প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
কাচের মিহি কণার মতো অশ্রু। ইরিনা সবার অলক্ষে চুপিসারে অশ্রুফোঁটা মুছে নেয়। দুঃখ লুকানোর মতো অভিনয় জগতে আর নেই। বাইরে ঝলমলে হাসি আর অন্দরে ছাইচাপা আগুন সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলে। তবু জানতে পারে না কেউ। কারও কারও জীবনময় এই দুঃখ লুকানোর নিখুঁত কর্মে কেটে যায় বেলা। ইরিনা ভাবে, জীবন এত পোড়ায় কেন?
সামান্য ক'টা দিনের ব্যবধানে আজ এতটা কণ্টকময়, এত নীরস জীবন। অথচ এই সেদিনও হৃদয়ের অরণ্যে বসন্ত দোল খেয়েছে। তখনও ভাবিনি, তোমাকে নিয়েও এভাবে ভাবতে হবে, লিখতে হবে। অথচ কিছুই লেখা হয়ে ওঠে না আমার। তোমার বিস্তীর্ণ স্মৃতির কণাগুলো জট পাকিয়ে স্তূপ হয়ে আছে আর অন্তরের দিগন্তজুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে যে তাকে ঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারি না। তুমি যেন এক মায়া, যাকে অনুভব করা যায় কিন্তু প্রকাশ করা যায় না। আমার ভাবনাজুড়ে তোমার উপস্থিতি, তবু তোমাকে চিহ্নিত করার কোনো শব্দ আমার কাছে নেই।
সময় এভাবেও বদলে যেতে পারে বিশ্বাস হয় না ইরিনার। ভাগ্যকে দোষ দিয়ে বলে, 'এর থেকে ভালো আর কবেই ছিলাম আমি! জীবনজুড়েই আঁধারের মাঝখানে একফালি আলোকরেখা আগলে বেঁচে উঠেছিলাম, যে আলো কখনও জ্বলেনি, তবুও আপন মনের আঁধার ঘোচাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে তো আলো ছিল না, ছিল আলেয়া, মায়া, মরীচিকা।’
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে ইরিনা তখন নিজের বেদনার ঝুড়ি নিয়ে স্রষ্টার কাছে অশ্রুবিয়োগে কাতর হয়ে নিজেকে সান্ত¡না দেয়, যিনি দুনিয়ায় এনেছেন, নিঃশ্বাস দিয়েছেন, সুস্থতার নিয়ামত দিয়েছেন- তবুও হতাশ কেন হই? এই যে সুখটুকু আমাকে দিয়ে আবার নিয়ে নিলেন, নিশ্চয়ই এটি আমার জন্য পরীক্ষা। ইরিনা অশ্রু মুছে নেয়। বলে, আমি কেন নিজেকে দুর্ভাগা মনে করব, যা আমার তা আমারই হবে, আর যা হওয়ার নয় তা হবে না। আমি যত একা হব ততই আমার অন্তর আমার স্রষ্টার জন্য প্রসারিত হবে, আমি যত নিঃসঙ্গ হব ততই তিনি আমার নিকটবর্তী হবেন। ইরিনা বুঝতে পারে, আঁধার যত আসুক, আঁধারেই হয় আরাধনা। আবার আঁধার ফুরিয়ে গেলেই আসে আলো। সেই আলোর অপেক্ষায় আমরা বেঁচে থাকি, বাঁচতে হয়।