প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
এই বুলু, শোন।
-কী বল...
নয়নের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে তিশা বলে, জায়গাটা অনেক সুন্দর। আমরা একদিন চাঁদনী রাতে এখানে আসবো।
পাশের দুটো বান্ধবী সুখি আর মিশু কেউই শুনতে পায় না।
মৃদু হেসে ‘আচ্ছা’ বলে উত্তর দেয় সে।
নয়নকে আদর করে তিশা বুলু ডাকে।
ওরা দুইজন দুইজনে ভালোবাসে। তিন বছর বন্ধুত্বের সম্পর্কের পরে তারা রিলেশনে জড়িয়ে যায়। কিন্তু কেউই জানে না তাদের এই সম্পর্কের খবর। কেননা তারা আগের মতোই একে অপরকে তুই তুই বলেই কথা বলত। অবশ্য রিলেশনের শুরুতে নয়ন একদিন আপনি সম্মোধন করে কথা বলছিল। হঠাৎ ওদের ক্লাসমিট ইমা শুনে পেয়ে বলল, অই তুই ওরে আপনা-আপনি করে কতা বলছ ক্যান? নাকি তোরা তলে তলে সিএনজি চালাস? তখনই নয়ন কথা ঘুরিয়ে ফেলছিল। বলল, আমদের এলাকার একজন স্যার আছে। তিনি ছোট-বড় সবাইকেই আপনি করে কথা বলে। সেই গল্পই ওর সাথে করছিলাম। ওনার মতো ডায়ালক ছাড়লাম আর কী।
ইমা খুব প্যাঁচের মানুষ। সহজেই ছাড়লো না। বলল, কোন স্যার?
-মোবারক করিম স্যার।
সত্যিকার অর্থেই সরকারি কলেজের আইসিটি প্রভাষক এমন। তাই সেদিন নয়ন আর তিশা বেঁচে গিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে দুইজন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধরা খাওয়া যাবে না। তুই তুই করেই কথা বলবো।
-এই তোকে আজ সুন্দর লাগছে। বোরখার মুখোশটা খোল না। একটু প্রাণ ভরে দেখি।
-না, হবে না।
-প্লিজ।
-ওরা সন্দেহ করতে পারে। তাছাড়া আর অল্প কয়েকদিন পরেই তো আমরা বিয়ে করছি। তখন সারাদিন ভরে দেখিস।
আর আমিও দেখবো, এই বায়নাগুলো কোথায় থাকে!
-সারাদিন ধরে দেখলে রোজগার করবে কে! আমাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে কে?
-আমি অল্পতেই সন্তুষ্ট। বেশি কর্মঠ হতে হবে না। আমাকে বেশি ভালোবাসলেই হবে।
-আচ্ছা। আর কী স্বপ্ন আছে তোমার?
আমরা বেশি বেশি ভ্রমণ করবো।
আমি বিয়ের পরও লেখাপড়া করবো।
হঠাৎ মিশু বলে উঠলো, কিরে তোরা আলাদা হয়ে কী কথা বলছ?
জায়গাটা বেশ সুন্দর। নিরিবিলি। আরেকদিন সময় করে আসবো। এগুলোই বলছিলাম, কথাটা বিরামহীন ভাবে বলে গেল নয়ন।
সুখি বলল, তোর ফোনটা দে তো। আমি একটু আমার জানটার সাথে কথা বলি। নয়ন দিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পরেই ওদের দিকে এক নেতা আসছিল। ওরা ভালো করেই জানে এখানে ছেলে-মেয়েরা আসলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা ছেলে-মেয়েদের আটকে রেখে টাকা, মোবাইল, স্বর্ণের জিনিস কেড়ে নেয়। এটা স্টুডেন্টদের ক্যাম্পাস এরিয়া। তবুু ক্ষমতার প্রভাব খাটায় স্থানীরা। পুলিশরাও সামান্য টাকার বিনিময়ে এ কাজে সাহায্য করে। ওদের সাথে জোট হয়।
তাই তাড়াতাড়ি ওরা রাস্তায় উঠে পড়ে। অতঃপর দ্রুতই অটোয় উঠে। কিন্তু অপরদিকে মোটরসাইকেল নিয়ে নেতা অটোর কাছে চলে আসে। নয়নকে আটকায়। মেয়েদের চলে যেতে বলে নয়ন। ওরা তাই করে। নয়নকে ব্লাকমেইল করা হয়। ওর মোবাইল, টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবুও নয়নের দুঃখ হয় না। কারণ তার ক্ষতি হয়েছে। ওদের তো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরদিন সকালে নয়ন দেখা করতে আসলে নয়ন জানতে পারে। তিশারর ভাইয়ের কাছে কথা পৌঁছে গেছে। ওদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক হয়েছে সেটা জানতে পেরেছে। নয়নের সাথে যেনো কথা বন্ধ করে দেয়। সব দোষ নয়নের উপর চাপিয়ে দেয় তিশা। বলে, তার জন্যই এসব হয়েছে। তোকে কতবার বলেছিলাম এখানে আসতি না? না আসলে আমাদের রিলেশন টিকবে কেমনে?যোগাযোগহীন সম্পর্ক নষ্ট হয়।
-হইছে। অনেক পিরিত দেখাইছত, আর দেখাইতে হইব না। সেদিন দুইজনের অনেক কথা কাটাকাটি হয়। রাগ করে চলে আসে নয়ন।
দুইদিন পরে জিদ করেই কক্সবাজার চলে আসে নয়ন। অবশ্য তিশারর জন্য তার কাজিনের কাছে একটা দীর্ঘ চিঠি পাঠায় নয়ন। সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে সেই টাইপের চিঠি। কিন্তু সমুদ্রে এসে মুগ্ধ হয়। সাগরের উদারতা আর বিশালতা দেখে নয়নের চোখে খুলে যায়।
মত বদলায়। বিনয়ী হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। নিজেকে পরিবর্তন করবে। তিশারর কথা মতো চলবে। নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করে। তারপর চলে আসে। এসেই ওর সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু তিশা সরাসরি জানিয়ে দেয়। ওর সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না। নয়ন কারন জানতে চায়। কিন্তু ও বলে না! নয়ন বলে, তাহলে তোমার স্বপ্নগুলো? আমার কোনো স্বপ্ন নেই। তুই আমাকে মুক্তি দে।
নয়ন ‘আচ্ছা’ বলে চলে আসে। পরে জানতে পারে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তিশা ব্রেকাপ করেছে। শত চেষ্টা করেও নয়ন ব্যর্থ হয় রিলেশন টিকাতে। কয়েক বছর পরে সে জানতে পারে সে শুধু প্রেমে নয় বন্ধুত্বেও ঠকেছে।