ি বানানোর কল্পনা দূরে সরিয়ে রাখি। নতুন কথা সাজাই।
-তেমন কিছু না। কোনো এক শরতে তুমি মানে তোমরা মিলে কাশবনে ঘুরতে যেয়ো। ভালো লাগবে।
-তুমিও কি তোমার বউকে নিয়ে কাশবনে ঘুরবে?
কথা জড়িয়ে আসার আগেই ক্রস বাটনে চাপ দিই। মনের কথাগুলো যন্ত্রের মাধ্যমে ইথারে ভাসিয়ে দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তার চেয়ে ভালো নিজের ভেতরেই পুষে রাখি। কাশকন্যা তার মতো করে ভালো থাকুক।