প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
টিউশনি পড়াচ্ছি। রাত দশটা। আমার পাশেই বসা নবম শ্রেণির শ্যামলা সুন্দরী। যে চোখে কাজল দিলেই শয়তান আমাকে ফিদা করে দেয়! আজন্ম কাজলের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। এজন্যেই আমি তাকে মনে মনে কাজলিনী বলি। মাঝে মধ্যেই ওর প্রতি আমার অনুভূতি তৈরি হয়। সেই সাফল্যের একমাত্র দাবিদার সাবেক ফেরেশতা সর্দার। সে আমাকে অহর্নিশি উপদেশ দেয় তাকে নিজের করে নেয়ার। আমি তার দিতে কুদৃষ্টি দিতে চাই না। শত হলেও সে আমার ছাত্রী।
আমি কাজলকে ভূত ভেবে মন থেকে সরাতে চাই। কিন্তু ইবলিশ ছাত্রীর চোখে বসে। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ রূপসী-হুর হয়। আমি দিওয়ানা হয়ে যাই। দেখতে দেখতে একসময় আমার মুগ্ধতা কমে আসতে থাকে। শয়তান তাৎক্ষণিক ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে। ঠোঁটে এসে মনোরোম নৃত্য শুরু করো। দাঁতকে সে নাভি হিসেবে দেখায়। আর আমি উন্মাদ হয়ে। যুগ-যুগান্ত ধরে আগুনে বসেও সেই নৃত্য দেখতে মন চায়। কবির মতো, মদের গ্লাসে খরগোশ চুবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে!
এক সময় ঘণ্টা পুরে যায়। ছাত্রীর কলমের খোঁচায় আমার ঘোর কেটে যায়। আমি বাড়িতে চলে এসে ভাবি এভাবে চলতে দেয়া যায় না। আমি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আগে থেকেই ছাত্রীও আমার জন্যে উন্মাদ হয়ে আছে! বহুবার প্রত্যাখান হওয়ার পরও প্রস্তাব করেই যাচ্ছে! কাউকে কিছু বলতে পারি না। বলতে গেলে টিউশনিটা চলে যাবে।
একদিন চরম মাত্রা চলে আসলো। আমাকে নোট দিতে গিয়ে আমার হাত ধরে ফেললো! আমি তড়িঘড়ি হাত সরিয়ে দিয়ে সেদিনের মতো চলে আসলাম। আমি বাড়িতে এসে সিদ্ধান্ত নিই। আর বাড়তে দেয়া যায় না। পাপ কাজের চেয়ে বেকারত্বের ডিপ্রেশন অনেক ভালো। আমি সকালে ছাত্রীর অভিভাককে ঠাণ্ডা মাথায় অজুহাত দেখিয়ে টিউশনিটা বাদ দিয়ে দেবো। কিন্তু শয়তান তার আগেই মাস্টারপ্লান করে রেখেছে!
এদিকে ছাত্রী তার মাকে বলে, আমি খুব ভালো পড়াই। আমার জন্যে তার রেজাল্ট তিনগুণ ভালো হচ্ছে। আমার মতো বিনয়ী, ভদ্র, ধার্মিক টিচার কোথাও সে দেখেনি। আমি কল করি। টিউশনি বাদ দেয়ার কথা বলি। তারা জানতে চায় কেনো বাদ দিচ্ছি। আমি অজুহাত আনি অর্থের, যাতায়াত, চাকুরির। কিন্তু কোনোটাই টিকে না। আমার বেতন দ্বিগুণ হওয়ার প্রস্তাব আসে। পরিবারের কাছে কথা পৌঁছে। তাদের জন্যে বাদ দেয়া হয় না। অন্যদিকে শয়তান ধোঁকা দিকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
আমি রাগ নিয়ে টিউশনিতে আসি। কিন্তু ছাত্রী আমার মন হালকা করে দেয়। তাকে এক বছর ধরে পড়াই। একদিনও বাড়ির কাজ দেয়নি। কিন্তু সবগুলোই করেছিলো। আমাকে এতদিন দেখায়নি!
হঠাৎ কালবৈশাখের ঝড় শুরু হয়। ঝুমবৃষ্টি। বিদ্যুৎ চলে যায়। বজ্রপাত একের পর এক পড়তেই থাকে। মেঘের গুডুম গুডুম শব্দ। এগুলোর প্রতি ছোটকাল থেকেই ভালো লাগে আমার। হঠাৎ চোখ যায় কাজলিনীর মুখের দিকে। বজ্রপাতের আলোয় ওকে বেশ লাগে। হঠাৎ জোরে মেঘের ডাক শোনা যায়। ভয়ে আমাকে ধরে ফেলে।
ছাত্রীর মা আলো নিয়ে আসে। দেখার আগেই সে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমার বুক ধপধপ করছিল তখন। পা কাঁপছিল। ও পায়ের সাথে পা লাগায়। শয়তান আমাকে উষ্মতা দেয়। ওর আমাদের পাশেই বসে। আমাদের তিনজনের বৃষ্টি নিয়ে প্রথমবারের মতো গল্প শুরু হয়। হঠাৎ সে তার দুই পা দিয়ে আমার এক পা চাপ দিয়ে ধরে। আমার আমার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে। জোরে পা ছাড়াতে গেলে টেবিলের নিচে থাকা সাপকে ব্যথা দিই। আধা সেকেন্ডের মধ্যেই সাপটি আমাকে পর পর দুটো ছোঁবল মারে।
অতঃপর আমি টিউশনির যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পাই।